নয়াদিল্লি: কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্র-কৃষক অচলাবস্থা এখনও কাটল না। আন্দোলনরত কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকারের সমাধানসূত্র প্রত্যাখ্যান করেছেন, জানিয়ে দিয়েছেন, তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার ছাড়া কোনও কিছুই তাঁরা মানবেন না। এই পরিস্থিতিতে আজ কৃষকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের একাদশ রাউন্ড বৈঠক। শোনা যাচ্ছে, সেখানেই কৃষক প্রতিনিধিরা সরকারকে জানিয়ে দেবেন, আইন প্রত্যাহার ছাড়া অন্য কিছু তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

কৃষকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের নয় রাউন্ড আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর দশম রাউন্ড বৈঠকের পর মনে হয়েছিল, সমাধানসূত্র বেশি দূরে নয়। এতদিন ধরে কৃষি আইন রূপায়ণে বদ্ধপরিকর কেন্দ্র সেদিন নরম সুরে প্রস্তাব দেয়, তারা এই তিন আইন এক থেকে দেড় বছর মকুব রাখতে রাজি, এই সময়ে কমিটি তৈরি করে আইনের কোন কোন দিক নিয়ে আপত্তি তা নিয়ে আলোচনা চলবে। কৃষকরা তখন জানিয়েছিলেন, এ নিয়ে তাঁরা ভাবনাচিন্তা করবেন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর তাঁরা ফের কড়া অবস্থান নিয়েছেন, দাবি করেছেন, এক-দেড় বছর মকুব রাখা নয়, তিন আইনই সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে।

কৃষক সংগঠনগুলি এ ব্যাপারে বিবৃতি দেওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমার। যদিও কয়েকজন কৃষক নেতা বলেছেন, সরকারের প্রস্তাবের ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি, শুক্রবার কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকের পর আগামী পদক্ষেপ ঠিক হবে।

ছোট ব্যবসায়ীদের সংগঠন কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স জানিয়েছে, দিল্লি-এনসিআর সীমানায় কৃষক আন্দোলনের জেরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার জন্য যে কমিটি গঠনের কথা হয়েছে, তাতে ব্যবসায়ীদেরও রাখার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। তারা জানিয়েছে, সরকারের প্রস্তাব ন্যায়সঙ্গত, সমস্যার সমাধান খোঁজার ব্যাপারে সরকারি সদিচ্ছা এতে প্রমাণিত হয়েছে।  গোটা কৃষক সম্প্রদায়ের কথা ভেবে বিক্ষোভরত কৃষকদের এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া উচিত। যদি তাঁরা তা না করেন, তাহলে বোঝা যাবে, সঙ্কট মেটানোর কোনও ইচ্ছে আদৌ তাঁদের নেই, এক শ্রেণির বিভাজনকারী সঙ্কট জিইয়ে রাখতে তাঁদের ব্যবহার করছেন।

ব্যবসায়ী সংগঠন আরও বলেছে, এই তিন কৃষি আইন শুধু কৃষকদের সঙ্গে যুক্ত নয়। দেশের প্রায় ১.২৫ কোটি ব্যবসায়ী কৃষক মান্ডিতে কাজ করেন, তাঁদের কথাও মাথায় রাখতে হবে।

আজকের একাদশ রাউন্ডের আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সরকার আরও নমনীয় হবে, না কড়া অবস্থান নেবে তার ওপর নির্ভর করছে কৃষক আন্দোলনের ভবিষ্যৎ। বিক্ষুব্ধ কৃষকরা দাবি করেছেন, ২৬ তারিখ প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন রাজধানীর রাস্তায় বিশাল ট্রাক্টর মিছিলের পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। দিল্লির সিঙ্ঘু সীমানায় ৫৯ দিন ধরে আন্দোলন করছেন পঞ্জাব হরিয়ানার কৃষকরা। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন মিছিল বার না করতে পুলিশের অনুরোধ তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন।