লখনউ: উত্তরপ্রদেশ হয়ে তবেই ঢোকা যায় দিল্লিতে। হিন্দি বলয়ের প্রধান রাজ্য যেমন, তেমনই জাতীয় রাজনীতির অন্যতম ভরকেন্দ্র। কিন্তু সেই উত্তরপ্রদেশই বিড়ম্বনা বাড়িয়ে তুলল বিজেপি-র। কারণ মঙ্গলবার ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই সেখানে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোট। বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA জোট সেখানে পিছিয়ে রয়েছে। (Uttar Pradesh Loksabha Elections Result)


উত্তরপ্রদেশে এবার ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৭৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। বাকি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল NDA জোটের অন্য শরিকরা। অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশের ৬২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল সমাজবাদী পার্টি। কংগ্রেস পার্থী দিয়েছিল ১৭টি আসনে। এদিন বেলা ১১টা বেজে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, তাতে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ৩৫টি আসনে। সবমিলিয়ে NDA জোট ৩৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদি নিজেই বেশ কয়েক বার পিছিয়ে যান গণনায়। সমাজবাদী পার্টি এগিয়ে রয়েছে ৩৪টি আসনে। কংগ্রেস আটটি আসনে এগিয়ে রয়েছে। সবমিলিয়ে I.N.D.I.A জোট এগিয়ে রয়েছে ৪২টি আসনে। (Uttar Pradesh BJP Result)


এর আগে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে ৬৪টি আসনে জয়ী হয়েছিল। বিজেপি একাই পেয়েছিল ৬২টি আসন। ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশে NDA-র প্রাপ্ত আসন ছিল ৭৩, যার মধ্যে বিজেপি একাই ৭১টি আসনে এগিয়ে ছিল। সেই নিরিখে এবারে প্রায় অর্ধেকেরও কম আসনে নেমে এসেছে বিজেপি।


আরও পড়ুন: NDA vs I.N.D.I.A Battle: 'একেবারে কাঁটে কা টক্কর', NDA-I.N.D.I.A ২৬০ আসনে এগিয়ে, একচুলও জমি ছাড়ছেন না বিরোধীরা


এখনও পর্যন্ত গণনা সম্পূর্ণ হয়নি যদিও, কিন্তু উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র ফল খারাপ হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক মুখে অযোধ্যায় রামমন্দিরের নির্মাণ করে বিজেপি নির্বাচনে ডিভিডেন্ড তুলতে চেয়েছিল। কিন্তু বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির সামনে রামমন্দির নিয়ে তেমন আবেগ দেখা যায়নি। বরং উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র অন্দরের ফাটল ক্রমশ চওড়া হয়েছে। 


এপ্রসঙ্গে একাধিক তত্ত্ব উঠে এসেছে। নরেন্দ্র মোদি এবং যোগী আদিত্যনাথের মধ্যেকার শীতল সম্পর্কের কথাও তুলে ধরেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে বিজেপি-র ব্যানার-পোস্টার চোখে পড়ে। সেই পোস্টার এবং ব্যানারে শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদিরই মুখ ছিল। দিন কয়েক পর দেখা যায়, সব পাল্টে নতুন পোস্টার এবং ব্যানার ঝোলানো হয়েছে, যাতে মোদির পাশে যোগীও রয়েছেন। যোগীর অসন্তোষের জেরেই পোস্টার এবং ব্য়ানার পাল্টানো হয় বলে বিজেপি সূত্রে খবর সামনে আসে। একাধিক অনুষ্ঠানেও যোগীকে কার্যত এড়িয়ে যেতে দেখা গিয়েছে মোদিকে। পাশে বসা অমিত শাহের সঙ্গে খোশগল্প করলেও, একটিও বাক্য বিনিময় করতে দেখা যায়নি যোগীর সঙ্গে। পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রিসভায় দিল্লির বাছাই করা একাধিক মন্ত্রীকে নিয়োগেও যোগীর আপত্তি ছিল বলে শোনা যায়। 


মোদি এবং যোগীর মধ্যে শীতল সম্পর্কের কথা সম্প্রতি তুলে ধরেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। তৃতীয় বার কেন্দ্রে মোদি ক্ষমতায় ফিরলে সবার আগে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে যোগীকে সরানো হবে দাবি করেন তিনি। এমনিতে বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দিতে এগিয়ে এলেও, কেজরিওয়ালের সেই মন্তব্য খারিজ করতে এগিয়ে আসেননি বিজেপি নেতৃত্ব। বরং কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশের 'বাহুবলী' ব্রিজভূষণ সিংহকে প্রকাশ্য সভায় যোগীর সমালোচনা করতে শোনা যায়। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবও উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে মুখ খোলেন। তাই উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র ফল খারাপ হওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপি-র অভ্য়ন্তরীণ টানাপোড়েন অনেকাংশেই দায়ী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।