নয়াদিল্লি ও কলকাতা: গতকাল শনিবার রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় পাঁচ জেলায় ৩০ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বিক্ষিপ্ত অশান্তি ও হিংসা ঘটনার মধ্যে ভোটদানের হার ছিল খুবই বেশি। গতকাল ভোটের পরই সন্তোষ প্রকাশ করেছিল বিজেপি। দলের নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন,  বাংলায় এর আগে এরকম শান্তিপূর্ণ ভোট দেখিনি। ৯০ শতাংশ বুথে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করাতে পেরেছে কমিশন। এদিন দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে একই ধরনের মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।  বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দাবি করলেন,    প্রথম দফায় ৩০টির মধ্যে ২৬টি আসনেই জিতব। বড় ব্যবধানে এই সব কেন্দ্রে বিজেপি জিতবে।’



অমিত শাহর এই দাবিকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। ‘মনস্তাত্ত্বিক খেলা আর কাজে দেবে না। গুজরাত জিমখানাতে গিয়ে আসনসংখ্যা নিয়ে স্টান্টবাজি দেখান’, ট্যুইটে কটাক্ষ তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনের। 



অমিত শাহ এদিন আরও বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ। বেশি ভোট পড়া বিজেপির পক্ষে শুভ সঙ্কেত।’ অমিত শাহ বলেছেন, ‘বাংলায় তোষণ ও অনুপ্রবেশের রাজনীতি চরমে উঠেছে।  রাজ্যে চলছে দুর্নীতির রাজনীতি। শাসক দল পাল্টেছে, বাংলার ভাগ্য একই রয়েছে। বাংলার উন্নতি সম্ভব, এই স্বপ্ন বিজেপি দেখিয়েছে।’



তিনি আরও বলেছেন, ‘বাংলায় শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে সফল নির্বাচন কমিশন। এজন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দেব। বোমা-গুলি মৃত্যু ছাড়া হয়েছে প্রথম নির্বাচন।’
বিজেপি নেতা বলেছেন, ‘প্রথম পর্বের ভোটে সাফল্য দলকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ আসন পার করার লক্ষ্য পূরণ করবে।’



 রাজ্যের শাসক দলকে কটাক্ষ করে অমিত শাহ বলেছেন, ‘বুথে কোনও গোলমাল হয়নি, এতেই তৃণমূলের সমস্যা হয়েছে।’



দ্বিতীয় দফায় যে কেন্দ্রগুলিতে নির্বাচন হবে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে নজরকাড়া কেন্দ্র পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম। এই আসনে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর। ভোটের আগে দল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে গিয়ে প্রাক্তন দলনেত্রীর বিরুদ্ধে তাল ঠুকছেন শুভেন্দু।  অমিত শাহ এদিন বলেছেন, ‘নন্দীগ্রামে পরিবর্তন করুন, বাংলায় আপনা-আপনি হবে। মা-মাটি-মানুষের সব দাবি অসার। রাজ্যে পরিবর্তন এবার অবশ্যম্ভাবী।’



গতকাল পূর্ব মেদিনীপুরের এক বিজেপি নেতাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনের একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করেছিল বিজেপি। ওই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। এই অডিও টেপে ফোন করে ওই নেতাকে ভোটে সাহায্যের অনুরোধ জানাতে শোনা গিয়েছিল। এই ঘটনাকে কটাক্ষ করে শাহ বলেছেন, ‘ফোন করে আর কিছু হবে না। পায়ের তলার জমি সরে গিয়েছে তৃণমূল সরকারের’। 



তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টার অভিযোগ এনেছে। বিজেপি অডিও ক্লিপ প্রকাশের পর পাল্টা একটি অডিও টেপ প্রকাশ করে বিজেপির বিরুদ্ধে কমিশনের ওপর চাপ তৈরির অভিযোগ করেছে তৃণমূল। ওই অডিও টেপেরও সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। অডিও ক্লিপ প্রকাশ করে তৃণমূলের দাবি, টেলিফোনে এই কথপোকথন হচ্ছে বিজেপি নেতা মুকুল রায় এবং আরেক বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়ার মধ্যে। যেখানে মুকুল কার্যত স্বীকার করছেন, রাজ্যে সব বুথে এজেন্ট বসানোর লোক তাঁদের নেই।তৃণমূলের দাবি, বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই, নির্বাচন কমিশন এরপর বুথ এজেন্ট নিয়ে নিয়ম পাল্টে ফেলে।


উল্লেখ্য, এতদিন নিয়ম ছিল, যে কোনও রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্ট হতে গেলে ওই বুথ এলাকা কিংবা পাশের বুথের বাসিন্দা হতে হয়। তবে এবার সেই নিয়মে পাল্টে নির্বাচন কমিশন করে, এবার থেকে পোলিং এজেন্ট হতে গেলে কোনও নির্দিষ্ট বুথের নয়, ওই বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা হলেই হবে।



অমিত শাহ এ ব্যাপারে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের উপর কোনও চাপ তৈরি করেনি বিজেপি। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘২ বিজেপি নেতার ফোন কে ট্যাপ করল? যা কথা ফোনে হয়েছে, তা লিখিত আকারে কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। কেমন গণতন্ত্র চলছে রাজ্যে?’