কলকাতা: বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি ঘটল বাম-কংগ্রেসের। সংযুক্ত মোর্চার তরফে জিতলেন শুধু আইএসএফের একজন প্রার্থী। জয়ের মুখ দেখতে পারলেন না সিপিএমের নতুন প্রার্থীদের কেউই। 


এরপরই দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে তুলোধনা করলেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। বললেন, মানুষের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে। হারের দায় নিতেই হবে নেতৃত্বকে। একইসঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট করা মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। 


এবিপি আনন্দর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদ একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটান। কার্যত দলের এই বিপর্যয়ের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করান দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে।


তন্ময়ের মতে, ১৯৪৬ সালের পর এই প্রথম বামশূন্য বিধানসভা গঠিত হচ্ছে রাজ্যে। কংগ্রেস-শূন্য বিধানসভা গঠিত হচ্ছে। গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় সম্ভবত ২ শতাংশ কম ভোট বামেরা পেয়েছে। 


তিনি বলেন, যাঁরা ওপর থেকে নির্দেশ দেন, তাঁদের উচিত এই বিপর্যয়ের দায়িত্ব নেওয়ার। এত বড় বিপর্যয়ের দায়িত্ব কেউ নেবেন না, এমনটা হওয়া উচিত নয়। এর দায় নেওয়া প্রয়োজন। 


দলের একাংশের ওপর বিষোদগারও করেন তন্ময়। বলেন, 'একদল বামপন্থী, আমাদের  দলের নেতা মনে করেন, ফেসবুকে পোস্ট করেন,  কর্মসূচিতে সংসদীয় গণতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও তাঁরা অহঙ্কার করে বক্তৃতা দেন, যে তাঁরা ভোটের রাজনীতি করেন না। তাঁরা রাস্তায় থাকেন।' 


তন্ময়ের মতে, দলের সেই নেতাদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে। প্রবীণ নেতা বলেন, 'তাঁরা রাস্তায় থাকুন। যাঁরা ভোটের রাজনীতি করে, তাঁরা ভোট পেয়েছে। ঠিকই আছে। মানুষ তাঁদেরই বেছে নিয়েছে।' 


তিনি যোগ করেন, আমি আমার নেতাদের বলব, রাস্তায় থাকা তো আপনাদের গর্ব। আপনি যাতে সেখানে নিশ্চিন্তে থাকেন, সেই জন্য মানুষ আপনার হাতে একটা ফুটো বাটি ধরিয়ে দিয়েছে। এবার তাঁরা ঠিক করুক, বাটি হাতে ঘুরবেন না ভোটের রাজনীতি করবেন। 


তন্ময় জানান, খুল্লমখুল্লা তাঁর এই সমালোচনা হয়ত তাঁর দলের অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে। বলেন, আমার মুখে এই কথা শুনে আমার দলের অনেক শৃঙ্খলাবদ্ধ নেতা ও সৈনিক বলবেন, পার্টিকর্মী হিসেবে এগুনি ভিতরে আলোচনা করতে হয়, প্রকাশ্যে নয়।  কিন্তু, গোটা সিস্টেমটাই যেখানে উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে, সেখানে কীসের ভিতর আর কীসের বাইরে !!


এই বিপর্যয়ের জন্য দলের কোনও অজুহাত থাকতে পারে না বলেও মনে করেন তন্ময়। বলেন, কোনওভাবেই কোনও অজুহাত যেন আমাদের নেতারা সৃষ্টি না করেন। নীতিগতভাবে এই নির্বাচনে বাংলার সাধারণ মানুষ বিপুলভাবে বামপন্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। কোনও বামপ্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করে নিজেদের খিল্লি করাটা যুক্তিহীন হবে। তাঁরা নিজেদের মতো চেষ্টা করেছে। বাকিটা জনতা যা করেছে, তাই মানতে হবে। বামপন্থীদের বিরোধী দলের মর্যাদাটুকুও কেড়ে নিয়েছে রাজ্যের মানুষ। 


তন্ময় স্বীকার করেন, বামফ্রন্টকে মানুষ সার্বিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষ বামপন্থীদের ন্যূনতম যোগ্য বলে মনে করেনি। সংগঠন হোক বা জোট-- সবকিছু নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ব্রিগেডে আসা মানুষ ও তাঁদের পরিবার বামেদের ভোট দিয়েছেন কি না, তারও বুথভিত্তিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। 


তিনি যোগ করেন, আমরা মানুষকে বোঝাতে পারিনি, এসব কথার কোনও মূল্য নেই। দলের নেতাদের মধ্যে মানুষকে বুঝতে পারার শক্তি আদৌ অবশিষ্ট আছে কি না এটা নিয়েই প্রথম ভাবনা শুরু হওয়া দরকার। আমার মতে, নেই।


পাশাপাশি, আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট করাটাও যে মানুষ ভালভাবে নেয়নি, তাও মনে করিয়ে দেন তন্ময়। বললেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট আগেও হয়েছিল। পজিটিভ রেজাল্ট এসেছিল। কিন্তু, আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট করার জন্য পলিটব্যুরোর এক-দুজন নেতা অধিকমাত্রায় আগ্রহী ছিলেন। ব্রিগেডের সমাবেশে অধীর চৌধুরীকে থামিয়ে, আব্বাস সিদ্দিকিকে দিয়ে থামতে বলানো, এই যে প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল, এটা জনগণকে এবং জাতীয় কংগ্রেসের মতো একটা দলকে অসম্মান করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়। সেই অসম্মান কংগ্রেস হোক বা জনগণ, কেউ-ই ভালোভাবে মেনে নেবে না, এটাই স্বাভাবিক।