কলকাতা: মাত্র একদফায় লোকসভা নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছিল তৃণমূল। কিন্তু বিরোধীরা কমপক্ষে সাত দফায় নির্বাচন চাইছিলেন। সেই দাবিই কার্যত স্বীকৃতি পেল নির্বাচন কমিশনের কাছে। পশ্চিমবঙ্গে সাত দফায় লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণা করল তারা। আসনসংখ্যা এবং ভোটারের সংখ্যার কথা মাথায় রেখেই বাংলায় সাত দফায় নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সপ্তম দফায় দেশের তিনটি রাজ্যে লোকসভা নির্বাচন রয়েছে, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং বাংলায়।


শনিবার দুপুরে দিল্লির বিজ্ঞানভবনে নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। গোটা দেশের পাশাপাশি, বাংলায় সাত দফায় ভোটগ্রহণৃের ঘোষণা করা হয়। বাংলার নির্বাচনী ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে হিংসা, রক্তপাত। সন্দেশখালির ক্ষত এখনও দগদগে। তাই বাংলায় কত দফায় নির্বাচন হয়, সেদিকে নজর ছিল সকলেরই। যদিও মুখ্য নির্বাচমন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, রাজ্যের আয়তন, আসনসংখ্যা এবং ভোটারের সংখ্যার কথা মাথায় রেখেই বাংলায় সাত দফায় নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। (WB Lok Sabha Election 2024 Date)


কমিশন জানিয়েছে, লোকসভা নির্বাচন শুরু ১৯ এপ্রিল। ৪ জুন লোকসভা ভোটের গণনা। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় লোকসভা নির্বাচন। ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা, ৭ মে তৃতীয় দফা, ১৩ মে চতুর্থ দফা, ২০ মে পঞ্চম দফা, ২৫ মে ষষ্ঠ দফা এবং ১ জুন সপ্তম দফায় লোকসভা নির্বাচন। আবার  লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই দেশজুড়ে ২৬টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন। লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফায় বাংলার ভগবানগোলায় এবং সপ্তম দফায় বরানগরে উপনির্বাচন।  শনিবার থেকেই দেশ জুড়ে চালু হয়ে গেল নির্বাচনী আদর্শ আচরণ বিধি।


আরও পড়ুন: Lok Sabha Election 2024 Date Live: সাত দফায় দেশের ৫৪৩ আসনে লোকসভা নির্বাচন, ভোটগণনা ৪ জুন


 বাংলার মোট  ৪২টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ রয়েছে। এর আগে, বিধানসভা নির্বাচন থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বার বার হিংসার ঘটনা ঘটে।  লোকসভা নির্বাচনের আগেও সেই নিয়ে যেমন আশঙ্কা ছিল, তেমনই শাসক এবং বিরোধী দলের মধ্যে চরম সংঘাতও চরমে ওঠায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বাংলার জন্য ইতিমধ্যেই ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে কমিশন। (Bengal Lok Sabha Election 2024 Schedule)


রাজ্যের শাসকদল, তৃণমূল যদিও একদফায় ভোটগ্রহণের পক্ষে ছিল। কুণাল ঘোষ বলেন, "একদফায় পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনে ভোট চাইছে তৃণমূল। কারণ এরাজ্যে অবাধ, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত রয়েছে। ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতিতে আট দফায় ভোট করায় নির্বাচন কমিশন। সেবার তৃণমূলই জয়ী হয়। কারণ ক'দফায় ভোট হচ্ছে, কিছু যায় আসে না। মানুষের সঙ্গে কতটা সংযোগ, তা গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিরোধীদের দাবি মেনে একা দফায় ভোট, এতদিন ধরে স্কুল-কলেজ আটকে রেখে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে রাখার পরিবর্তে বাংলায় একদফায় ভোটের দাবি জানাচ্ছি।"


কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার যদিও বাংলায় কমপক্ষে সাত দফায় ভোট চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে হিংসা এবং সন্ত্রাসের রাজনীতি হয়, বুথ লুঠ হয়, তাই সঠিক ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য দফায় নির্বাচন প্রয়োজন বাংলায়। এমন কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে এবার যে ট্যাঁ ফোঁ করতে পারবে না।"


পাশাপাশি, ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট নিয়ে কমিশনকে বার্তা দেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। তাঁর কথায়, "ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের ব্যবহার এমন হওয়া উচিত যাতে, মানুষের মনে কোনও আশঙ্কা না থাকে। ইভিএম নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক রয়েছে এমনিতেই। তাই বিরোধীদের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন, নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচন সম্পন্ন করা হোক।"