কৌশিক গাঁতাইত, পশ্চিম বর্ধমান: বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। তাঁর নিশানায় ওই কেন্দ্রেরই তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ।
রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সায়নীকে আক্রমণ করেন অগ্নিমিত্রা। বলেন, ‘‘স্বাভাবিকভাবে, উনি তো রাজনীতি জানেন না। কারণ, এত দিন উনি সিনেমা করে এসেছেন। এর পর ২ মে ফলাফল বেরনোর পর হয়ত কন্ডোমের দোকান খুলবেন বা অন্য কোনও পেশায় যাবেন বা সিনেমাটাই করবেন। উনি জানেন না আসানসোলের সাংসদ, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, অন্যান্য সাংসদ, বিধায়ক যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি করোনা পর্বে ত্রাণ দিতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়েছিল। আমি একজন সাধারণ কর্মকর্তা হয়ে ল'কলেজ বানাব? আমি তৃণমূলের প্রার্থীকে বলতে চাই, আপনি কোন স্বর্গে বাস করেন? আপনি জানেন না কোন দলের হয়ে প্রচার করছেন বা কোন দলের প্রার্থী হয়েছেন? অবশ্য় না জানাটাই স্বাভাবিক। কারণ ২ বছর আগে এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই তুলোধনা করেছিলেন নন্দনের চত্বরে দাঁড়িয়ে। এখন টিকিট পেয়ে গুণগান করছেন। এখন মমতা আপনার গুরুমা হয়ে গিয়েছে। ’’
এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিয়ে রুচিতে বাধে। পাল্টা সায়নী ঘোষের। তিনি বলেন,"আসলে আমি ওঁর লেভেলে নামতে পারব না। উনি যে কথাগুলি বলছেন, তার মধ্যে দিয়ে ওঁর পরিচয়, ওঁর বংশ পরিচয়, উনি কী ভাবে বড় হয়েছেন, তা প্রকাশ পাচ্ছে। উনি তো আমাকে ‘বাচ্চা’, ‘বাচ্চা’ বলতেন। উনি আমার থেকে এত বড় হয়ে উনি নিজের 'পেটি পলিটিক্স' যেটাকে আমি বলি, আমি ওঁকে অনেক সফিস্টিকেটেড ভাবতাম। কিন্তু, যতদিন যাচ্ছে, আমি দেখতে পাচ্ছি, উনি ভীষণ নিম্নরুচি ও নিম্নমানের রাজনীতিবিদ। কাজেই ওঁকে নিয়ে কথা বলে আমি নিজের স্ট্যান্ডার্ড নিচে নামাতে পারব না।"
সায়নীকে কুরুচিকর আক্রমণ এই প্রথম নয়। এর আগে, অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তিনি কড়া ভাষায় সমালোচনা করে বলেন, 'এই ধরনের কথা যাঁরা বলেন, তাঁরাই আসল যৌন কর্মী।'
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি সাংসদকে পাল্টা জবাব দিয়েছেন সায়নী ঘোষ। তিনি লিখেছেন, 'রাগে, শোকে আপনার ভারসাম্য হারানোটা খুবই স্বাভাবিক। আমি সব পেশাকেই সম্মান করি। ফলত, আপনি আমাকে বিশেষ ছোট করতে পারলেন না। তবে আপনি নিজে অনেকটা ছোট হলেন। মহিলাদের সম্মান করা আপনাদের রক্তে নেই। এমনকী আপনার পরিবারের প্রাক্তন একজন কয়েক দিন আগেই এই অভিযোগ করেছিলেন। আর আপনি এই কথাগুলো বলে সেটা আরো পরিস্কার করে দিচ্ছেন। যা বাংলার মা-বোনেদের জন্য যথেষ্ট চিন্তার কারণ। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। আর যাঁরা আপনাকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন তাঁদের পাশে একটু দাঁড়ান ও দায়িত্ববান হোন।' সায়নীর পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও।
তারও কিছুদিন আগে, ২০১৫ সালে একটি ছবি পোস্টের অভিযোগে, অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। তথাগতর অভিযোগ, ওই বিতর্কিত ছবি তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছে। তথাগত ট্যুইটে সায়নীর উদ্দেশে জানান, কলকাতা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অসমের এক বাসিন্দাও তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগার কারণে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে চলেছেন।
অভিনেত্রী পাল্টা দাবি করেন, ওই ট্যুইট ২০১৫ সালের। ট্যুইটটি যে আপলোড করা হয়েছে, তা তাঁর জানা ছিল না। ঘটনাটি নজরে আসার পরেই তিনি ট্যুইটটি মুছে দিয়েছেন বলে সায়নীর দাবি। সেইসঙ্গে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, কারও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার ইচ্ছা তাঁর নেই।