উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, পূর্ব মেদিনীপুর: নন্দীগ্রামে দুই মহারথীর মহা সংঘাত। তার মাঝে তিনি নিতান্তই নিমিত্ত মাত্র। শুরু থেকে এমনটাই মনে করে আসছেন ভোট পর্যবেক্ষকরা। 


তবু মমতা বনাম শুভেন্দু নক্ষত্রযুদ্ধের মধ্যেও অকম্পিত দীপশিখার মতো জ্বলে উঠলেন নন্দীগ্রামের সংযুক্ত মোর্চার বাম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। 


বাকি দুই প্রার্থীর তুলনায় মীনাক্ষীর পাশে লোকবল নগণ্য। ভোটযুদ্ধের ময়দানে সীমাবদ্ধতা নিয়েই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধে, সারা দিন চড়কিপাক দিলেন তিনি। যেখানেই বেনিয়ম মনে হয়েছে তাঁর, সেখানেই সরব হয়েছেন। 


এদিন সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে নন্দীগ্রাম পার্টি অফিসে পৌঁছে যান মীনাক্ষী। সকাল সাতটায় সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন। ঘুরে দেখেন প্রায় ৭৬টি বুথ।  বলেন, আসল দরকার নন্দীগ্রামের মানুষের নিরাপত্তা, মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে।


কোনও বুথে ঢুকে হয়তো তাঁর মনে হয়েছে, ভোটিং মেশিন ঠিক জায়গায় রাখা নেই। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেবিষয়ে সরব হন মীনাক্ষী। শেষ পর্যন্ত বিষয়টার নিষ্পত্তি করে বেরোলেন। 


কোথাও দেখা গিয়েছে বুথের একশো মিটারের মধ্যে প্রচুর মানুষের ভিড়। সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নালিশ করেছেন। যতক্ষণ ভিড় না সরেছে, ততক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন তিনি।  


১০ মার্চ নন্দীগ্রামের প্রার্থীতালিকা ঘোষিত হয়। ১১ তারিখ সকালে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে পৌঁছে যান সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী। সম্বল বলতে ছিল নগদ ১৩০০ টাকা। তারপর থেকে আর বর্ধমানের বাড়িতে ফেরেননি। 


রানি রঙের কুর্তা আর সাদা সালোয়ারই হয়ে গিয়েছিল তাঁর ট্রেডমার্ক পোশাক। কখনও হেঁটে তো কখনও টোটোয় চড়ে প্রচার। নন্দীগ্রামের বাম প্রার্থীর বক্তৃতা জুড়ে থাকত সাধারণ মানুষের জীবনযন্ত্রণা আর কর্মসংস্থানের কথা। 


মীনাক্ষী যদি জেতেন এবারের ভোটে সেটা হবে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় অঘটন। কিন্তু এই একমাসে নন্দীগ্রামের সত্যিকারের ঘরের মেয়ে হয়ে উঠতে পেরেছেন তিনি। তিনি এখন নন্দীগ্রামের কাজলা দিদি। 


বাম সাম্রাজ্য পতনের গর্ভগৃহে সিপিএমের তরুণ প্রার্থী কি জায়ান্ট কিলার হতে পারবেন? নাকি দাদা-দিদির লড়াইয়ে অনুঘটক হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে তাঁকে? উত্তর মিলবে ২ মে।