নন্দীগ্রাম: বয়ালের বুথ থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে একসুরে তীব্র আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। ঘুরিয়ে জানিয়ে দিলেন, কমিশন যতই চেষ্টা করুক না কেন, বিজেপি নির্বাচন জিততে পারবে না। 


এদিন নন্দীগ্রামে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ ও ভোট লুঠের অভিযোগ নিয়ে কমিশনকে একহাত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলনেত্রী বলেন, আপনারা (কমিশন) সকলকে বলেন, এগিয়ে এসে ভোট দিতে। আপনারা কী মনে করেন? এই পরিস্থিতি হলে মানুষ কীভাবে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ মনে করবে? কমিশনকে আমার বিনম্র আবেদন, দয়া করে নজর দিন। নন্দীগ্রামে আপনারা যা করেছেন, অন্যত্র এধরনের আচরণ করবেন না। আপনারা যতই চেষ্টা করুন না কেন, বিজেপি নির্বাচন জিততে পারবে না। এমনকী, নন্দীগ্রামে ৯০ শতাংশ ভোট তৃণমূল কংগ্রেস পাবে। এমনকী, অন্য জায়গাগুলিতেও একই ফলাফল হবে। 


এখানেই থেমে থাকেননি মমতা। তিনি আরও বলেন, আর প্রতিবার ভোটের দিন নরেন্দ্র মোদি রাজ্যে এসে প্রচার চালাবেন। কেন ভোটের দিন প্রচার চালাতে দেওয়া হবে? যেখানে আমাদের ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনী এলাকায় প্রচার করতে দেওয়া হয় না, তাহলে কী করে দেশের প্রধানমন্ত্রী সব পরিষেবা নিয়ে ভোটের দিন প্রচার করতে চলে আসবেন রাজ্যে। এতে কি নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হচ্ছে না? ওদের যা ইচ্ছে হচ্ছে, তাই করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, একদিন ওদের জবাব দিতেই হবে। মানুষ তাদের সমুচিত জবাব দেবে। 


 



 


এদিন রাজ্য ছিল দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। সকলের নজর ছিল নন্দীগ্রামে। যেখানে প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের বয়ালে তৃণমূলের পোলিং এজেন্টকে বুথে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে।


সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে  এরপরই নন্দীগ্রামের বয়ালে বুথ পরিদর্শনে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পৌঁছনো মাত্র তাঁকে ঘিরে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে শুরু করেন বিজেপি কর্মীরা। 


তৃণমূল নেত্রী বয়ালে যেতেই উত্তেজনা শুরু হয়। বয়ালে তৃণমূলনেত্রীকে ঘিরে জয় শ্রীরাম স্লোগান ওঠে। বুথের ভিতর তখন মমতা, বাইরে তুমুল সংঘর্ষ। নন্দীগ্রামে মুখোমুখি তৃণমূল-বিজেপি সমর্থকরা। পরিস্থিতি সামলাতে নামানো হয় র‍্যাফ। 


যে স্কুলে বুথ, তাঁর বারান্দায় তখন হুইলচেয়ারে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিক্ষোভরত তৃণমূল ও বিজেপির কর্মীদের সামলাতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। 


এরপর তৃণমূল নেত্রীর সামনেই তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরস্পরকে লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টি। বাঁশ হাতে বেরিয়ে আসেন অনেকেই।


একদিকে দলীয় পোল এজেন্টকে হুমকি দিয়ে বুথ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল তোলে বিজেপির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, মমতার বিরুদ্ধে বিজেপি সমর্থকদের প্রশ্ন, কেন এতক্ষণ প্রার্থী এখানে? তৃণমূলনেত্রী অবশ্য জানিয়ে দেন, পরিস্থিতি যে এমন, সেটা দেখাতেই বসে রয়েছেন তিনি।


 



 


মমতার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই বহিরাগতদের দিয়ে অশান্তি বাধানো হচ্ছে। বলেন, ইলেকশন কমিশন চালাচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ দিচ্ছে। ইলেকশন কমিশন চুপ করে রয়েছে। 


প্রায় ২ ঘণ্টা বয়ালের বুথে আটকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুথে বসেই পরিস্থিতির কথা জানিয়ে রাজ্যপালকে ফোন করেন মমতা। বুথে বসেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে ফোন করে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের দাবি জানান। 


কিছুক্ষণ পর, জগদীপ ধনকড় ট্যুইটে লেখেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে যে বিষয়টি তুলেছিলেন, তা নির্দিষ্ট জায়গায় জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে আইনের শাসন বজায় রাখার পূর্ণ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত, প্রত্যেকে আন্তরিকভাবে বিধি মেনে চলবেন, যাতে গণতন্ত্র অক্ষুণ্ণ থাকে।


তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে কথা কমিশনের আধিকারিকদেরও। এরপরই, নন্দীগ্রামের পরিস্থিতি জানতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে ফোন করেন উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। 


বয়ালের বুথ থেকেই ফোনে রাজ্যপালের কাছে ভোটলুঠের অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দিল্লি থেকে হস্তক্ষেপ করে নির্বাচন কমিশন।


এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে আসেন নন্দীগ্রাম থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার ও কমিশনের পর্যবেক্ষক। ঘটনাস্থলে নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীর নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী। 


বাহিনীর ঘেরাটোপে প্রায় ২ ঘণ্টা পর বয়াল ছাড়েন মমতা। বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে কোনওক্রমে বয়ালের স্কুল থেকে বের করে আনা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।


বয়ালের স্কুল থেকে বেরিয়ে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের পার্টি অফিসে পৌঁছে বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই বয়ালে পৌঁছন শুভেন্দু অধিকারী।