আশাবুল হোসেন ও দীপক ঘোষ: মাস্টারমশাই, বাড়িতে থেকে সম্মান বাঁচান। বেচাকে জেতানোর জন্য আশীর্বাদ করুন। সিঙ্গুরে সভায় প্রাক্তন সহযোদ্ধা ও বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যর উদ্দেশ্যে এই আবেদন জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জিততে পারবেন না, বুঝে গেছেন। তাই সিঙ্গুরে সুর নরম। পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি।


জমি আন্দোলনের দুই ভিত্তিভূমি। এক জায়গায় তিনি নিজেই প্রার্থী। অন্য জায়গায় বুধবার ভোটপ্রচারে হাজির হলেন তিনি ৷ কিন্তু, নন্দীগ্রামে তৃণমূলত্যাগী বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে তিনি যেমন আক্রমণাত্মক, ঠিক উল্টো ছবি ধরা পড়ল সিঙ্গুরের তৃণমূলত্যাগী বিজেপির প্রার্থীর ক্ষেত্রে।


বর্ষীয়ান রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সম্পর্কে কোনও বিরুপ মন্তব্য করলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্টে তাঁর কাছে আবেদন জানালেন, তৃণমূল প্রার্থীকে আশীর্বাদ করার জন্য। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সিঙ্গুরের সভায় বলেন, ‘মাস্টারমশাই আপনি বাড়িতে থেকে সম্মান বাঁচান। আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, দীর্ঘজীবন কামনা করছি। কিন্তু এবারের নির্বাচনটাও আপনি বেচাকে (বেচারাম মান্না) জেতানোর জন্য আশীর্বাদ করুন। বেচা অনেকদিন আপনার সঙ্গে কাজ করেছে।'


 



 


অন্যদিকে সিঙ্গুরের বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি বেচাকে আশীর্বাদ করতে পারব না, ওর যা সম্পত্তি আছে তা চুরি ছাড়া সম্ভব না। সিঙ্গুরে রাস্তাঘাট হয়েছে, কিন্তু বেচাকে কেন্দ্র করে যা চুরি হয়েছে, সিন্ডিকেট হয়েছে তাতে মনে হয় চোরেদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে।’’


সিঙ্গুরের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে এবার প্রার্থী করেছে বিজেপি...উল্টোদিকে পাশের বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বেচারাম মান্নাকে এনে সিঙ্গুরে প্রার্থী করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের সময় বেচারাম কার্যত রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের শিষ্য ছিলেন! কিন্তু, পরবর্তীকালে দু’জনের সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয় ৷ নন্দীগ্রামে যেমন জমি আন্দোলনের দুই কাণ্ডারী এবারের ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি..সিঙ্গুরেও তারই পুনরাবৃত্তি। যা নিয়ে কটাক্ষের সুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘একটাও তো নিজেদের প্রার্থী নেই, সব তো ধার করা। সব তো ধার করা। ওই আমাদের মাস্টারমশাই ছিলেন। বেচারা ৯২ বছর বয়সে  কোথায় পা টিপে দেবে, মাথা টিপে দেবে, তেল মালিশ করে দেবে, একটু সেদ্ধ মাছ রান্না করে দেবে। তা নয়, তাঁকে এই গরমের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কষ্ট হচ্ছে না লোকটার!’’



সিঙ্গুর যে লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সেই হুগলি এখন বিজেপির দখলে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফল অনুযায়ী সিঙ্গুরে এগিয়ে ছিল বিজেপি। আর হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কেই এবার চুঁচুড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির ৷ সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে যা নিয়েও কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূলের প্রাক্তনীর লড়াইয়ের মধ্যেই, বামেদের বাজি, তরুণ মুখ, এসএফআই এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য ৷