সন্দীপ সরকার, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও রুমা পাল: নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর পর এবার মমতার নিশানায় রাজ্য পুলিশ। এদিন ক্যানিংয়ের সভা থেকে তৃণমূলনেত্রী বলেন,  "রেড করতে বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন সিআরপিএফকে, নিজেরা বসে কেন? আমি আপনাদের বিপদে আপনাদের পাশে দাঁড়াই, দেখুন আমি কীভাবে লড়াই করছি, তোমাদের বাংলা-তেই কাজ করতে হবে, ভুলে যাবেন না।"


মমতার প্রশ্ন, এবার রাজ্য পুলিশের ভূমিকায় নিয়ে সরব হলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর প্রশ্ন, "আমাদের পুলিশ এত দুর্বল কেন, ভয় পায় কেন? মনে রাখবেন রাজ্যে কাজ করেন, সেন্ট্রালের হয়ে নয়।"


রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি এদিন ফের কেন্দ্রীয় বাহিনীরও কড়া সমালোচনা করেন তৃণমূল নেত্রী। বলেন, "কোটি কোটি টাকার ডিস্ট্রিবিউশন হচ্ছে, কোনও নাকা চেকিং নেই, সেন্ট্রাল পুলিশ ২দিন আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেছে টিএমসিকে ভোট দেবেন না, নন্দীগ্রামে এদের ভয়াবহ রূপ দেখেছি।"


এবিষয়ে মমতার দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী যখন অপারেশন চালাচ্ছে, যাতে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত না থাকেন, তার চেষ্টা চলছে, তখন পুলিশ বুঝতে পারছে যে ভোটটা শান্তিপূর্ণ হচ্ছে এবং সরকার থাকবে না, পুলিশ শাপমোচনের চেষ্টা করছে কোনও কোনও জায়গায়, শেষবেলায় আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করছেন।


তৃণমূল নেত্রী যখন কমিশন-কেন্দ্রীয় বাহিনী ইস্যুতে সুর চড়াচ্ছেন, তা নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন মোদি বলেন, ছাপ্পা ভোটের সুযোগ মিলছে না নির্বাচন কমিশনকে গালি দিচ্ছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দিদি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনকে গালি দিচ্ছে তাহলে বুঝবেন ওনার খেলা শেষ হয়েছে, ১০ বছর আগে এই বাহিনী আপনার কাছে ভাল ছিল।


বৃহস্পতিবার রাতে অসমের করিমগঞ্জে বিজেপি প্রার্থীর গাড়িতে ইভিএম উদ্ধারের ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে। সেই উদাহরণ টেনে, বঙ্গ ভোটেও ইভিএমে কারচুপি-র আশঙ্কা করছে তৃণমূল। 


প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিন্হা বলেন, যেখানে যেখানে বিজেপি ইলেকশন হারছে, সেখানে সেখানে ইভিএম বদলে ফেলছে, এটা অসমের পর বাংলাতেও হবে, ইলেকশন কমিশনকে বলব, বিষয়টি যেন গুরুত্ব দিয়ে দেখে। মোদি-শাহ মিটিং করেছেন। ভাল ভোট পাচ্ছে না, তাই মিথ্যে প্রচারে নেমেছে।


এনিয়েও পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন মোদি। বলেছেন, ক্রিকেট মাঠে কোনও খেলোয়াড় বারবার আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাহলে বুঝবেন সমস্যা আছে।


নন্দীগ্রামে ভোটের দিন বয়াল মক্তব প্রাইমারি স্কুলের বুথে ছাপ্পার অভিযোগ তোলেন মমতা। উপ-নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনকে নিজের হাতে লেখা অভিযোগপত্রে তিনি জানান, বেশ কিছু বুথে ভোটারকার্ড ছাড়া অন্য পরিচয়পত্র নিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভোটারদের বাধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। 


কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের কাজ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেখা। তাঁরা বুথের ভিতরে থাকতে পারেন না। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন জানায়, বুথের মধ্যে ভোটার কার্ড পরীক্ষা করতে পারবেন না কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। তা নিয়েই কমিশন প্রসঙ্গে খড়গহস্ত মমতার মুখেই প্রশস্তির সুর। বললেন, আজ প্রথম ইলেকশন কমিশনকে থ্যাঙ্কস বলব, বুথের মধ্যে থাকতে পারবে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। 


৬ এপ্রিল তৃতীয় দফার ভোট। তার আগে নেতাদের বাগযুদ্ধের উত্তাপ যেন হার মানাচ্ছে চৈত্রের গরমকে।