দীপক ঘোষ, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ায় জয়পুরে নির্দল প্রার্থীকে তৃণমূলের সমর্থন। নির্দল প্রার্থী দিব্যজ্যোতি সিংহদেওকে সমর্থন তৃণমূলের।পুরুলিয়ার সভা থেকে ঘোষণা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।স্ক্রুটিনিতে ত্রুটি থাকায় তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল কুমারের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উজ্জ্বল কুমারের বদলে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন দিল তৃণমূল।


অভিষেক  বলেছেন, ‘‘জয়পুরে যেখানে আমরা মনোনয়ন দিতে পারিনি, সেখানে প্রয়োজনে নির্দলকে জয়ী করুন। আটটা তে আমরা জিতব, সংযুক্ত মোর্চা, বিজেপিকে ভোট দেবেন না ৷’’


জয়পুরে প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল নিয়ে   বিধানসভা ভোটের মুখে হাইকোর্টে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। ভোটে অংশ নিতে পারবেন না পুরুলিয়ার জয়পুরের তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল কুমার। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ খারিজ করে জানিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে  সিলমোহর পড়ল নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে।


এই পরিস্থিতিতে মনোনয়ন বাতিল হওয়া তৃণমূল প্রার্থী  সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু  শেষপর্যন্ত এই কেন্দ্রে শেষপর্যন্ত নির্দল প্রার্থীকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল।


২৭ মার্চ প্রথম দফাতেই ভোট হবে পুরুলিয়ার জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্রে। এই আসনে আড়ষা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি উজ্জ্বল কুমারকে টিকিট দেয় তৃণমূল।


গত সপ্তাহের মঙ্গলবার নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেন উজ্জ্বল। স্ক্রুটিনিতে ত্রুটি ধরা পড়ায় তা সংশোধন করতে বলা হয়।  সংশোধনের পর বুধবার ফের তা জমা দেন তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু, দ্বিতীয় বারেও ত্রুটি ধরা পড়ে। এরপরই তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।


কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা করেন উজ্জ্বল কুমার। গত  বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে সেই মামলার শুনানি হয়। তখন বিচারপতি নির্দেশ দেন, পুরনো মননয়নপত্রের ভিত্তিতেই তৃণমূল প্রার্থীকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিতে হবে।


সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় নির্বাচন কমিশন। গত শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেই শুনানি হয়।


সেখানে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী দাবি করেন, ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত। সেখানে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ভোট মিটে যাওয়ার পর ইলেকশন পিটিশনের মাধ্যমে অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে হবে।


পাল্টা তৃণমূল প্রার্থীর আইনজীবী কপিল সিব্বল অন্য যুক্তি খাড়া করেন। তিনি বলেন, আমরা কোনওভাবেই ভোট প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছি না। তৃণমূল প্রার্থী শুধুমাত্র ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছেন, কারণ খুব সামান্য ত্রুটির কারণে প্রার্থীপদ খারিজ করা হয়েছে।


দুপক্ষের বাদানুবাদের শেষে, প্রধান বিচারপতির নির্দেশ দেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সেই সঙ্গে খারিজ করা হল সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে।তাৎপর্যপূর্ণভাবে গত শুক্রবারই ছিল জয়পুর কেন্দ্রে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। এরফলে জয়পুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা কার্যত আর ছিল না।


ফলে ওই আসনে দলের প্রার্থী না থাকায় নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন দিল তৃণমূল।


পুরুলিয়ার তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র নবেন্দু মাহালি আদালতের রায়ের পর বলেছিলেন যে, বিষয়টি নিয়ে কোর্টে যাওযার সময়ও আর নেই। কাজেই ওই আসনে আমাদের প্রতীকে প্রার্থী থাকছেন না। ওনার হলফনামায় তারিখ সংক্রান্ত একটি বিষয় ছিল। কমিশন যে সেটি এত বেশি গুরুত্ব দিয়ে বসবে, তা ভাবতেই পারিনি।


অন্যদিকে, তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন জয়পুরের তৃণমূল যুব সভাপতি দিব্যজ্যোতি সিংদেও। তৃণমূলের প্রতীকে না লড়লেও দলের ‘খেলা হবে’ স্লোগান ধার করে, তিনি বেছে নেন ফুটবল প্রতীক। শেষমেশ নির্দল প্রার্থী সেই দিব্যজ্যোতিকেই সমর্থনের পথে হাঁটল তৃণমূল শিবির। জয়পুরের নির্দল প্রার্থী দিব্যজ্যোতি সিংদেও জানান, ‘‘আমার ওপর মমতা-অভিষেক ভরসা রেখেছেন সেজন্য কৃতজ্ঞ। পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলাম, সেটা গৃহীত হয়নি ৷’’


নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন নিয়ে তৃণমূলের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘এটাই তো স্বাভাবিক, আগামী দিনে পুরো দলটাই নির্দল হয়ে যাবে ৷’’