কোচবিহার: রাজ্য তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণের পরের দিন কোচবিহারের সভা থেকে একযোগে বিজেপি, নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘তিন দফার ভোট হয়ে গেছে। ৯০-এর বেশি আসনে ভোট হয়ে গেছে। তাতে আমরা জিতছি। বিজেপি আমাদের ধারেকাছেও আসতে পারেনি। কালকে এত অত্যাচার করেছে আরামবাগে। আমার তফশিলি মেয়ে সুজাতা মণ্ডল প্রার্থী, তাকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়েছে। ইলেকশন কমিশনকে বলব অসমের বর্ডার সিল করতে। ভুটান শান্তিপ্রিয় জায়গা, আমার বন্ধু দেশ। কিন্তু তাও বলব বর্ডার সিল করতে। মনে রাখবেন, কোচবিহারের আশেপাশের কিছু জায়গা আছে বাংলাদেশের। সেই জায়গাগুলিও সিল হবে। যাতে বাইরে থেকে এসে কেউ গুণ্ডামি করতে না পারে। সিআরপিএফ যদি গণ্ডগোল করে, মেয়েদের বলে দিচ্ছি, ওদের ঘেরাও করে রাখবেন একদল, আর একদল ভোট দিতে যাবেন। একদল ঘেরাও করবেন, একদল ভোট দিতে যাবেন। ভোট নষ্ট করবেন না।’


মমতা আরও বলেন, ‘কোচবিহারকে আমরা হেরিটেজ টাউন করছি। কোচবিহারে আমরা পঞ্চানন বর্মার নামে বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হয়েছে। বাজেটে ২০০ রাজবংশী স্কুলকে স্বীকৃতি দেব বলেছি। আগে আমি কোচবিহারে যখন আসতাম, তখন রাস্তায় গর্ত ছিল। ঢেউ খেতে খেতে আসতাম। এখন সহজেই শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহারে আসা যায়। আরও অনেক রাস্তা করছি। মেচেদা থেকে রাস্তা নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, চাকরির সুযোগ বাড়বে।’


নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিজেপি-কে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘অসমে ভোটার লিস্ট থেকে ১৪ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দিয়ে তাঁদের আজ ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কারা? আপনার ঘরের ভাই-বোন নয়? বিজেপি বলল, ক্যা করব। এনপিআর-এর নাম করে, এনআরসি-র নাম করে ১৪ লক্ষ বাংলাভাষীর নাম বাদ দিয়েছে। আজকে আপনাদের কষ্ট হয় না? বলেছিল ক্যা করবে। কোথায় ক্যা? কিছুই নেই। ওরা ইলেকশনের আগে ভাংচি দেয়, মিথ্যে বলে আর ভাগাভাগি করে। আসলে বিজেপি কোনও কাজ করে না। প্রধানমন্ত্রী এসে বলল, নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন আমরা করে দেব। কবে থেকে বলছে? আজ পর্যন্ত করেছে? করেনি। কালকেও কোচবিহারে মিটিংয়ে এসে বলল, ভোটের পর করব। করবি কী? সব তো মিথ্যে কথা। রাইট টু ইনফেরশনে জিজ্ঞাসা করেছে, নারায়ণী সেনা ব্যাটেলিয়ন করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কোনও প্রস্তাব আছে? কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, এরকম কোনও প্রস্তাব নেই। তার মানে বুঝতে পারছেন কেমন মিথ্যে কথা বলে। রাজবংশীদের ধোঁকা দিয়েছে বিজেপি। মিথ্যে কথা বলেছে। আমি কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন করে দিয়েছি। হেড কোয়ার্টার করে দিয়েছি কোচবিহারে। পুলিশে ৩,০০০ চাকরি হবে। এরা এত মিথ্যে কথা বলে! বলে উদ্বাস্তুদের আমরা জমির দলিল দেব। বন্ধু, ছিটমহল কে করে দিয়েছে? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিল, আমি ছিটমহল করে দিয়েছি। এরা একটা কাজ করেনি। আজ এসে বলছে, ভোট চাই। লোকসভা ইলেকশনে ভোট নিল, পালিয়ে গেল। যে এমপি হল, সে এখন এমএলএ ইলেকশনে দাঁড়িয়েছে। এরপর কাউন্সিলর ইলেকশনে দাঁড়াবে, হারবে, তারপর পঞ্চায়েত ইলেকশনে দাঁড়াবে,  গ্রামসভায় দাঁড়াবে, ক্লাবের ইলেকশনে দাঁড়াবে। আর আপনাদের এখানে যিনি বিনয় বর্মনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, আমি শুনেছি ২০১৬ সালে তিনি জেলে ছিলেন। মার্ডার কেসে জেলে ছিলেন। বুঝুন, খুনি হয়ে গেছে ধনী।’