রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত বিধায়ক? টেট, আপার প্রাইমারি বা বন সহায়ক-রাজ্য সরকারের একের পর এক চাকরিতে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ! যা নিয়ে ভোটের মুখে তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে মরিয়া বিরোধীরা। এই প্রেক্ষাপটে এবার জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ির তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে উঠল চাকরির নামে টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ! যার প্রতিবাদে রবিবার পৃথকভাবে মিছিল করল বিজেপি ও সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই।
অভিযোগ, ২০১৮ সালে প্রাইমারি স্কুল ও জলসম্পদ বিভাগে চাকরি দেওয়ার নামে ১৩ জনের কাছ থেকে প্রায় ৮৩ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন ধুপগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক মিতালি রায়। কিন্তু ৩ বছর হতে চললেও এখনও কেউ চাকরি পাননি!
অভিযোগকারীর কথায়, ‘চাকরি দেওয়ার নাম করে আমার থেকে ৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন ধুপগুড়ির বিধায়ক মিতালি রায়। এখন টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছি। কিন্ত আজ দেব, কাল দেব করে চার মাস থেকে ঘুরিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে দিয়েছিলাম। আমাদের কলকাতাতেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইন্টারভিউও হয়েছিল। কিন্ত পরে জানতে পারলাম, ভুয়ো ইন্টারভিউ হয়েছিল। ১৩ জনের থেকে মোট ৮৩ লক্ষ টাকা নেন বিধায়ক।’
অভিযোগকারীদের আরও দাবি, প্রতারিতদের মধ্যে রয়েছেন এক প্রাক্তন তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানও!
এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। জলপাইগুড়ির বিজেপি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, ‘কাক কাকের মাংস খায় না। কিন্ত তৃণমূলের বিধায়কেরা তৃণমূলের প্রধানদের কাছ থেকেই চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা লুঠ করে খাচ্ছে। পশ্চিম বাংলায় চলছে লুঠের সরকার, কাটমানির সরকার। চাকরি দেওয়ার নাম করে যুবক যুবতীদের কাছ থেকে টাকা লুঠ করে সেই টাকার ভাগ কালীঘাট পর্যন্ত যায়। মিতালি রায়ের বাড়ি এবার ঘেরাও করব। টাকা না দিলে মানুষ গাছে বেধে মারবে।’
জলপাইগুড়ির ডিওয়াইএফআই নেতা নির্মাল্য ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘চাকরিপ্রার্থীদের সাথে প্রতারণা করছে মিতালি রায়। আমাদের দাবি, অবিলম্বে ঘুষখোর বিধায়কের পদত্যাগ করতে হবে এবং চাকরিপ্রার্থীদের ঘুষের ৮৩ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে।’
যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ধূপগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর দাবি, ‘আমার কিছু বলার নেই। দল বিষয়টা দেখছে। গতকালও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাকে এখনও কেউ কিছু বলেনি। দল জিজ্ঞাসা করলে বলব।’
রাজ্য নেতৃত্বের কোর্টে বল ঠেলেছেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী। তাঁর বক্তব্য, ‘কোনও বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে উপর মহলে পাঠিয়ে দিতে পারি। কিন্ত এটা আমার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।’
তবে ভোটের মুখে খোদ বিধায়কের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব।