কৃষ্ণেন্দু সরকার, কলকাতা: শোভন চট্টোপাধ্যায়-বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি ত্যাগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূল ছেড়েছেন দেবশ্রী রায়। কেন? এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেবশ্রী বললেন, ‘আমি শর্ত দিয়েছিলাম রায়িদিঘি থেকে দাঁড়াব না। তারপর আমার সঙ্গে কুণালবাবুর (কুণাল ঘোষ) দেখা হয়। ফোনেও কথা হয়। উনি বলেন দলের বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না আপনি। আমি ওঁকে বলি যে, দশ বছর ধরে বিধায়ক রয়েছি। চ্যালেঞ্জ করে বলছি কোনও সংবাদমাধ্যম বলতে পারবে না দলের বিরুদ্ধে একটা শব্দও বলেছি। উনি বলেন, একটি ব্যস্ত আছি। আপনার সঙ্গে বসে সমস্ত অভিযোগ, অনুযোগ শুনব। এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি সময় মতো বসে পড়ব। ওঁর জন্য অপেক্ষা করলাম। উনি এত ব্যস্ত, ব্যস্ত হতেই পারেন। শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী ওঁরা। আমি সাধারণ মানুষ। অনেকদিন অপেক্ষা করলাম। কুণালবাবুর একটুও সময় হল না। ৫ মিনিটও সময় হল না বসে কথা বলার। অপেক্ষা করে দেখলাম, কারওরই সময় নেই কথা বলার। সবাই ব্যস্ত। নেতা-মন্ত্রী মানুষ। তাই আমি নিজের সিদ্ধান্ত নিলাম।’


রায়দিঘিতে জিতে তিনি দলের কাছে কোনও কদর পাননি বলে অভিযোগ দেবশ্রীর। বলেছেন, ‘আমি দলের আমন্ত্রিত বিধায়ক। রায়দিঘিতে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াতে চায়নি। সকলে প্রত্যাখ্যান করেছে। সেই জন্য দেবশ্রী রায়কে আনা হয়েছিল ওই সিটটা নেওয়ার জন্য। পরপর দুবার ওই সিটটা এনে দিয়েছি দলকে। তার পরিবর্তে কী পেয়েছি? অবমাননা, অপমান। আমি দলকে জানিয়েওছিলাম। কোনও জবাব পাইনি। আমি তো কিছু চাইনি। আমার কোনও দাবি ছিল না।’


শোভন-বৈশাখী কি অমিতাভ আর রেখা? বিস্ফোরক দেবশ্রী


দেবশ্রী আরও বলেন, ‘অপমানিত হয়েছি, দীর্ঘদিন অপমানিত হয়েছি। তাও চুপ করে থেকেছি। দিনের পর দিন আমার এলাকা থেকেই নবান্নে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গিয়েছে। একজন বিশেষ ব্যক্তি, নাম বলব না, তার এমএলএ হওয়ার শখ ছিল। সে ভীষণ নোংরামি করেছে আমার সঙ্গে। আমাকে ফোনে ভয় দেখানো হয়েছে। যে ভাবে গালিগালাজ করা হয়েছে, বাংলার মানুষ আমাকে আশীর্বাদ করেছে, ভালবেসেছে। আমার কোনও গডফাদার ছিল না। দলকে জানানোর পরেও কোনও লাভ হয়নি।’


অভিনয়ে ফেরার কথাও ভাবছেন দেবশ্রী। বলছেন, ‘আমাকে দেখে মনে হচ্ছে হতাশ হয়েছি? টিকিট পাইনি নয়, টিকিট নিইনি। আমি অপেক্ষা করেছিলাম যদি অন্য জায়গা থেকে টিকিট দেয়। আমি এক দিনে দেবশ্রী রায় হইনি, আমি এলেবেলে লোক নই। আমি যাই করি না কেন, মানুষ সাপোর্ট দেবে। অভিনয় জগতকে উপেক্ষা করেছি গত দশ বছরে। পুরো মন জুড়ে রায়দিঘি হয়ে গিয়েছিল, তাতেও অনেক বদনাম কুড়িয়েছি। বলা হয়েছে, বিধায়ক আসেন না। স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করুন। প্রত্যেক সপ্তাহে গিয়েছি। আমি তো শিল্পী মানুষ। একটু আঘাত পেয়েছি। আমি এখন প্রচুর প্রস্তাব পাচ্ছি। অভিনয়েও মনোনিবেশ করতে চাই। আমি খুব খুশি। উদাস হয়ে গেলাম, মনটা ভেঙে গেল, ওসব কোনও ব্যাপার নেই। আমি খুব ভাল আছি, খুব আনন্দে আছি। রাজনীতি হোক বা অভিনয়, একশো শতাংশ দেব। পর্দায় ফেরার কথা ভাবছি।’