কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও সন্দীপ সরকার: বর্ধমানে বিস্ফোরণে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ বিরোধীদের। আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল বিজেপি। পাল্টা বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনীতির অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল। শিশুমৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার সকাল। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সোয়া ১১টা। বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে বর্ধমানের রসিকপুরের সুভাষপল্লি রোড। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দেখা যায়, ধোঁয়া, ধুলো ঢাকা রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছে দুটি শিশু। একজনের বয়স সাত, আরেকজনের ছয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকেই দ্রুত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি একজনের! মৃত শিশুর আত্মীয় শেখ ফিরোজ বলেন, ‘‘যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের শাস্তি চাই ৷’’
এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৯৬ সালের একটি ঘটনাকে। ৭ মে। সেদিন ছিল ভোট। সেবারও বল ভেবে বোমা হাতে নিতেই বিস্ফোরণ! প্রাণ হারায় দুই শিশু। একটি ছেলের দুটো চোখই নষ্ট হয়ে যায়। সেই নির্মম ঘটনা নিয়ে একটি গান লিখেছিলেন কবীর সুমন। "হাত বোমা নিয়ে ক্রিকেট খেলল কয়েকজন/ নিমেষেই ঘটল ভোটের সকালে বিস্ফোরণ / খেলতে খেলতে মরল দু’জন বালাই ষাট/ বস্তির ছেলে, বয়স তাদের ৭ কি ৮..." সেদিনের সেই ৭-৮ বছরের শিশুটির সঙ্গে মিশে গেল এদিনের শেখ আফরোজের গল্পটা।
এদিনের ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘তৃণমূলের বেশিরভাগ পার্টি অফিসগুলো বোমা তৈরির কারখানা হয়ে গেছে, খেলা হবে স্লোগানের জেরে এই ঘটনা ঘটছে ৷’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ক্ষমতা জাহির করতে এই ঘটনা, তৃণমূলের জমানায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে, খেলা হবে বলছে, তার জন্য ৷’’ নির্বাচনী সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি পরিবারের পাশে আছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এধরনের খবর পেলে আমরা সবসময় খোঁজ নিই, পরিবারের পাশে থাকব"৷
তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘আইনের শাসন সকলের জন্য প্রযোজ্য, এক্ষেত্রে আমাদের কর্মী যেভাবে বিজেপি খুন করছে সেখানে আইনের শাসন বিজেপি নিচ্ছে, নিজেরাই আইন ভেঙে কমিশনে গিয়ে অভিযোগ করছে ৷’’
ভোট এখনও শুরু হয়নি। তার আগে এই ঘটনা। বাকরুদ্ধ বিদ্বজ্জনেরা। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘একটাই জিনিস মনে হচ্ছে বোমা কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে, আমরা প্রাণঘাতী নয়, প্রাণদায়ী কুটিরশিল্প চেয়েছিলাম, কে কীভাবে বোমা রাখল তার উত্তর প্রশাসন খুঁজবে, সাধারণ মানুষ বড় আতঙ্কিত এবং অসহায় ৷’’
নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তীর মতে, ‘‘এমন একটা নির্বাচন যেখানে সবাই বলছে খেলা হবে, কী খেলা হবে, সেটা বোঝা যাচ্ছে, শিশুদের খেলার সুযোগ দেওয়া হোক, এটা খুন, বাচ্চারা খেলতে গিয়ে মারা গেল, এর চেয়ে হিংস্র কী হতে পারে, এরপর দোষারোপের পালা চলবে ৷’’ কবে শেষ হবে হিংসার এই খেলা? আদৌ কি শেষ হবে?