কলকাতা: আগামীকাল থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে বাংলার ভোটের মহারণ। শনিবার থেকেই শুরু রাজ্যের বিধানসভা ভোট। শনিবার থেকে শুরু করে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আট দফায় হবে এবারের বিধানসভা নির্বাচন। শনিবার প্রথম দফায় রাজ্যের ৫টি জেলার ৩০টি আসনে ভোট। এর মধ্যে ২৩টি আসন জঙ্গলমহলের চার জেলায়। ৭টি আসন পূর্ব মেদিনীপুরে।
এই ৩০টি আসনের মধ্যে পুরুলিয়ার ৯টি,পশ্চিম মেদিনীপুর (পার্ট-১)-এর ৬টি, বাঁকুড়ার ৪টি, পূর্ব মেদিনীপুর (পার্ট-১)-এর ৭টি এবং ঝাড়গ্রামের ৪টি আসন রয়েছে। আদিবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চল একটা সময় বামেদের ঘাঁটি বলেই পরিচিত ছিল।
২০১১ ও ২০১৬, পরপর দুটি বিধানসভা নির্বাচনে এই ৩০টি কেন্দ্রে কার্যত দাপট দেখিয়েছিল তৃণমূল। যদিও ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে সেই ছবি কিছুটা পাল্টায়। মাথাচাড়া দেয় বিজেপি।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে এই ৩০টি আসনের মধ্যে ২৭টিতেই জিতেছিল তৃণমূল। আর ৩টি আসনে জিতেছিল বাম-কংগ্রেস জোট।
কিন্তু, তারপর তিন বছরে ছবিটা আমূল পাল্টে গেছে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফল অনুযায়ী, প্রথম দফার এই ৩০টি আসনের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে ১৭টি আসনে। আর তৃণমূল এগিয়ে ১৩টিতে।
যে আসনগুলিতে প্রথম দফায় ভোট নেওয়া হবে সেগুলি হল-পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, ভগবানপুর, খেজুরি, কাঁথি দক্ষিণ, রামনগর, এগরা, দাঁতন, নয়াগ্রাম, গোপিবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, কেশিয়ারি, খড়্গপুর, গড়বেতা, শালবনি, মেদিনীপুর, বিনপুর, বান্দোয়ান, বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, মানবাজার, কাশীপুর, পারা, রঘুনাথপুর, শালতোড়া, ছাতনা, রানিবাঁধ, রাইপুর।
এগুলির মধ্যে পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, ভগবানপুর, খেজুরি, কাঁথি দক্ষিণ, রামনগর কাঁথি লোকসভা আসনের অন্তর্গত। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি আসনে জিতেছিল তৃণমূল। লোকসভা ভোটের বিধানসভাওয়াড়ি ফল অনুযায়ী, পটাশপুরে প্রায় ১৩ হাজার ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৯৯০৪৮ ভোট। বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৮৪১১০ ভোট। সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন ১৭১১৯ ভোট।
কাঁথি উত্তর আসনে ১০৫০৩৩ ভোট পেয়ে এগিয়েছিল তৃণমূল । বিজেপি পেয়েছিল ৯১,৯৫৯ ভোট। ১১৮৯১ ভোট পেয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী।
লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে ভগবানপুর আসনেও এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এই আসনে ১১৭১৯৭ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি পেয়েছিল ৭৯৮০৬ ভোট। সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন ১১৭৫০ ভোট। খেজুরিতেও ৯৬৫০৬ ভোট পেয়ে এগিয়েছিল তৃণমূল। ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে বিজেপি পেয়েছিল ৯০৯৫৩ ভোট। সিপিএম প্রার্থীর ঝুলিতে গিয়েছিল ৭২১৫ ভোট। কাঁথি দক্ষিণ আসনে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯৩,৭৯২ ভোট। বিজেপির ঝুলিতে এসেছিল ৭৪৭৭৭ ভোট। সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন ৮৭১২ ভোট।এই আসনে এগিয়েছিল তৃণমূল। রামনগর থেকেও লিড পেয়েছিল তৃণমূল। তারা পেয়েছিল ১০০০৮৪ ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৯২৩১৮ ভোট। সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১০৫৫৮ ।
মেদিনীপুর লোকসভা আসনের অন্তর্গত এগরা, দাঁতন, কেশিয়ারি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী, এই তিন বিধানসভা আসনেই এগিয়েছিল বিজেপি। এগরায় বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ১০৯৫০৯। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১০০৮১৫। সিপিআই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৯৭৭। দাঁতনে ২০১৯-র লোকসভার ফলাফলের নিরিখে বিজেপি পেয়েছিল ৯২৪১৩ ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ৮৫৭২৪ ভোট। সিপিআই প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫৮৮৩ ভোট। কেশিয়ারিতে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ১০০০৩১। তৃণমূল পেয়েছিল ৮৯১৫৮ ভোট। সিপিআইয়ের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৭৫৪৫। এই লোকসভা আসনের অন্তর্গত খড়্গপুরে এগিয়েছিল তৃণমূল। মেদিনীপুর আসনেও এগিয়েছিল বিজেপি। খড়্গপুরে বিজেপি পেয়েছিল ৮০২১০ ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ৮৯৬৭৭ ভোট। সিপিআই পেয়েছিল ১০১১৬ ভোট। খড়্গপুরে এগিয়েছিল তৃণমূল। মেদিনীপুর বিধানসভা আসন থেকেও লিড পেয়েছিল বিজেপি। তারা পেয়েছিল ১১০৩৭২ ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ৯৩৭৩১ ভোট। সিপিআই পেয়েছিল ৯৯৮৭ ভোট।
ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনের অন্তর্গত নয়াগ্রাম, গোপিবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, গড়বেতা, শালবনি, বিনপুর বিধানসভা আসনে গতকাল প্রথম দফায় ভোট। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভাওয়াড়ি ফলাফল অনুযায়ী, বিজেপি নয়াগ্রামে ৮৪৩১৬ ভোট পেয়েছিল। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৮০৯৭৮ ভোট।অর্থাৎ এই আসনে এগিয়েছিল বিজেপি। সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭৩০৫ ভোট। গোপীবল্লভপুরেও বিজেপি এগিয়েছিল। বিজেপি পেয়েছিল ৮৯০৩৪ ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ৮২২০৫ ভোট। বামেদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬১২৮। ঝাড়গ্রামে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৩৮১২, তৃণমূলের ৮২১৬৯ ও সিপিএমের ৯৫৭১। অর্থাৎ, এই আসনে সামান্য ব্যবধানে এগিয়েছিল বিজেপি।
গড়বেতায় বিজেপি পেয়েছিল ৯১৩২৮ ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ৮৪৫১৭ ভোট। সিপিএম পেয়েছিল ১০৩৪৩ ভোট। এই আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। শালবনিতে বিজেপি ১০৩৭০৬, তৃণমূল ১১২৪৩১ ও সিপিএম ১১০২৪ ভোট পেয়েছিল।অর্থাৎ, এই আসনে তৃণমূল এগিয়েছিল। বিনপুরে বিজেপি ৭৩,১৩৮, তৃণমূল ৭৬১৯৭ ও সিপিএম ১০৩০১ ভোট পেয়েছিল। এই আসনে তৃণমূল এগিয়েছিল।
পুরুলিয়া লোকসভা আসনের অন্তর্গত বান্দোয়ান, বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, মানবাজার, কাশীপুর, পারা। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভাওয়াড়ি ফল অনুযায়ী বলরামপুরে বিজেপি পেয়েছিল ১০০৪১৯ ভোট। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ৬৪৯৫০ ভোট। কংগ্রেস ৬৭০৯ ও ফরওয়ার্ড ব্লক ৫০৬২ ভোট পেয়েছিল। এই আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। বাঘমুণ্ডিতে বিজেপি ১০০৩১২, তৃণমূল ৪৭৬০৪, কংগ্রেস ২৯৫১৮, ফরওয়ার্ড ব্লক ১০০১২ ভোট পেয়েছিল। এখানেও লড পেয়েছিল বিজেপি। জয়পুরে বিজেপি পেয়েছিল ৮৮০৮৭ ভোট, তৃণমূল পেয়েছিল ৬৬২৫২ ভোট, কংগ্রেস পেয়েছিল ২৬৯৮৯ ভোট, ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছিল ১৩৩৬৯ ভোট। এই আসনেও সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। পুরুলিয়া বিধানসভা আসনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ১০২৭৪৯, তৃণমূলের ৬৬২৫১, কংগ্রেসের ৮৮৯২, ফরওয়ার্ড ব্লকের ৯৯৯৪। এখানেও এগিয়ে ছিল বিজেপি। মানবাজারে বিজেপি পেয়েছিল ৮৩৩১৪ ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ৯৩৮৯৭ ভোট। কংগ্রেস ২৯৩৫,ফরওয়ার্ড ব্লক ১৩৪৪০ ভোট। এই আসনে তৃণমূল এগিয়েছিল। কাশীপুরে বিজেপি ৯১০৭৯, তৃণমূল ৭৪৯২৫,কংগ্রেস ৩৭৪১, ফরওয়ার্ড ব্লক ৭৩৬৮ ভোট পেয়েছিল। এখানে লিড পেয়েছিল বিজেপি। পারা-তে বিজেপি ১০০০৫৬, তৃণমূল ৫৮৮১৪, কংগ্রেস ৫৫৮২, ফরওয়ার্ড ব্লক ৯০৪৮ ভোট পেয়েছিল। এখানেও এগিয়েছিল বিজেপি।
বাঁকুড়া লোকসভা আসনের অন্তর্গত রঘুনাথপুর, শালতোড়া, ছাতনা, রানিবাঁধ, রাইপুর বিধানসভা। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভাওয়াড়ি ফল অনুযায়ী, রঘুনাথপুরে বিজেপি ১০৯৮৩২, তৃণমূল ৬৭১৯৯, সিপিএম ১১৫৬৬ ভোট পেয়েছিল। অর্থাৎ,এখানে বিজেপি এগিয়েছিল। শালতোড়ায় বিজেপি ৮৯০৭৩, তৃণমূল ৭৪০১৭, সিপিএম ১৩৬৪৮ ভোট পেয়েছিল। এখানে বিজেপি এগিয়ে ছিল। ছাতনায় বিজেপি ৯৫৬৬১, তৃণমূল ৬৪৪৭৯, সিপিএম ১১১৩২ ভোট পেয়েছিল। এই আসনে লিড পেয়েছিল বিজেপি। রানিবাঁধে বিজেপি ৯৩৯৫৬, তৃণমূল ৭৮১৪২, সিপিএম ১৬৫৩৮ ভোট পেয়েছিল। রাইপুরে বিজেপি ৮৩৭৭৪, তৃণমূল ৮০৪২৩, সিপিএম ১১৪১৮ ভোট পেয়েছিল। অর্থাৎ, রানিবাঁধ ও রাইপুরেও বিজেপি লিড পেয়েছিল।