পুরুলিয়া: বাংলার ভোটে জিততে অস্ত্র বাংলার আবেগ! পুরুলিয়ার সভা থেকে ফের বিজেপির গায়ে বহিরাগত তকমা সাঁটার চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কটাক্ষ, শুধু ভোট এলেই বাংলার কথা মনে পড়ে বিজেপির। পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপিও।
লড়াইটা বাংলা দখলের। হাইভোল্টেজ ভোটযুদ্ধে জিততে বাংলার দরজায় দরজায় পৌঁছে যাচ্ছেন দিল্লির বিজেপি নেতারা। পাল্টা একের পর এক সভা ও কর্মসূচি থেকে বিজেপির গায়ে বহিরাগত তকমাটা আরও জোরালভাবে সেঁটে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার পুরুলিয়াতেও তার ব্যতিক্রম হল না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো মণীষীদের ওপর ভর করে বিজেপি যখন বাঙালির মন জয় করতে চাইছে, তখন সেই অস্ত্র ভোঁতা করতে পাল্টা সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, বীরসা মুন্ডাকে অসম্মান করে চলে গেল। কানহো মুর্মুর মূর্তি ভেঙে দিয়েছিল। এরা কখনও বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে, কখনও রবীন্দ্রনাথ ভাঙে। ভোট এলে বাংলার কথা মনে পড়ে। বাংলা বলতে পারে না বাঙ্গাল, ভোটের জন্য কাঙ্গাল!

নাম না করে দলত্যাগী তৃণমূলী নেতাদেরও নিশানা করেন মমতা। বলেন, যারা বিজেপিতে যেতে চায়, চলে যাক। কিন্তু আমরা গেরুয়া দলের কাছে মাথা নোয়াব না।

অমিত শাহ থেকে শুরু করে জে পি নাড্ডারা রাজ্য সফরে কখনও খাবার খাচ্ছেন কৃষক পরিবারের দাওয়ায় বসে, কখনও বাউলের বাড়িতে, মতুয়া কিংবা আদিবাসীদের ঘরে।
এসব নিয়েও পুরুলিয়ার সভা থেকে আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা বলেন, এখন গিয়ে বলছে, ভোটের আগে এসেছি। খেতে দেবে। টাকা দিয়ে দেব। পাঁচতারা হোটেল থেকে খাবার পেল। দলিতদের ঘরে হিমালয়া কোম্পানির বোতল থাকে? আমি যে জলটা খাই, সেটা আমার সরকারের তৈরি করা। এটা ছ’টাকা দাম। তোমরা দলিতদের ঘর ভেঙে নিজেরা ভাল করে সিমেন্ট করে, কাঁসার থালায় কলাপাতা চাপিয়ে ফাইভ স্টার থেকে খাবার এনে খেয়ে পগার পার! গত লোকসভা নির্বাচনে পুরুলিয়ায় ভাল ফল করেছে বিজেপি। জঙ্গলমহলে শক্তি বাড়ছে তাদের। এই প্রেক্ষাপটে মমতা বলেন, বিজেপি নেতারা নির্লজ্জের মতো লোকসভা ভোটের সময় নিজেদের স্বার্থ পূরণে আপনাদের বিভ্রান্ত করে দিল্লি পালিয়ে গিয়েছেন। প্রশ্ন করেন, ভোটের পর আর ওদের দেখেছেন? ওরা কি আপনাদের জন্য কিছু করে? কোনও উন্নয়ন করেছে ওরা? রাস্তা করেছে, জলের লাইন দিয়েছে, কাজ, রেশন দিয়েছে আপনাদের? আপনাদের দিকে তাকিয়ে দেখেছে? কোভিড অতিমারীর সময় আপনাদের পাশে থেকেছে? ভোট এলে ওরা খুব মিষ্টি ব্যবহার করে, ভোট চলে গেলে পাত্তাই দেয় না। এই হল বিজেপি। শুধু মিথ্যাই বলে।

এমনকী বিজেপিকে মাওবাদীদের চেয়েও বিপজ্জনক তকমা দেন তিনি।

যদিও মুখ্যমন্ত্রীর যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে পাল্টা তাঁকে আক্রমণ করেছে বিজেপি।

দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও বিধানসভা ভোটের দামামা কার্যত বেজেই গেছে। সব দলেরই পাখির চোখ এখন বাংলা। কিন্তু, শেষ কথা বলবে মানুষ। আর তাদের মতামত ইভিএমে জমা পড়তে বাকি আর মাস দুয়েক।