দক্ষিণ ২৪ পরগনা : দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানে তৃণমূলের জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে তীব্র আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেনের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দাতেও সোচ্চার হয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় বিজেপিকে নিশানা করেছেন মমতা। সভায় মমতা ববলেছেন, ‘মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন রাজ্যের মন্ত্রী। সকালে গিয়েছিলাম মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। প্রায় ২৬ জন আহত হয়েছেন। জাকির খুব পপুলার ছেলে। জাকিরের ওপর হামলায় পুরো তদন্ত হওয়া উচিত। সিট গঠন করা হয়েছে। রেলস্টেশনের ভিতর রেল পুলিশের অধীনে।বিজেপির চক্রান্ত চলছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওপর খুব লোভ বিজেপির।’
এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার বঙ্গ সফরে এসেছেন অমিত শাহ। নামখানায় পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করে কাকদ্বীপে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রোড শো।
অমিতের এই সফরকে কটাক্ষ করে মমতা বললেন ‘বাঘের হামলায় সময় বিজেপির দেখা মেলে না।গঙ্গাসাগর দেখতে গেছেন বিজেপির ২ নম্বর নেতা!গঙ্গাসাগরকে বলছে খারাপ, আমি বলি এই মূর্তিমান কি বলছ ?লজ্জা করে না!একটা পয়সা দিয়েছ।দেশে ক্ষমতায় এসে নোটবন্দি, ঘরবন্দি, হিংসা, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করেছে।গ্যাসের দাম ৮০০ টাকা, তখন কেন চুপ ?আগে অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়ে দেখান অমিত শাহ।অমিত শাহের ছেলেও ছাড় পাবেন না।রোজ শুধু ভাইপো বলছে।তোমার ছেলের কি করে কোটি কোটি টাকা হচ্ছে ?’
এভাবেই অভিষেকের বিরুদ্ধে বিজেপির ভাইপো আক্রমণের জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতার ভাষণে উঠে আসে ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রসঙ্গও। তিনি বলেছেন, ‘আমফানের সময় ১০ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে তৃণমূল সরকার। এক পয়সা দেয়নি কেন্দ্র, নাটক করে ঘুরে গেলেন নরেন্দ্র মোদি।রাজ্য যে টাকা পায়, সেখান থেকে ১০০০ কোটি দিয়েছে। প্রতিদিন মিথ্যা কথা বলছে।‘’
হিন্দুত্ব ইস্যুতে ভোটের মুখে তৃণমূলকে নিশানা করছে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে
তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘আগে সরস্বতী পুজোর মন্ত্র বলুক। দুর্গাপুজোর জন্য ২৮০০০ ক্লাবকে টাকা দেয় রাজ্য। মা দুর্গা জানে না আবার দুর্গাপুজোর কথা বলছে। অমিত শাহ আমাকে হিন্দু ধর্ম শেখাবেন!সবচেয়ে বড় চোর, আবার চোরের মায়ের বড় গলা।বিজেপির কাছে শুধু কলা আছে, কলা খাও ,ভাগ যাও।বাড়ি গিয়ে বিজেপি উল্টোপাল্টা বললে কান মলে দিন।কান মলে ছবি রেখে দেবেন।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণে উঠে এসেছে পঞ্জাবে সাম্প্রতিক পুরভোটের প্রসঙ্গ। তিনি বলেছেন, ‘দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এত মিথ্যা বলতে পারে, কখনও দেখিনি। কৃষকদের অবমাননা করে পঞ্জাবে সাফ হয়ে গেছে বিজেপি।পঞ্জাব, ত্রিপুরা, অসম, হরিয়ানায় সাফ হবে বিজেপি। বাংলায় এনপিআর, এনআরসি করতে দেব না। আগে নিজের বাবা-মার সার্টিফিকেট আছে কিনা দেখো। তৃণমূলের বুথকর্মীদের ওপর নজর রয়েছে বিজেপির।রক্ত দিতে হলে দাও, বিজেপি-বাম-কংগ্রেসের কাছে মাথা নত নয়।গ্রামগঞ্জের মানুষকে টাকা দেবে, টাকা নিন মাংস-ভাত খান।টাকা নিয়ে ভোটের বাক্সে উল্টে দিন।শুধু ভাগাভাগির রাজনীতি, বাবা-ছেলে, মা-মেয়ের মধ্যে ভাগাভাগি।’
অন্যান্যবারের মতো এবারও অমিত শাহ নারায়ণপুরে এক উদ্বাস্তু পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিনি। এই ভোজন-রাজনীতিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেছেন, কোটি কোটি টাকা নিয়ে আসছে, আর ফাইভ স্টারের খাবার এনে খাচ্ছেন।একটু ছিঁড়ে মুখে দিচ্ছেন, পুরোটা কিন্তু খান না।গরিব মানুষকে অপমান করছে।’
পৈলানে মমতা বলেছেন, ‘উত্তরপ্রদেশে তিনজন নাবালিকাকে নির্যাতন হয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চুপ কেন ? দিল্লিতে এনআরসির নামে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে? স্বৈরাচারী, বর্বরোচিত রাজনৈতিক দল বিজেপি।শুধু মানুষের মধ্যে হিংসা ছড়ায়। বলছে বাংলা দখল করবে, আগে দিল্লি সামলাও। কৃষকদের কীভাবে মেরেছে, শুধু ট্র্যাক্টর নিয়ে গেছিল। কৃষকদের সামলাতে পারে না, আবার বাংলা দখল করবে। এই চেহারায় হবে না, ফোলা ফোলা চেহারা। গুলি-বন্দুকের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে গেছি।
তৃণমূল নেত্রী তাঁর ভাষণে তৃণমূলে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগও নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার পরিবারের সবাই রাজনীতি করে।অভিষেক স্পেশাল প্রায়োরিটি পায় না আমার কাছে। হাজরায় হামলার পর আমার মাথা ফেটে গেছিল, মাথায় ব্যান্ডেজ ছিল। অভিষেক হাতে পতাকা নিয়ে মিছিল করত। ওর এই আগ্রহ দেখে রাজনীতিতে এনেছি। অন্যদিকে সবাই ছেলেদের বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। অভিষেককে মারার চেষ্টা হয়েছে, চোখ উপড়ে গেছিল। আমার পরিবার এমন কাজ করবে না যাতে মানুষের বদনাম হয়।আমার জন্য কথা শুনতে হয় অভিষেককে। অভিষেক একটা চোখে দেখতে পায় না। অভিষেককে তো ডেপুটি চিফ মিনিস্টার করিনি। অমিত শাহ নিজের ছেলেকে রাজনীতি নামান। আমি বন্দেমাতরম বলি, তোমরা বলবে না কেন ?সবকিছুর লক্ষ্মণরেখা থাকা উচিত, সৌজন্য থাকা উচিত’।
তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘ নিহত বাঘের চেয়ে আহত বাঘ ভয়ঙ্কর।কেন্দ্রীয় পুলিশ নিয়ে আসবে ভয় পাবেন না। বেশি ভয় দেখালে বাড়ির মেয়েরা খুন্তি নিয়ে দাঁড়াবে। নিজের এলাকায় নজর রাখুন, অনেক জায়গায় টাকা দেওয়া হচ্ছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। ফর্মুলা দেখে এলাকা দখল করতে গুণ্ডা নিয়ে আসছে বিজেপি। বহিরাগতদের ঢুকতে দেবেন না। রথযাত্রা ফ্লপ, বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে আনছে। প্রতিদিন লোক নাকি হামলা করে ? আগে নিজেদের সামলাও। পুরাতনরা কেউ নেই, কিছু এঁচোড়ে পাকা আছে, তারাই বিজেপিকে খেয়ে নিচ্ছে। ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতবে তৃণমূল। বাংলাকে ধমকালে, চমকালে বাংলা গর্জায়। কেউ কেউ সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।বিজেপির থেকে টাকা নিয়ে সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। জগাই, মাধাই, গদাইকে বিদায় করুন। বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসকে বিদায় করুন। কোনও ঝগড়াঝাঁটি নয়, যে তৃণমূলের প্রতীক পাবে, সেই নিয়েই লড়াই করবে।’