আশাবুল হোসেন, রুমা পাল ও অনির্বাণ বিশ্বাস, মালদা: পাঁচ বছর আগে ২১১ আসনে জিতে রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরলেও মালদায় তৃণমূলের স্কোর ছিল শূন্য।তার আগে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে মালদায় খাতা খুলতে পারেনি তৃণমূল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও মালদা থেকে শূন্য হাতে ফিরেছে তৃণমূল। একুশের হাইভোল্টেজ বিধানসভা ভোটের আগে, সেই মালদায় দাঁড়িয়ে তা নিয়ে আক্ষেপের ঝুলি উপুড় করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, "মালদায় আমি নতুন নয়। ছাত্র রাজনীতির শুরু থেকে গত ৩০ বছর ধরে আমি মালদায় আসি। আমার একটাই দুঃখ আছে। আমি মালদায় প্রতিবার আসি। আপনাদের মুখ দেখে আমার খুব আনন্দ লাগে। আপনাদের জমায়েত দেখে আনন্দ লাগে। রাস্তায় দু'ধারে মানুষ দেখে মনে হয় হয়তো মালদাবাসী আমায় গ্রহণ করেছেন। কিন্তু পরে ফিরে গিয়ে দেখি লোকসভাতেও শূন্য, বিধানসভাতেও প্রায় নেই বললেই চলে। আমরা কি কোনও দিন পাব না? মালদা কি আমরা পাব না?"


তিনি বলেছেন, নির্বাচন এলেই অঙ্ক অন্য হয়ে যায়। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি ভাগাভাগি করে নেয়। তৃণমূল শূন্য হাতে ফিরে যায়। এবার কিন্তু শূন্য হাতে ফিরে যেতে আসিনি, পূর্ণ হাতে আপনাদের আশীর্বাদ নিতে এসেছি।  


আমের জন্য  মালদার সুখ্যাতি কারুর অজানা নয়। সেই মালদায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণে উঠে এল আমের প্রসঙ্গ। বললেন, এবারের ভোটে মালদা দেবেন তো? ফজলি আম দেবেন তো? আম ও আমসত্ত্ব দু’টোই চাই।


গত লোকসভা ভোটে মালদায় উল্লেখযোগ্য ভাল ফল করেছে বিজেপি। তারা কটাক্ষের সুরে বলছে, এবারের বিধানসভা ভোটেও মালদার মাটিতে দাঁত ফোটাতে পারবে না তৃণমূল।


তাদের একদা দুর্গ মালদায় তৃণমূল এবারও মুখ থুবড়ে পড়বে বলেই দাবি কংগ্রেস ও জোটসঙ্গী সিপিএমের।


মালদা জেলায় মোট ১২টি বিধানসভা আসন রয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে এর মধ্যে বাম-কংগ্রেস জোট জিতেছিল ১১টি আসনে।


বিজেপি পেয়েছিল একটি আসন।তৃণমূল একটিও আসন পায়নি।


২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফল অনুযায়ী, মালদা জেলার ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি।


কংগ্রেস এগিয়ে ছিল ৪টি আসনে। তৃণমূল ২টি আসনে।


এই প্রেক্ষাপটে মালদায় দাঁড়িয়ে, এখানকার একদা একছত্র অধিপতি, তথা প্রয়াত কংগ্রেস নেতা বরকত গনি খানের প্রসঙ্গ তুলে, আবেগের হাওয়া নিজের পালে টানার চেষ্টা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, মালদায় তো বিজেপি জিতল। কী করেছে? একটায় বিজেপি, একটায় কংগ্রেস। এমনকী, মৌসমকে পর্যন্ত হারানো হয়েছে। অপপ্রচার করে। আমি রাজ্যসভায় মেম্বার করে দিয়েছি সম্মান দেওয়ার জন্য। বরকতদা যতদিন ছিলেন লোকসভায় জিততেন, তাঁকে রাজ্যসভায় দেয়নি। আমি রাজ্যসভায় করে দিয়েছি।


বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষের সুরে মনে করিয়ে দিয়েছে, বরকত গণি খানের পরিবারের সদস্য মৌসম বেনজির নুরকেও কংগ্রেস থেকে ভাঙিয়ে তৃণমূলে আনা হয়েছিল। কিন্তু, শেষ অবধি তিনি হেরে যান।


শেষমেশ মালদা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দেবে? নাকি অতীতের মতো এবারও তাঁর কাছে তা অধরাই থেকে যাবে? সেই উত্তর দেবে সময়।