কলকাতা: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ঘিরে কম বিতর্ক হয়নি। এবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে ফের বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাধার মুখে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বক্তব্য থামিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন। তবে ভিক্টোরিয়ায় যেভাবে তিনি বক্তব্য না রেখেই মঞ্চ ছাড়েন, এদিন সেরকম করেননি। তিনি পরে বক্তব্য রাখেন।

মমতা বলেন, ‘৪-৫ দিন পরে ভোটের দিন ঘোষণা হবে। এখন শুধু চাইলেই হবে না। এত পাওয়ার পরেও শুধু চাই, চাই। ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ত্রিপুরায় মানুষের কী হাল। কোভিড কালে ১ তারিখে মাইনে পাচ্ছেন। কোভিড কালে ১ তারিখে মাইনে পাচ্ছেন। আমাকে চমকে, ধমকে কাজ করানো যাবে না। ভোটের আগে ব্ল্যাকমেলিং করলে পারব না। ত্রিপুরায় ১০০০০ লোককে স্থায়ী করবে বলেছিল, চাকরি চলে গেছে। মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। সিপিএম-বিজেপির মিথ্যা কথা শুনে কেন এরকম করছেন? সবকিছু একসঙ্গে হয় না। আপনার সামনে বিপদ, পৃথিবীর মানুষ বুঝছে বিজেপি মানে বিপদ। গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেলের দাম বেড়েছে। কৃষকরা ৭০ দিন ধরে বসে আছে, বিরোধী প্রতিনিধিদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ত্রিপুরা, অসমে কী হচ্ছে? বিজেপির শাসনে ত্রিপুরায় অনেক মানুষ বাংলায় এসে থাকে। ত্রিপুরার ফর্মুলা বাংলায় আনার চেষ্টা করছে। বিজেপি ওয়াশিং মেশিন, কেউ টাকা গচ্ছিত রাখতে যাচ্ছে, কেউ প্রচুর সম্পত্তি রাখতে যাচ্ছে। কয়েকজন শিল্পীর ওপর চাপ তৈরি করছে বিজেপির আইটি সেল। বিজেপির পক্ষে লিখলে টাকা মিলবে, এমনই চাপ তৈরি করছে। কোথা থেকে এল এত টাকা? এইরকম জনদরদী সরকার, পৃথিবীতে খুঁজে পাবেন না। উত্তরবঙ্গের সব এমপি বিজেপির, কিছু পেয়েছে উত্তরবঙ্গ? এনআরসি, এনপিআর করতে দেব না। উদ্বাস্তু কলোনীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোভিডকালে পড়াশোনার জন্য ৯ লক্ষ পড়ুয়াকে স্মার্টফোন দেওয়া হয়েছে। আগামীতে তৃণমূল ক্ষমতায় থাকবে, রেশন বিনামূল্যে পাবেন। যাঁরা আবেদন করেছেন সবাই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পাবেন। রাজ্য ৮৫০০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছে। অথচ কেন্দ্র বলছে ৬৭৫ কিলোমিটার রাস্তা বানাবে। কলকাতা-শিলিগুড়ি রাস্তা তৈরি করবে বলছে কেন্দ্র। সেই রাস্তায় কাজ আগেই শুরু করে দিয়েছে রাজ্য। বিজেপিকে বিদায় দিন, হিংসা থেকে মুক্তি দিন। বিজেপিকে বিদায় দিন, বাংলাকে বাঁচতে দিন। কৃষক, শ্রমিকের অধিকার ফিরিয়ে দাও। পরিযায়ী শ্রমিকদের ১ টাকাও ট্রেন ভাড়া দেয়নি। অথচ চোরগুলোকে বিমানে দিল্লি নিয়ে যাচ্ছে। বাংলায় থেকে বাংলার সঙ্গে গদ্দারি। সিরাজদৌল্লাকে মানুষ সমর্থন করেন, মিরজাফরকে নয়। তৃণমূল কংগ্রেসের বিকল্প তৃণমূল কংগ্রেস। ওরা চায় যুদ্ধ, আমরা চাই শান্তি। ওরা চায় কর্মসংকোচন, আমরা চাই কর্মসংস্থান। বিজেপির ফেক ভিডিও দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। মিথ্যাকে সত্য করে দিতে চায় বিজেপি। সোনার থালায় ভাত খেতে পারব না। সোনার বাংলা এত সহজ, সোনা দেখেছেন চোখে? সব বিক্রি করে দিয়ে সোনার বাংলা? সোনার ভারতবর্ষকে শেষ করে দিয়েছে বিজেপি। আমার কন্ঠরোধ কেউ করতে পারবে না।’

এর আগে বিজেপিকে আক্রমণ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ দুয়ারে সরকারে নাম নথিভুক্ত করেছে। বিজেপির গাত্রদাহ হচ্ছে। ১ কোটির বেশি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকার জনদরদী সরকার। বাংলা সারা দেশে নজির স্থাপন করেছে। ধর্মের ভেদাভেদ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বিজেপি। ধর্মকে সামনে রেখে লড়াই করুক বিজেপি। তৃণমূল কর্মকে সামনে রেখে লড়াই করবে। বাবরি মসজিদ-রামমন্দিরকে সামনে রেখে লড়াই করছে বিজেপি। ২০১৮ সালের তথ্যের নিরিখে তফসিলি জাতির ওপর অত্যাচার বেড়েছে। বিজেপির আমলে ২৬ শতাংশ অত্যাচার বেড়েছে। দলিতের বাড়িতে খেয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমফান, লকডাউনের সময় খুঁজে পাওয়া যায়নি। পিছনে ১০০ টাকার মিনারেল ওয়াটারের বোতল নিয়ে দরদ দেখাচ্ছে। এটাই হচ্ছে বিজেপির মুখ। মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা জল নিয়ে অযোধ্যায় গিয়েছিলেন। রামমন্দিরের শিলান্যাসে সেই জল গ্রহণ করা হয়নি। আগামীতে জনগণ কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দেবে বিজেপিকে। দিল্লিতে কৃষকদের আটকাতে রাস্তায় পেরেক পুঁতে দিয়েছে। গণ আন্দোলনে মমতার ভূমিকা দেশের মানুষ জানে। ২০২১ সালে ২৫০ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। তখন দিল্লির চেয়ার থরথর করে কাঁপবে।’