রানা দাস, কাটোয়া: চায়ের দোকানে বসে ভোট নিয়ে আলোচনা করা বঙ্গ রাজনীতির একটা অঙ্গ। এখনতো রাজনৈতিক দলগুলোও শুরু করেছে চায় পে চর্চা। চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদী যে দেশের প্রধানমন্ত্রী। সেই দেশে চায়ের দোকানে বসে চায়ে চুমুক দিয়ে রাজনীতির ঝড় তোলাটাই তো স্বাভাবিক। তবে কাটোয়ার প্রিয়দার চায়ের দোকানে বসে রাজনীতি নিয়ে কোন আলোচনা করা যাবে না। কিন্তু ভোটের সময় চায়ের দোকানে বসে রাজনীতির কথা হবে না সেটা কি কখনও হয় !
চায়ের দোকান মানেই সকাল-সন্ধে একসঙ্গে জড়ো হয়ে গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিয়ে কাটাছেঁড়া করা ৷ এটাই তো ভোটের সময় চায়ের দোকানের দৃশ্য। তবে কাটোয়া মহকুমা শাসকের দফতরের চৌহদ্দির ভেতরে প্রিয়দার চায়ের দোকানে রাজনীতি নিয়ে কথা বলায় আছে নিষেধাজ্ঞা। এই চায়ের দোকানে বসে রাজনীতি নিয়ে কোনও আলোচনা করা যাবে না। চায়ের দোকানের সামনেই দোকানের মালিক পোস্টার লাগিয়ে রেখেছেন "এখানে রাজনৈতিক আলোচনা করা নিষেধ" ৷ আর এই পোস্টার নিয়ে বিপাকে পড়েছে তাঁর দোকানের ক্রেতারা।
হাতে গরমাগরম রাজনৈতিক ইস্যু থাকতেও চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চুপচাপ চা খেয়ে চলে যেতে হচ্ছে তাদের। তাই অনেক ক্রেতাই প্রিয়দার চায়ের দোকানে না এসে অন্য চায়ের দোকানে আসর জমাচ্ছে, কারণ সেখানে রাজনীতি নিয়ে কথা বলার উপর কোনও বিধিনিষেধ নেই। এক অফিস কর্মী তো জানিয়ে দিল যে পাঁচ-দশ মিনিটের জন্য অফিসের কাজ ছেড়ে এক কাপ চায়ে চুমুক দিয়ে যদি বর্তমান রাজনীতি নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আলোচনাই করতে না পারি তাহলে চা খেয়ে মজা কোথায়। তবে যাদের সারাদিনে একবার প্রিয়দার এক কাপ চা না খেলে মনটাই ভালো থাকে না, তারাই শুধু চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছে।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে এক ক্রেতা তো বলেই দিল, এটা কি রকম বলুন তো,রাজনৈতিক দলগুলো চায়ের দোকানে বসে চায় পে চর্চা করতে পারে আর আমরা চায়ের দোকানে বসে রাজনৈতিক কথা বললেই যত নাকি কি ঝামেলা। তবে প্রিয়দা কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় । তাঁর দোকানে বসে চা খেলে কোনও রাজনৈতিক আলোচনা করা যাবে না। প্রিয়দার বক্তব্য চায়ের দোকানে বসে রাজনীতির আলোচনা করতে করতে মাঝে মাঝে খুব ঝগড়া লেগে যায় ক্রেতাদের মধ্যে। কখনও কখনও তো হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম । কেউ তৃণমূলের পক্ষে কথা বললে, অন্যজন বিজেপির পক্ষে কথা বলে তেড়ে আসছে। কেউ আবার কংগ্রেস সিপিএমের জোটের পক্ষে বিপক্ষে কথা বলে হাতাহাতি শুরু করে দিচ্ছে। বলুন তো চা বিক্রি করবো না এদের ঝগড়া থামাবো। তিনি আরও বলেন, এমনও দেখেছি তার চায়ের দোকানে কসঙ্গে দুই বন্ধু চা খেতে এসে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে করতে এমন চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। তখন তাদের দেখে কে বলবে দশ মিনিট আগেই হাত ধরে তারা দুই বন্ধু চা খেতে এসেছিলো।- রাজনীতি এক নিমিষেই বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার চায়ের দোকানে রাজনীতি নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না । তার উপর মহকুমা শাসকের দফতরের চৌহদ্দি ভেতরে চায়ের দোকান, তাই রাজনীতি নিয়ে কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি আমার চায়ের দোকানে । এর মাঝেও অচেনা কোন ক্রেতা এসে চা খেতে খেতে রাজনৈতিক কথা শুরু করলে প্রিয়দা ইশারা করে তাদের দেখিয়ে দিচ্ছে সাইনবোর্ড "এখানে রাজনৈতিক আলোচনা করা নিষেধ।’’