বিশ্বজিৎ দাস, পিংলা: এবার পটশিল্পেও লাগল রাজনীতির ছোঁয়া! প্রধানমন্ত্রীর জন্য পাঞ্জাবি ও শাল তৈরির পর এবার পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার পটশিল্পীরা মুখ্যমন্ত্রীর জন্য শাড়ি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য পাঞ্জাবি তৈরি করছেন। আর ভোটার আগে, পটশিল্পীদের প্রচার করা নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করছে তৃণমূল ও বিজেপি দু’দলই।


সেটা ১৯২৫ সাল। কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের আশপাশে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই পটচিত্রগুলির উপর চোখ পড়ে তরুণ শিল্পী যামিনী রায়ের। তিনি খুঁজে পান, যা এতদিন ধরে খুঁজছিলেন। তারপর, দৈনন্দিন বঙ্গজীবন অতি সহজেই ধরা দিল শিল্পীর তুলিতে। যামিনী রায় বলতেন, ‘আমি পটুয়া।’


ভোটমুখী বঙ্গে এবার সেই পটশিল্পেও লাগল রাজনীতির ছোঁয়া। ৭ ফেব্রুয়ারি হলদিয়ায় সভা করেন নরেন্দ্র মোদি। ওই দিন বিজেপির তরফে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় পটচিত্র আঁকা পাঞ্জাবি ও শাল। পাঞ্জাবিতে আঁকা ছিল, মাছের বিয়ের ছবি। শালে আঁকা ছিল, গ্রাম বাংলার ছবি।


ভোটের আগে এবার পিংলার নয়াগ্রামের পটশিল্পীরা মুখ্যমন্ত্রীর জন্য শাড়ি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য পাঞ্জাবি তৈরি করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর শাড়িতে, কন্যাশ্রী, শালে সবুজসাথী প্রকল্পের কথা তুলে ধরা হচ্ছে। আর, অভিষেকের পাঞ্জাবিতে পটচিত্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসাথীর কথা তুলে ধরছেন শিল্পীরা।


পটশিল্পী বাহাদুর চিত্রকর জানিয়েছেন, ‘বিজেপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার জন্য আমাকে পাঞ্জাবির মধ্যে মাছের বিয়ের ছবি আঁকতে বলা হয়েছিল। শালের মধ্যে ছিল গ্রাম বাংলার ছবি। দুর্গা ও রামায়ণের দু’টি পটচিত্র। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বানাতে বলা হয়েছে, শাড়ির মধ্যে কন্যাশ্রীর ছবি, শালের মধ্যে সবুজ সাথী। অভিষেকের পাঞ্জাবিতে থাকবে স্বাস্থ্যসাথী।’


অপর এক পটশিল্পী নাজরা চিত্রকর জানান, ‘রাজনৈতিক বিষয়ে পটচিত্রের কাজ হচ্ছে। এতে আমাদের খুব ভাল লাগছে। এতে আমাদের আরও বেশি প্রচার হচ্ছে। বাড়িতে লোকজন আসছে। জিনিসপত্র কিনছে।’


পটশিল্পীদের প্রচার করা নিয়ে ভোটের আগে তৃণমূল-বিজেপি দু’দলই কৃতিত্ব দাবি করছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, ‘এই পটশিল্পকে শুধু বাংলাই নয়, সারা ভারতবর্ষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচার করার চেষ্টা করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনপ্রিয় মুখ। মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ব্যক্তি। তাই ওদের বিক্রি হচ্ছে।’


পাল্টা বিজেপি রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘পটশিল্প চিরকাল ছিল এবং আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সারা ভারতবর্ষে ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে পটশিল্পকে আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁরা আরও বেশি পাবলিসিটি পেয়েছেন। তৃণমূল কী বলছে না বলছে এই নিয়ে আমরা কিছু চিন্তাভাবনা করি না।’


ভোটের মুখে ‘টুম্পা সোনা’ প্যারডি থেকে ‘খেলা হবে’ গান যখন মুখে মুখে ফিরছে, তখন পটশিল্পে রাজনীতির ছোঁয়া লাগায় কিছুটা হলেও বিক্রি বাড়বে বলেই আশায় বুক বাঁধছেন পিংলার পটশিল্পীরা।