কলকাতা: প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ। কলকাতা থেকে জেলায় বিক্ষোভ বিজেপি কর্মী সমর্থকদের। ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় বিজেপির হেস্টিংস পার্টি অফিসের সামনে। বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। পাল্টা, জবাব দিয়েছে বিজেপি।
বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই, দিকে দিকে বিক্ষোভের ঝড়!কোথাও পার্টি অফিসে ঝোলানো হল তালা, কোথাও তৃণমূল থেকে আসা নেতাকে দল প্রার্থী করায় প্রতিবাদে পোস্টার দিলেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা।
কলকাতা থেকে হাওড়া, হুগলি থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা....বিক্ষোভ সামলাতে হিমশিম খাওয়ার জোগাড় গেরুয়া শিবিরের নেতাদের। হেস্টিংসে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন খোদ বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা শিবপ্রকাশ, ভাঙা হল ব্যারিকেড, বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের কোনওক্রমে ঠেকানোর চেষ্টা করে পুলিশ।
ভোটের মুখে তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিতেই, সিঙ্গুরের বিদায়ী বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে তাঁর পুরনো আসনে প্রার্থী করেছে বিজেপি! আর তাতেই ক্ষেপে লাল সিঙ্গুরের বিজেপি কর্মীরা। রবিবার মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিজেপি পর্যবেক্ষক প্রভুরাম চৌধুরীকে ৫ ঘণ্টা তালাবন্ধ করে রাখেন তাঁরা । হুগলি বিজেপির সাংগঠনিক সহ সভাপতি সঞ্জয় পাণ্ডে প্রশ্ন করেন, কত টাকার বিনিময়ে লকেট ও রাজ্য নেতৃত্ব বেচারাম মান্নার কাছে আসন বিক্রি করেছেন?
আরও একধাপ এগিয়ে সোমবার চুঁচুড়ায় দলের জেলা পার্টি অফিসেই তালা ঝুলিয়ে দিলেন বিজেপি কর্মীরা। সিঙ্গুরের মতোই হরিপালেও তৃণমূল ছেড়ে আসা নেতাকে প্রার্থী করায় বিক্ষোভ দেখান বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
প্রার্থী নিয়ে দলীয় কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ আছড়ে পড়ে বিজেপির হেস্টিংসের পার্টি অফিসে! দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় মুকুল রায়, অর্জুন সিংহদের।
অর্জুন বলেছেন, এই সব দাবিদাওয়া দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে, সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।
উত্তরপাড়ায় ভোটের মুখে তৃণমূল ছেড়ে আসা প্রবীর ঘোষালকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তার প্রতিবাদে, কোন্নগরের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি প্রার্থীর নামে পোস্টার দেখা যায়।
সপ্তগ্রামে এখনও বিজেপি প্রার্থীই ঘোষণা করেনি, কিন্তু তৃণমূল ছেড়ে আসা এক নেতাকে দল প্রার্থী করতে পারে, এমন আঁচ পেয়ে পোলবায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি কর্মীরা।ত্রিবেণীতে রেললাইনে উঠে আত্মহত্যার হুমকি পর্যন্ত দেন এক স্থানীয় বিজেপি নেতা।ক্যানিং পশ্চিমেও কংগ্রেস-তৃণমূল হয়ে বিজেপিতো যোগ দেওয়া অর্ণব রায়কে প্রার্থী করায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিজেপি কর্মীদের একাংশ!
এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, আদি-তৎকাল-পরিযায়ী বিজেপি নিয়ে জট পেকেছে। টিএমসি যাঁদের বয়সের কারণে প্রার্থী করেনি, বিজেপি তাঁদের টিকিট দিয়েছে। যে বিজেপি লালকৃষ্ণ-জোশিকে বয়সের কারণে বাদ দিয়েছিল, তারাই সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথকে টিকিট দিয়েছে। এটা হলে তো দলে যা হবার তাই হয়েছে।লোক নেই, উপযুক্ত মুখ নেই...তাই বিজেপি চাইছে এদিন ওদিক থেকে লোক এলে প্রার্থী করতে।
এই বিক্ষোভকে গুরুত্ব দিতে চাননি রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, বাইট- শমীক ভট্টাচার্য, দল বাড়ছে। তাই এই সব সমস্যা।
এদিকে দলীয় প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ চেপে না রেখে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, পুরনো যাঁরা আছে, তাঁরাও গুরুত্বপূর্ণ। দল শৃঙ্খলাবদ্ধ। তবে কেউ অন্তরের ক্ষোভ উগরে দিতেই পারেন। আমার প্রয়োজন না থাকলে বলে দিন। এই সময় একটা ভাল টাইম। পার্টি আর একটু যত্নশীল হতে পারত। আমি পার্টিকে বলেছি, তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আর কথা বলব না। বাধ্য হলে ফ্লাটফর্ম চেঞ্জ করতে হতে পারে।
তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর, ভাঙর থেকে আমডাঙা, শিলিগুড়ি থেকে সাতগাছিয়া-হাওড়া-কোচবিহারে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। এবার সেই একই ছবি বিজেপিতেও!