সোমনাথ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: সমর্থকদের মারধর করলে পাল্টা মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিলেন সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। সম্প্রতি শালবনিতে এই মন্তব্য করেন সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এসব করে আর লাভ হবে না, কটাক্ষের সুর তৃণমূলের গলায়। পাল্টা গ্রামবাসীদের দিয়ে পেটানো হবে সিপিএম নেতাকে,হুমকি দিয়েছে বিজেপি।


প্রাক্তন মন্ত্রী ও সিপিআইএম নেতা সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘এখন কারোর গায়ে যদি হাত পড়ে, সোজা গাঁয়ে যাব, ঘর থেকে তুলে এনে হাত-পা ভেঙে আমিই চিকিৎসা করাব ৷’’


 


একসময় তাঁর হুঙ্কারে বাঘে গরুতে একঘাটে জল খেত! এখন আর সেই রাজপাট নেই! কিন্তু, সুশান্ত ঘোষ যে বদলাননি তার প্রমাণ মিলল! সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে গিয়ে বিরোধীদের হাত-পা ভাঙার নিদান দেন সিপিএমের এই একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সুশান্ত ঘোষের কথায়, ‘‘মাওবাদীরা জানে সুশান্ত ঘোষ কে? তৃণমূল- বিজেপির বাপ ঠাকুরদারাও জানে, এতদিন যা করেছে, করেছে, আমি তো ছিলাম না, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারিনি, এখন কারোর গায়ে যদি হাত পড়ে, সোজা গাঁয়ে যাব, ঘর থেকে তুলে এনে হাত পা ভেঙে আমিই চিকিৎসা করাব ৷’’


ভাইরাল হওয়া ভিডিও প্রসঙ্গে প্রাক্তন পঞ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে মন্তব্যের কথা মেনে নেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, আগে ও পরের কথাগুলো কেটে দিয়ে ভাইরাল করেছে তৃণমূল ও বিজেপির আইটি সেল। সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘মামা শ্বশুরের বাড়ি গিয়েছিলাম, সেখানে সমর্থকরা আসেন, মারধরের অভিযোগ করেন, কেউ কেউ বলে কোমর ভেঙে দিয়েছে। তৃণমূল, বিজেপি, পুলিশ সঙ্গে থেকে মারধর করা হচ্ছে। তাঁদের মনোবল বাড়ানোর জন্য এই মন্তব্য করেছি। আগে আর পরের কথা গুলো কেটে দিয়ে মিথ্যে প্রচারের জন্য ভাইরাল করেছে।’’


 


২০১১ সালে পরিবর্তনের ঝড়ে যখন বিধ্বস্ত বাম, তখনও পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় সুশান্তের সাম্রাজ্যের পতন ঘটাতে পারেনি তৃণমূল। এরপর দীর্ঘদিন জেলবন্দি থাকতে হয়েছে তাঁকে। এবারের বিধানসভা ভোটে সিপিএম তাঁকে প্রার্থী করতে পারে বলে সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে ভোটের মুখে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে আক্রমণাত্মক সুশান্ত ঘোষ। তাঁর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই একহাত নিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। 


 


গড়বেতা ৩-এর তৃণমূল ব্লক সভাপতি রাজীব ঘোষ জানান, ২০১১-র আগে ওর অত্যাচার মানুষ জানে, আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাত্তা পাচ্ছে না, কর্মীরা বাম থেকে রামে চলে গিয়েছিল, রাম থেকে যখন ফেরাতে পারছেন না ,তখন আবোলতাবোল বলছেন, লাভ হবে না ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিজেপি সাধারণ সম্পাদক রাজীব কুণ্ডু জানান, ‘‘সুশান্ত ঘোষের অত্যাচার মানুষ দেখেছে, এরমধ্যে হুমকি দিলে আমাদের কর্মী সমর্থকরা এমন পেটান খাওয়াবে তখন উনি বুঝতে পারবেন। তৃণমূল মনে করেছে সুশান্ত ঘোষকে দিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস তৈরি করে ভোটে জিতবে।’’


 


গড়বেতার ৬ বারের সিপিএম বিধায়ক ৷ ২০১১-তেও সুশান্তের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকলেও, ক্ষমতা হাতবদল হতেই বেনাচাপড়া কঙ্কালকান্ডে গ্রেফতার হন তিনি। ২০১২ সালে জামিন মেলে, কিন্তু জেলায় ঢোকার ছাড়পত্র দেয়নি আদালত। গতবছর ডিসেম্বরের ৬ তারিখ সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্রে দীর্ঘ ৯বছর পর বাড়ি ফেরেন সুশান্ত ঘোষ।