কলকাতা: দরজায় কড়া নাড়ছে নির্বাচন। এপ্রিলের মধ্যেই রাজ্যে ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এমনই খবর। এরইমধ্যে ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলি ভোটের প্রচার ইতিমধ্যেই উচ্চগ্রামে নিয়ে গিয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচন থেকেই এ রাজ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের সূচনা হয়েছে। চমকপ্রদ সাফল্য পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বাম-কংগ্রেসের জায়গায় উঠে এসেছে বিজেপি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে টক্কর মূলত ক্ষমতাসীন তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যেই বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়াও রয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। এই পরিস্থিতিতে বাংলার মানুষ কী ভাবছেন? রাজ্য সরকারের কাজ নিয়ে তাঁরা কতটা খুশি? আগামী দিনে মসনদে কাকে দেখতে চান তাঁরা? বিধানসভা নির্বাচনে কোন দল ক’টি আসন পেতে পারে? এসব নিয়েই মানুষের মনের আভাস পেতে সমীক্ষা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমীক্ষক সংস্থা সি ভোটার।
সমীক্ষার ইঙ্গিত, শক্তি কমলেও ক্ষমতায় ফিরছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসই। তবে শক্তি অনেকটাই বাড়ছে বিজেপির। শক্তি হারিয়ে তৃতীয় শক্তি হতে চলেছে বাম-কংগ্রেস। সমীক্ষা অনুযায়ী, তৃণমূল কংগ্রেস ১৫৪ থেকে ১৬২টি আসন পেতে পারে। বিজেপির আসনসংখ্যা ৯৮ থেকে ১০৬ এর মধ্যে থাকতে পারে। বাম ও কংগ্রেস জোট বেঁধে পেতে পারে ২৬ থেকে ৩৪টি আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে মাত্র ২ থেকে ৬টি আসন। সি ভোটারের জনমত সমীক্ষায় সম্ভাব্য ফলের ইঙ্গিত অনুযায়ী, ২৯৪ সদস্য বিশিষ্ট রাজ্য বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
সমীক্ষার ইঙ্গিত অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনার মতে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী কে? এই প্রশ্নের উত্তরে, ৪৯ শতাংশই বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ১৯ শতাংশ তাঁকে যোগ্য প্রার্থী মনে করেছেন।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ভোটের লড়াইয়ে নামতে পারে বিজেপি, এমন একটা জল্পনা ছড়িয়েছিল। কিন্তু সেই সৌরভ এক্ষেত্রে রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী কে? এই প্রশ্নের উত্তরে ১৩ শতাংশ বলেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
মুকুল রায় – বলেছেন সাত শতাংশ। সুজন চক্রবর্তী - বলেছেন চার শতাংশ।
অধীর চৌধুরী – বলেছেন তিন শতাংশ।
অর্থাৎ, বাকিদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে মমতা।
নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর মধ্যে রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীও। সমীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার মতে কাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ভোটে লড়লে বিজেপির সাফল্যের সম্ভাবনা সবথেকে বেশি?
এর উত্তরে ৩৪ শতাংশ বলেছেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় । ১৫ শতাংশ বলেছেন দিলীপ ঘোষ, মাত্র ১২ শতাংশ বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী । এঁদের মধ্যে কেউ না বলেছেন ৩৯ শতাংশ।
রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে ওপিনিয়ন পোলের জন্য সমীক্ষা করা হয়েছে।
পুরুষ, মহিলা, তরুণ, প্রবীণ, বিভিন্ন পেশার মানুষ, সবার সঙ্গে কথা বলেছেন সমীক্ষকরা।
যাতে সমাজের সব অংশের মানুষের ভাবনার প্রতিফলন এই সমীক্ষায় ফুটে ওঠে।
গত ৬ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি অবধি এই সমীক্ষা চলেছে।
১৮ হাজারেরও বেশি মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের মনের ভাব জানার চেষ্টা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়াও, স্ন্যাপ পোলের জন্য সমীক্ষকরা রাজ্যের ৪২ টি লোকসভা কেন্দ্রের ৫ হাজার৩৩২ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের মতামত জেনেছেন।


৬ থেকে ১১ জানুয়ারি অবধি এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমীক্ষকরা তুলে এনেছেন খুঁটিনাটি তথ্য৷ তবে মনে রাখতে হবে, সমীক্ষা কোনও ভোটের ফলাফল নয়। শুধুমাত্র মানুষের মনের আঁচ পাওয়ার চেষ্টামাত্র। এর আগেও আমরা গত ১৫ বছরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভোটে আপনাদের সামনে সমীক্ষক সংস্থার রিপোর্ট এক্কেবারে হুবহু তুলে ধরেছি। আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে দু’টি সমীক্ষক সংস্থা-র সমীক্ষা রিপোর্ট দফায় দফায় আপনাদের সামনে আনব আমরা।