কলকাতা: আব্দুল মান্নান থেকে সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিম থেকে নেপাল মাহাতো - ভোটে হারলেন প্রত্যেকেই। বাম-কংগ্রেসের বড় মুখদের পরাজয়ের দিনে মান বাঁচালেন ছোটরা। ঐশী থেকে দীপ্সিতা, সৃজন থেকে প্রতীক উর, লড়াইয়ে নজর কাড়লেন।
বাংলার মার্কশিটে তৃণমূল ২১৩, বিজেপি ৭৭ আর সংযুক্ত মোর্চা ১। ভাঙড়ে আইএসএফ প্রার্থী জিতলেও, স্বাধীনোত্তর ভারতে এই প্রথম বঙ্গ বিধানসভায় কংগ্রেসের কোনও বিধায়ক রইল না। বামেদেরও। লজ্জার পরাজয়।
হুগলির চাঁপদানিতে হারলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। যাদবপুরে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী তলিয়ে গেলেন তৃতীয় স্থানে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ঘরের মাঠ বহরমপুরে পরাজিত বিধানসভায় কংগ্রেসের মুখ্যসচেতক মনোজ চক্রবর্তী। পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতে তৃতীয় নেপাল মাহাত। আলিপুরদুয়ারে জামানত বাজেয়াপ্ত হল প্রাক্তন সাংসদ দেবপ্রসাদ রায়ের।
শিলিগুড়ির মেয়র, প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, চণ্ডীতলায় সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম তৃতীয় স্থানে। রায়দিঘিতে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের হারের হ্যাটট্রিক।
রানিবাঁধে দেবলীনা হেমব্রম ও শালবনিতে সুশান্ত ঘোষের জামানত জব্দ হল। ইতিহাসে এই প্রথম বরকত গনি খান চৌধুরীর মালদা এবং অধীর গড় মুর্শিদাবাদ, কংগ্রেসকে শূন্য হাতে ফেরালো। একজনও বিদায়ী বিধায়কও জিতে ময়দান ছাড়তে পারলেন না!
বড় মুখদের ভরাডুবির দিনে কংগ্রেস-বামেদের তরুণ মুখদের লড়াই দাগ কাটল বাংলার মাটিতে। জামুড়িয়ায় ঐশী ঘোষ, বালিতে দীপ্সিতা ধর, সিঙ্গুরে সৃজন ভট্টাচার্য, কামারহাটিতে সায়নদীপ মিত্র, খড়দায় দেবজ্যোতি দাস, বর্ধমান দক্ষিণে পৃথা তা, ডায়মন্ড হারবারে প্রতীক উর রহমান - প্রত্যেকেই পরাজিত হলেও, জামানত বাঁচালেন!
তবে রক্তক্ষরণ অব্যাহত থেকে কার্যত রক্তশূন্য হয়ে পড়ল বাম-কংগ্রেস। ২০১৬-তে বাম-কংগ্রেস সমঝোতা করে লড়ে ৭৭টি আসন আর ৪০ শতাংশ ভোট পায়। ২০১৯-এ রক্তক্ষরণ অব্যাহত থেকে বামেরা ৭ ও কংগ্রেস ৫ শতাংশে নেমে আসে। আর ২০২১-এর মার্কশিট বলছে, বামেরা ৫ শতাংশ আর কংগ্রেস ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে!
বিধানসভায় বাম-কংগ্রেস অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ায় দুই দলকেই দোষারোপ করেছেন মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী বলেন, রাজনৈতিকভাবে সংঘাত থাকতেই পারে। কিন্তু কাউকে শূন্য দেখতে চাই না। বিজেপির কাছে ওরা নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছে। তারই ফল ভুগছে। দীপঙ্কর ভট্টাচার্যরা তো করেনি।
যুদ্ধে জয়-পরাজয় থাকবে। কিন্তু, এই বিরাট ধাক্কা বাম-কংগ্রেসের পক্ককেশ নেতারা কীভাবে সামাল দেবেন, সেটাই দেখার।