সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: ফুটবলের প্রতি এতটাই আবেগ যে নিজের বাড়ি বিক্রি করে গড়েছিলেন ফুটবল অ্যাকাডেমি। ফুটবলার জীবনে ছিলেন গোলরক্ষক। গোল বাঁচিয়ে রক্ষা করেছেন দলকে। কৃষ্ণনগরে না হলেও, এবার মানিকতলায় পদ্মফুল ফোটাতে চান কল্যাণ চৌবে।
গোলকিপার এবার নেমেছেন গোল করতে! তবে ফুটবলের ময়দান নয়, লড়াই রাজনীতির ময়দানে। লক্ষ্যভেদে চষে বেড়াচ্ছেন গোটা এলাকা। যাঁর কথা হচ্ছে তিনি ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবে। মানিকতলা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। দল নাম ঘোষণা করতেই, রীতিমতো আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন তিনি। পৌঁছে যাচ্ছেন ভোটারদের দরজায় দরজায়। আম আদমির সঙ্গে মিশে গিয়ে মন বোঝার চেষ্টা করছেন গেরুয়া শিবিরের ফুটবলার প্রার্থী।
মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে জানান, ‘‘এলাকার সমস্যা সামনে রাখতে চাই, বস্তির উন্নয়নের কথা বলছেন ৷’’ টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির প্রাক্তনী কল্যাণ মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, সালগাঁওকর, মহিন্দ্রার মতো প্রথম সারির দলে গোলরক্ষক ছিলেন। পাঁচবার সন্তোষ ট্রফি জয়ী কল্যাণ ছিলেন জাতীয় দলেও। ধারাভাষ্যকার হিসেবে বেশ নামডাক রয়েছে তাঁর। খেলার প্রতি এতটাই প্যাশন যে, ফুটবলার তৈরির তাগিদে নিজের দু’টি বাড়ি বিক্রি করে ওড়িশায় একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিও গড়েন কল্যাণ। এমন একজন ফুটবলারকে হাতের কাছে পেয়ে কচিকাঁচারা ছেঁকে ধরছে তাঁকে। একটাই আর্জি, খেলতে হবে তাদের সঙ্গে। জুনিয়রদের এই আর্জি শুনেই, আব্দার মেটাতে পা ছোঁয়াচ্ছেন বলে। প্রচারের ফাঁকেই ফুটবলে মেতে ওঠেন কল্যাণ।
খেলাচ্ছলে প্রচার সারলেও, বাস্তবে লড়াইটা কিন্তু যথেষ্ট কঠিন। কারণ, এই কেন্দ্রে যিনি কল্যাণের প্রতিপক্ষ, তিনি রাজনীতিতে রীতিমতো হেভিওয়েট ব্যক্তি। বিজেপি প্রার্থীর প্রতিপক্ষ ৮ বারের বিধায়ক বর্তমানে রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। সংযুক্ত মোর্চার সমর্থনে সিপিএমের হয়ে লড়াইয়ে নামা রূপা বাগচিও রয়েছেন লড়াইয়ে। তিনিও কলকাতার রাজনীতিতে যথেষ্টই পরিচিত মুখ, প্রাক্তন বিধায়ক। তবে খেলার মাঠে বহু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিজের দলকে জেতানোয় বড় ভূমিকা নেওয়া কল্যাণ অবশ্য এনিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন। কল্যাণ চৌবে বলেন, ‘‘ফুটবল মাঠে কিছু নিয়ম থাকে, রাজনীতির নিয়ম মানতে চাই, রাজনৈতিক কথা বলতে চাই, ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে চাই না ৷’’
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার ভোটযুদ্ধে নামলেও, তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের কাছে মাত্র ৬৩ হাজার ভোটে হেরেছিলেন তিনি। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে তিনটিতে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। তবে এবার আর নদিয়ার কোনও আসন নয়। লড়াইটা খাস কলকাতায়। তাঁর হয়ে আসরে নেমেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। প্রচার করছেন খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ চৌহান। ফুটবল মাঠে বারপোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে দেশ ও ক্লাবকে বহু ম্যাচ উতরে দিয়েছেন কল্যাণ। এবার মানিকতলায় কি পদ্ম ফোটাতে পারবেন তিনি? ২৯ এপ্রিল কি তাঁর দিকে হাওয়া ঘোরাতে পারবেন জনতার রায়? উত্তর মিলবে ২ মে।