কলকাতা: আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ চলছে যেমন, অশান্তি, হিংসার খবর উঠে আসছে এখনও। সেই আবহেই নির্বাচনী ফলাফল কী হতে পারে, তা নিয়ে সামনে  এল সি-ভোটা সমীক্ষা। তাতে যে প্রশ্ন অবধারিত ভাবে উঠে এসেছে, তা হল, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যালঘুরা কি তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন? অধিকাংশ মানুষ তেমনটাই মনে করছেন বলে জানিয়েছে সি-ভোটার সমীক্ষা।


সি-ভোটার সমীক্ষা অনুযায়ী, তৃণমূলেরর প্রতি সংখ্যালঘুদের সমর্থন কমতে পারে বলে মত অধিকাংশের। সি-ভোটার সমীক্ষার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৫২ শতাংশ ভোটার মনে করছেন, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মুখ ফেরাতে পারেন তৃণমূলের থেকে। যদিও ৩৮ শতাংশ ভোটারের মতে, তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। ১০ শতাংশ মানুষ এ নিয়ে কোনও মতামত জানাননি। 


খাতায়কলমে নথিবদ্ধ না হলেও, বিগত কয়েক বছরে বাংলার রাজনীতিতে সংখ্যালঘু ভোটের অন্যতম দাবিদার হিসেবে উঠে এসেছে তৃণমূল। এমনকি বাম শিবির থেকেও তৃণমূলের দিকে সমর্থন সরে আসার ইঙ্গিত মিলেছে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেই, যেখানে বামেরা শূন্যে নেমে যায়। তা নিয়ে বিরোধীরা, বিশেষ করে বিজেপি-র তরফে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তুষ্টিকরণের রাজনীতি করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিজেপি-র রাজ্যস্তরের নেতারা তো বটেই, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও রাজ্যে এসে তুষ্টিকরণের প্রশ্নে বার বার বিঁধেছেন তৃণমূলকে। 


তাতে যদিও তৃণমূলের ভোটবাক্সে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই সমীকরণ পাল্টাতেে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ বিধানসভা নির্বাচনে আত্মপ্রকাশ করা, বিধানসভায় মাত্র একটি আসন দখল করা ISF বর্তমানে তৃণমূলের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। মনোনয়নপর্বে যখন উত্তপ্ত ভাঙড়, মুহুর্মুহু বোমবাজি, গুলি চলছে, প্রাণহানির খবর আসছে, সেই সময় বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি সটান কলকাতায় ছুটে এসেছিলেন। মমতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সাক্ষাৎ না হওয়ার পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে তিনি যেমন সুর চড়িয়েছেন, তেমনই নৌশাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্বও।


এতদিন আরাবুল ইসলাম, সওকত মোল্লাদের দাপাদাপি ছিল যেখানে, সেখানে ইদানীং কালে ISF-এর সক্রিয়তা রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। ভাঙড়ে হিংসার ঘটনার নেপথ্যে তৃণমূলের একাংশ ISF-কে দোষারোপ করলেও, এর একটি অংশ আবার ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন দলীয় কর্মীদের। তার জেরে প্রকাশ্যে আবার ক্ষমাও চেয়ে নিতে দেখা গিয়েছে আরাবুলের ছেলে হাকিমুল ইসলামকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও ভূমিকা নেই বলে কার্যত সব দায় মাথাপেতে নিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পেরেই কি এই অভিব্যক্তি হাকিমুলের, অবধারিত ভাবে উঠছে প্রশ্ন। 


এখানে বিজেপি-র অবস্থানও বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। এ যাবৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নজর থাকলেও, পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে অবস্থান শিথিল করতে দেখা গিয়েছে তাদের। দু'দিন আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকাকে সরাসরি সংখ্যালঘুদের কাছে আর্জি জানাতে দেখা যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, "আমাদের একবার সুযোগ দিন। আমরা মানুষের পঞ্চায়েত করব। ধর্ম-বর্ণ দেখে নয়। গ্রামসভা ডেকে আবাস দেব। সভায় বিজেপির পতাকাও রাখব না। যদি না কথায় কাজে মিল থাকে, তাহলে আর আপনাদের সামনে ২৪-এ আসব না।" 


তাতেই সংখ্যালঘু ভোট এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতিতে  অন্যতম বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে কার্যত একচেটিয়া আধিপত্য তৃণমূলের। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই ভোট নিজেদের দিকে টানতে এবার তৎপর হয়েছে সব দলই। তাতেই তৃণমূলের একচেটিয়া আধিপত্য কমতে পারে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সি ভোটারের সমীক্ষাতেও মিলল তেমনই ইঙ্গিত। তবে গোটাটাই অনুমান, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সাধারণ মানুষই।