কলকাতা: যাঁর চরিত্রে অভিনয় করতে হবে, তিনি ফুটবলের প্রবাদ পুরুষ। হাতে সময় মাত্র তিন মাস। ফুটবলের অ-আ-ক-খ শেখা শুরু করলেন তিনি। পায়ের আঙুল ভেঙেছে, চোট পেয়েছেন একাধিকবার। রোজ ভোরে উঠে ফুটবলের অনুশীলন, পাশাপাশি শিখতে হয়েছে কুস্তিও। লড়াই থামেনি। কিন্তু এই সবকিছুর থেকে কঠিন ছিল, অভিনেতা দেবকে ভেঙে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী হয়ে ওঠা।


ফুটবলেরও একাল সেকাল রয়েছে। পর্দায় সেই সময়ের মত করে ফুটবল খেলা কতটা কঠিন ছিল? এবিপি লাইভকে দেব বলছেন, 'প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ছবিটাকে হ্যাঁ বলা। আমরা ছবির মধ্যে ১৮৭০ সাল থেকে ১৮৯০ সালের পরিবেশটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তখনকার মানুষদের হাঁটাচলা, কথা বলা, দাঁড়ানো এমনকি ফুটবল খেলার ধাঁচটাও অন্যরকম। সেসময় গায়ের জোরে ফুটবল খেলা হত। আর দেব এই চরিত্রটায় ভুল করতে পারে না। পর্দায় যেন দেবকে দেবের মত দেখতে না লাগে, নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীই লাগে, এটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আমার জন্য। আর হ্যাঁ, ফুটবল, কুস্তি দুটো শিখতেই সময় লাগে।' 


শুধু ফুটবল শেখা নয়, পর্দায় ধুতি পরে ফুটবল খেলতে হয়েছে দেবকে। অভিনেতা বলছেন, 'ধুতি পরলে সাবলীলভাবে পা ফেলা যায় না। বিষয়টা বেশ কঠিনই ছিল। তবে সেসময় কিন্তু বাঙালিরা ধুতি পরেই ফুটবল খেলত। খালি পায়ে ধুতি পরে ফুটবল খেলতে হয়েছে। আর হ্যাঁ, সত্যিই ফুটবলটা খেলতে হয়েছে। মাথায় ছিল, দর্শকের যাতে মনে না হয় যে অভিনয় করছি না, খেলছি। ট্রেলার, গান দেখে দর্শকরা ভালো বলছেন, আমাদের পরিশ্রমটা বুঝতে পারছেন। এর থেকে ভালো অনুভূতি আর কিছু হতে পারে না।'


সদ্য মুক্তি পেয়েছে 'গোলন্দাজ' ছবির নতুন গান 'বন্দে মাতরম'। রুপোলি পর্দায় এই গানকে তুলে ধরার গুরুদায়িত্ব পালন করছেন বিক্রম ঘোষ। পর্দায় নিজেকে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী হিসেবে দেখার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? দেব বলছেন, 'আমার কেমন লাগছে তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল দর্শকদের কেমন লাগছে। যখন শ্যুটিং করেছি, প্রতিটা গান অনুভব করেছি, নিজের গায়ে কাঁটা দিয়েছে। আজ, যখন গানগুলো মুক্তি পাচ্ছে, মানুষ দেখে বলছে, সত্যিই মনে হয়েছে সেই সময়ে পৌঁছে গিয়েছি, সেই ভালোলাগাটা আলাদা।'


পর্দায় চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব তো সব ছবিতেই থাকে। কিন্তু এই ছবিতে ইতিহাসতে ফুটিয়ে তুলেছেন দেব। গুরুদায়িত্ব? দেব বলছেন, 'অবশ্যই। এমন একটা ইতিহাসকে তুলে ধরছি, যেটা কেউ জানে না। একজন বাঙালি, ময়দানের মতো মাঠে যে ফুটবল শুরু করেছিল, তাঁর কথা বলছি দর্শককে। যে ময়দানে ভারতীয়রা গেলে চাবুক মারত ইংরেজরা, সেখানে ওয়েলিংটন ক্লাব খুলেছিলেন নগেন্দ্রপ্রসাদ। তখনকার দিনে এর থেকে বড় সাহস আর কিছু হতে পারে না। ওঁনার অধিনায়কত্বেই শোভাবাজার রাজবাড়ির টিম প্রথমবার ইংরেজদের হারায়। এই ঘটনাকে তুলে ধরতে গেলে পড়াশোনা করতে হয়। তবে আমার কাছে সেরা প্রশংসা, সবাই বলছেন, দেবকে দেব বলে মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে নগেন্দ্রপ্রসাদ। এমনই দেখতে ছিল ওনাকে।'