কলকাতা: বিনয়, বাদল, দীনেশ (Binay-Badal-Dinesh)। বাঙালি মাত্রেই এই তিন নামের সঙ্গে সকলে পরিচিত। সেই তিন তরুণের বীরগাঁথাই এবার ক্যামেরাবন্দি করেছেন পরিচালক অরুণ রায় (Arun Roy)। ২৬ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে '৮/১২' (8/12)। ছবিতে দীনেশ গুপ্তের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রেমো (Remoo)। এবিপি লাইভের  (ABP Live) জন্য বের করলেন সময়, এক্সক্লুসিভ আড্ডায় জানা গেল ছবি নিয়ে অনেক কথা।


প্রশ্ন: বড়পর্দায় এর আগে পার্শ্ব চরিত্রে আপনাকে দেখা গেছে। মূল চরিত্রে অভিনয় এই প্রথম। শুরুতেই এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। অফার পেয়ে প্রথম কী প্রতিক্রিয়া ছিল?
রেমো: প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি যে এমন একটা গুরুদায়িত্ব আমার কাঁধে দেওয়া হবে। অরুণ দা (অরুণ রায়) এমনই একজন বড় মাপের পরিচালক, তাঁর 'এগারো' দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। যখন ওই ছবিটি মুক্তি পায় তখন আমি মোহনবাগান জুনিয়র খেলি। মোহনবাগান নিয়ে এত সুন্দর একটা ছবি যিনি বানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কখনও কাজ  করতে পারব কি না, সেটা ভাবতাম। তখন আমরা বন্ধুরা মিলে থিয়েটারও করি। এরপর যখন ওঁর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়ে তখন বলেছিলেন, 'একদিন এসো, একটা জিনিস ভাবছি তোমাকে নিয়ে করব।' গিয়ে দেখি, ভাবাভাবির ব্যাপারই নেই। অরুণ দা ঠিকই করে নিয়েছিলেন যে আমিই দীনেশ করব। ওঁর মতে আমার চাল-চলন, কথাবার্তার সঙ্গে দীনেশ গুপ্তের মিল আছে। তবে এটা সত্যিই শ্যুটিং শুরু হওয়া বা ট্রেলার লঞ্চ হওয়া পর্যন্তও আমি সত্যিই বিশ্বাসই করতে পারিনি। 


প্রশ্ন: অরুণ রায়ের সঙ্গে প্রথম আলাপ কীভাবে?
রেমো: অরুণ দার সঙ্গে খুব আচমকাই আলাপ হয় আমার দাদার সূত্রে। তাঁর মাধ্যমেই যোগাযোগ করি। অরুণ দা আমাকে ডেকে পাঠান। আমি মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে ভালবাসি, এটা আমার একটা বদ অভ্যাস বলতে পারেন। তো আমি সেখানে গিয়েও ওঁর চোখ থেকে চোখ সরাইনি। সেটা হয়তো কোনওভাবে প্রভাব ফেলেছিল। তবে এমন চরিত্রে আমার মতো নতুন ছেলেকে একটা এমন চরিত্রে কাস্ট করা, সেটা সত্যিই বড় ব্যাপার। 


প্রশ্ন: এর আগে বড়পর্দায় কী কী কাজ করেছেন?
রেমো: 'বক্সার' বলে একটি ছবিতে আমি কাজ করেছি এর আগে। পার্শ্ব চরিত্রে। 'চৌধুরী রাজবাড়ি' বলে একটি সিনেমাতেও পার্শ্ব চরিত্রে কাজ করেছি। তবে মুখ্য চরিত্রে কাজ প্রথমবার। ডেবিউ বলা যেতে পারে। এই ছবির জন্য তাই অরুণ দার সঙ্গে প্রযোজক কান স্যরকেও (কান সিং সোধা) অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। অত বড় মাপের প্রযোজক হওয়ার আগেও কান স্যর একজন বড় মাপের মানুষ। এরকম একটা চরিত্রে আমার ওপর আস্থা-ভরসা রাখা, এবং এই ধরনের ছবি প্রযোজনা করার যে সাহস দেখিয়েছেন সেটাকে কুর্নিশ জানাই। আমি মুম্বইয়ে 'রেড চিলিজ এন্টারটেনমেন্ট', বা জি ফাইভ-এর মতো সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু কান স্যরের মতো প্রযোজক আমি অন্তত কখনও দেখিনি।


প্রশ্ন: অরুণ রায় আপনাকে দীনেশ হিসেবে কল্পনা করে ফেলেছিলেন। কিন্তু আপনি নিজেকে কীভাবে তৈরি করলেন?
রেমো: আমাকে জানেন তো, ছবির স্ক্রিপ্টটা চেয়ে নিতে হয়েছিল। যতবার চেয়েছি যে অরুণ দা স্ক্রিপ্টটা দেবেন না। ততবার বলতেন, 'আরে স্ক্রিপ্ট নিয়ে কী করবি?' এতবড় চরিত্রের জন্য স্ক্রিপ্টটা পাব না? জিজ্ঞেস করলে তখন বলতেন, যে যা বলব তাই করবি, কিচ্ছু লাগবে না। শ্যুটিং চলাকালীন, অন সেট আমরা সংলাপ ইম্প্রোভাইস করতাম। মানে স্ক্রিপ্টে হয়তো দু'লাইন আছে, শ্যুটিংয়ে দেখলাম সেটাই চার লাইন হয়ে যাচ্ছে। এবং সিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেই সংলাপগুলো সেটে বসে লেখা হত। অর্ণ দা বা কিঞ্জল দা লিখত সেগুলো। আমরাও সাহায্য করতাম। অরুণ দা একজন শিক্ষক। আমার কাছে তো ঠিক যেন পাশের বাড়ির জ্যেঠুর মতো। মানে পিতৃতুল্য। অরুণ দা অভিনেতাদের স্বাধীনতা দিতে জানেন। মানে এই যে শ্যুটিং করা, ট্রেলার লঞ্চ, ছবি রিলিজের সময় চলে এল এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না, গোটাটা এত স্মুদলি হয়েছে।


প্রশ্ন: চরিত্রটা পর্দায় ফুটিয়ে তোলা কতটা কঠিন ছিল?
রেমো: সত্যজিৎ বাবু একটা শব্দ ব্যবহার করতেন, 'ম্যাজিক'। ওই ম্য়াজিকটা আনাই অরুণ দার কৃতিত্ব। আগেই যেমন বললাম যে স্ক্রিপ্ট পড়তে বারণ করতেন। খালি বলতেন, যে তোর যতটুকু পড়ার বা জানার দরকার ততটুকুই পড়। পরিচালক চাইতেন আমি আমার মতো করে দীনেশ গুপ্তকে তুলে ধরি। আমি দীনেশ গুপ্তর বাড়ির লোকের নম্বর জোগাড় করে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওঁরাও ভীষণ সাপোর্ট করেছেন। এবং তাঁদের থেকে যে তথ্য আমি পাচ্ছি সেগুলো দেখছি অরুণ বাবু স্ক্রিপ্টে অলরেডি রয়েছে। মানে এতটাই পড়াশোনা করে স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন তিনি। ফলে স্নান-খাওয়া বন্ধ করে পড়াশোনা করতে আমাকে হয়নি। অরুণ দা যেভাবে বলেছেন সেভাবেই এগিয়েছি। এরপর বাকি সিদ্ধান্ত তো দর্শকেরা নেবেন। 


প্রশ্ন: শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
রেমো: আমার যেহেতু কিক-বক্সিং খানিক জানা তাই আমার লাফাতে ঝাঁপাতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। এই ছবিতে তাই অ্যাকশন সিক্যোয়েন্স দারুণ শ্যুট করেছি। আমাদের অ্যাকশন ডিরেক্টর ভীষণ সাপোর্ট করেছেন। বারবার জিজ্ঞেস করেছেন আমরা করতে পারব কি না, অসুবিধা হচ্ছে কি না। অ্যাকশনটা ভীষণ সুন্দর করে কোরিওগ্রাফ করা হয়েছে, সেটা দেখার মতো। একটা সিনে একসঙ্গে ৪০টা গুলি ফাটছে। এবং সেই সেটটা আর একবার তৈরি করা যাবে না। মানে একবারে শট 'ওকে' না হলে টাকা ও সময় দুইই ব্যয় হবে। মানে ৪০টা গুলি সেট করতে মোটামুটি দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। তো এমন বহু সিন 'ওয়ান শট ওকে' করতে হয়েছে। তাতে অর্ণ দার চোখের তলায় লেগেছে, আমার হাতে লেগেছে, কিঞ্জল দার আওয়াজে একটু ভয় লাগে তাও সাহস দেখিয়ে করেছে। সকলের মিলিত চেষ্টায় আশা করছি দর্শকদের ভাল কিছুই দিতে পারব।


আরও পড়ুন: Arna Mukhopadhyay Exclusive: ছবির শেষ দৃশ্যের শ্যুটিংয়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না কখনও: অর্ণ