কলকাতা: সদ্য কোভিড সংক্রমণমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর ছোট্ট ইউভান কাছে পেয়েছে মা-কে। অন্যদিকে শেষ নির্বাচনী লড়াই। আগামীকাল ব্যারাকপুরের বিধায়ক হিসাবে শপথ নেবেন স্বামী রাজ চক্রবর্তী। কঠিন সময় কাটিয়ে উঠলেও ব্যস্ততা কাটেনি নায়িকার। রাজ বাড়িতে নেই, ইউভানের সময় অনুযায়ী বাকি কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে। তার ফাঁকেই সময় দিলেন এবিপি লাইভ-কে। করোনা যুদ্ধে জেতার পরে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম সাক্ষাৎকার।


 


প্রশ্ন: রাজ প্রচারের কাজে বাইরে। ছোট্ট ইউভান বাড়িতে, কিন্তু তার কাছে যাওয়ার উপায় নেই। করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকতে হয়েছে আইসোলেশানে। কতটা উদ্বেগের মধ্যে কেটেছে দিনগুলো?


শুভশ্রী চক্রবর্তী: সত্যি! খুব কঠিন একটা সময় পেরিয়ে এসেছি। কিন্তু আমি সবসময় চেষ্টা করি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে। যখন যে পরিস্থিতিতে থাকি, চেষ্টা করি তার ভালো দিকগুলো ভাবার। করোনা পরিস্থিতি আমায় শেখালো, খারাপ সময়ে কী করে বাড়ির সদস্যদের মানসিকভাবে চাঙ্গা আর সুরক্ষিত রাখা যায়। একটা ঘরে বসেই আমি গোটা পরিবারটাকে সামলাতাম। তবে হ্যাঁ, ইউভানকে ভীষণ, ভীষণ মিস করেছি। কোভিডের থেকেও সেটা অনেক বেশি কষ্টের ছিল আমার কাছে। তবে ইউভান খুব সাপোর্ট করেছে আমায়। ও সব বোঝে। দূর থেকে আমাকে দেখত, হয়ত অভিমান করত। ভাবত কেন মা  আমাকে কাছে নিচ্ছে না। কিন্তু একবারের জন্যও কাঁদেনি কোনওদিন। বুঝতে দিত না ও আমায় ছাড়া খারাপ আছে। একেবারে বাবার মত সংবেদনশীল।


 


প্রশ্ন: রাজকে পরিচালক হিসাবে পেয়েছেন। স্বামী হিসাবে, বন্ধু হিসাবে পেয়েছেন। এবার রাজ চক্রবর্তী রাজনৈতিক নেতা। নতুন ভূমিকা নিয়ে কতটা আশাবাদী?


শুভশ্রী: আমার উত্তরটা শুনে মনে হতে পারে পক্ষপাতিত্ব করছি। (হাসি) তবে রাজ একজন ছেলে হিসাবে, স্বামী হিসাবে, বাবা হিসাবে আবার পরিচালকের ভূমিকাতেও এক্কেবারে পারফেক্ট। এবার ও একজন রাজনৈতিক নেতা। রাজ যা করে, সবটাই মন থেকে করে। কাজের প্রতি সৎ থেকেছে সবসময়। সেইজন্য ওর জয় নিশ্চিত। প্রথম দিন থেকে আমি জানতাম ও জিতবেই। তৃতীয়বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের মুখ্যমন্ত্রী হলেন। আর রাজের জীবনের একটা নতুন অধ্যায় শুরু হল।


 


প্রশ্ন: বিধায়কের স্ত্রী, কতটা দায়িত্ব বাড়ল?


শুভশ্রী: রাজ এখন ব্যারাকপুরে। ওখানকার মানুষদের জন্য সেফ হোম থেকে শুরু করে হাসপাতালে কোভিড বেড বাড়ানো, অক্সিজেন, বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দেওয়া, বয়স্ক মানুষদের ওষুধ পৌঁছে দেওয়া এই সমস্ত কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এগুলোই আমাদের সাফল্য উদযাপন। তবে হ্যাঁ, নির্বাচনী প্রচারে রাজ যখন ব্যারাকপুরে যেত, আমায় একটা কথা বলেছিল। বলেছিল, ‘নির্বাচনে জিতি বা হারি, এখানে প্রচুর বাচ্চা আছে যাদের জন্য কাজ করতে হবে। আমায় সেই দায়িত্ব দিয়েছিল রাজ। সেটা আমি অবশ্যই পূরণ করব। কোভিড পরিস্থিতিটা একটু স্বাভাবিক হোক..


 


প্রশ্ন: রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর রাজকে অনেক কটাক্ষ শুনতে হয়েছে। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতে মানুষদের সাহায্য় করতে গিয়েও কটুক্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন। এইসব পরিস্থিতিতে একজন স্ত্রী হিসাবে কীভাবে রাজের পাশে থাকেন?


শুভশ্রী: আমি আর রাজ দুজনেই ইতিবাচক দিকটা নিয়ে থাকতে ভালোবাসি। আমি নিজে দেখেছি ভোর থেকে উঠে রাত ১টা-২টো পর্যন্ত রাজ অসুস্থ মানুষদের ফোন করে তাঁদের থেকে জেনেছে কার কী সাহায্য লাগবে। সেইমত ব্যবস্থা করেছে। আর সেটা রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরে নয়, তার আগের কথা। গতবছর লকডাউনের সময় আমরা হালিশহরের ৫০০০ পরিবারকে রেশন দিয়েছিলাম। আমফানের সময় খাবার, ওষুধ সহ প্রচুর প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠিয়েছিলাম সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য। এতেই আমাদের আনন্দ। যারা আমাদের নিয়ে খারাপ কথা বলে আমার তাঁদের কথা ভেবে খারাপ লাগে। একটা মানুষের কতটা হতাশা আসলে সে কারও প্রোফাইল খুঁজে বের করে কেবল কটুক্তি করার জন্য। তবে আমি আরও কটা কথা যোগ করতে চাই। লক্ষ্য করলে দেখবেন, কোভিড হোক বা আমফান, যে কোনও দুঃসময়ে রুপোলি পর্দার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করার জন্য, সেটা বোধহয় সবাই করে না। কিন্তু সবথেকে বেশি খারাপ কথা শুনতে হয় আমাদেরই। সবাই বলে, এরা তো শুধু মুখে মেক আপ করে ঘুরে বেড়াতে পারে!


 


প্রশ্ন: রুপোলি পর্দার অভিনেত্রীকে কি ভবিষ্যতে রাজনীতির মঞ্চে দেখা যাবে?


শুভশ্রী: আমি এখন রাজনীতির কথা ভাবছিই না। তবে মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসি। তাই রাজের সাহায্যে অবশ্যই মানুষের জন্য কাজ করব। আর হ্যাঁ, মন দিয়ে সিনেমাটাও করব।