কলকাতা: ছোটবেলার নস্ট্যালজিয়া মোড়া দার্জিলিং, একগুচ্ছ উঠতি প্রতিভা আর একটা খুন। প্রথম ওয়েবসিরিজে পাহাড় ঘেরা শহরে একটা রহস্যের গল্প বুনলেন পরিচালক। ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন অভিনেতা হতে, কিন্তু খ্যাতি পেলেন সুরে-গানে। তারপর পরিচালনা। কেমন ছিল সেই যাত্রাটা? ওটিটি প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব, বর্তমান বিনোদন জগতের পরিস্থিতি, এবিপি আনন্দে অকপট অঞ্জন দত্ত।


প্রশ্ন: অভিনয় দিয়ে কেরিয়ার শুরু, তারপর গান, তারপর পরিচালনা। পিছন ফিরে দেখলে এই যাত্রাটা কেমন লাগে?


অঞ্জন দত্ত: আমি পরিচালনা বা গান কোনওটাই করতে চাইনি। অভিনয় করতে চেয়েছিলাম। যখন বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমি আমার কাঙ্খিত জায়গাটায় পৌঁছতে পারছি না, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম পেশা বদলাব। অভিনয় করব না তাহলে পরিচালনাই করব। কিন্তু হঠাৎ করে তো পরিচালনায় যাওয়া যায় না। তার মাঝখানে আমি গান গাইলাম। কিন্তু সেই গানটাই এতটা জনপ্রিয়তা পেয়ে যাবে বুঝিনি। আমি সবসময় মূল ধারার, পপুলিস্ট ছবিতে ভালো অভিনয় করতে চেয়েছি। কিন্তু আমায় যখন ২১-২২ বছর বয়স, তখন বাংলায় যেমন চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছিল সেখানে আমি ঠিক খাপ খাচ্ছিলাম না। আমি নিজেও আমার অভিনয় মেলাতে পারছিলাম না। বর্তমানে অনেক অন্যরকম কাজ হচ্ছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে। আমার বয়স যদি এখন ২৫-২৬ হত, তাহলে এখন আমি অভিনয়টা করতে পারতাম। গান দিয়ে আমি প্রথম জনপ্রিয়তা পেলাম, শ্রোতা পেলাম। সেটাই আমায় পরিচালনায় সাহায্য করল। আমার গানের শ্রোতাই আমার সিনেমার দর্শক। এই বুড়ো বয়সে এসে আবার অনেক পরিচালক আবার আমার জন্য চিত্রনাট্য লিখছেন। সেটা করছি তবে এখন পরিচালনার কাজটাই করতে বেশি ভালো লাগছে। আমার মতো করে চরিত্র তো খুব বেশি লেখা হচ্ছে না। তাই পরিচালনাতেই নিজেকে বেশি করে খুঁজে পাচ্ছি।  


প্রশ্ন: করোনা পরিস্থিতির পর ওটিটি একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিনোদনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উঠে এসেছে। ভবিষ্যতে ওটিটি কি রুপোলি পর্দার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে?


অঞ্জন: প্রতিদ্বন্দ্বী হবে কি না জানি না, তবে অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নেবে। কোভিড না আসলেও ওয়েব প্ল্যাটফর্মটা গুরুত্বপূর্ণ হত। এই সময়ে হয়তো মানুষ একটু বেশি দেখছে। কিন্তু সিনেমা হল খুলে গেলেও মানুষ ওটিটিতে সিরিজ দেখবে। এই প্ল্যাটফর্মটার যেমন কিছু অসুবিধা রয়েছে, তেমন সুবিধাও রয়েছে। নতুন জিনিস আমায় খুব আকর্ষণ করে, ভালো লাগে। আমি সেই মানুষটা নই যে সেলুলয়েড চলে গেল বলে কাঁদতে বসব। তবে ওয়েবটা খুব চ্যালেঞ্জিং আর শক্তও বটে।


প্রশ্ন: নিজে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলে নতুন অভিনেতা হিসাবে। এখনও অনেক নতুন মুখেরা ইন্ডাস্ট্রিতে আসছেন। সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সেই সময় আর এই সময়ের মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে?


অঞ্জন: অবস্থাটা মোটামুটি একই রকম আছে। কিন্তু ৮০-র দশকে বাংলা সিনেমা যেভাবে পিছিয়ে পড়েছিল, তার থেকে অনেকটা সাবলীল হয়েছে এখন। শিক্ষিত মানুষ যখন সিনেমা করতে এল, বাংলা ছবি অনেকটা বদলাল। ইন্ডাস্ট্রি এখন নতুন মুখ খুঁজছে। একজন পরিচালক এখন সিনেমা করার সময় ভাবেন, একজন পুরনো মুখের সঙ্গে একজন নতুন মুখকে নিয়ে আসি। সেই ভাবনা থেকেই নতুনরা তুলনামূলকভাবে বেশি সুযোগ পাচ্ছেন। তবে স্ট্রাগেলটা একইরকম আছে। অভিনয় দিয়েই নিজেদের প্রমাণ করতে হবে সবাইকে। আমার কিন্তু খুব ভালো লাগে এই ব্যাপারটা। যখন ম্যাডলি বাঙালি বা চলো লেটস গো করতে গিয়েছি, নতুন মুখদের নিয়ে প্রযোজকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে। এখন তাঁরাও নতুন মুখ চাইছে। মনে হচ্ছে, নতুনদের তুলে ধরার লড়াইটায় আমি একা নই।


প্রশ্ন: সন্দীপ্তা সেন থেকে শুরু করে অর্জুন চক্রবর্তী, রাজদীপ, সবাই একবাক্যে বলছে, 'অঞ্জনদার সঙ্গে কাজ করা একটা ওয়ার্কশপের মতো। আপনার চোখে পরিচালক অঞ্জন দত্ত কেমন?


অঞ্জন: আমি যখন অভিনেতা হিসাবে কাজ করেছি, সবসময় পরিচালকেরা আমায় কিছু কিছু শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। একজন বড় হিসাবে, একজন অভিনেতা হিসাবে আমি সবসময় চাইব আমার ছোটরা আমার থেকে কিছু শিখুক। আমি কেবল চিত্রনাট্য লিখে, কিছু ডায়লগ মুখস্থ করিয়ে, লেন্সটা দেখিয়ে দিয়ে অ্যাকশান কাট বলার লোক আমি নই। আমি বার বার একসঙ্গে বসা, ছবি দেখানো, আলোচনা করা, বিভিন্ন সেশন করায় বিশ্বাসী। এটা শুধু অভিনেতা অভিনেত্রীদের জন্য নয়, গোটা টিমের জন্যই।


প্রশ্ন: যদি টাইম মেশিনে করে পুরনো সময়ে ফিরে যেতে পারতেন, কোন কাজটা করতে চাইতেন?


অঞ্জন: আমি কোনও কাজের পুনরাবৃত্তি করতে চাইতাম না। তবে মেশিনটা যদি টাইম মেশিন না হলে আমার বয়সটা হঠাৎ কমিয়ে ২৫ করে দিতে পারে, তাহলে এই সময়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে একজন জনপ্রিয় অভিনেতা হিসাবে প্রমাণ করতাম। ৮০-র দশকে যেটা আমি পারিনি। এখন বয়সটা ২৫ হয়ে গেলে, আমি খ্যাতির অর্থটা বদলে দিতে পারতাম।