কলকাতা: বাংলা সিনেপ্রেমীদের কাছে অতি পরিচিত এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধা-পছন্দের নাম পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেক ছবিতে তাঁর অনবদ্য অভিনয় মন কেড়েছে দর্শকদের, বারবার। আর এবার দর্শকদের মন জয় করতে আসছে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'গার্লফ্রেন্ড'। মানে? বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে তাঁর নাতনি, পৃথা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিচালক অর্ণব মিদ্যার পরিচালনায় 'সেদিন কুয়াশা ছিল' ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে দাদু ও নাতনিকে।
বয়স ৬-এর কোঠা পেরিয়ে ৭ এখনও ছোঁয়েনি। তবে এবিপি লাইভকে ফোনে 'দাদু' পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'তার শাসনের বহর আর কথার ফুলঝুরিতে বোঝার উপায় নেই বয়স কত। আমার সঙ্গে সারাক্ষণ তার হয় ঝগড়া নয়তো খুনসুটি চলতেই থাকে।'
প্রথম ছবিতে কেমন পারফর্ম্যান্স নাতনির? হাসতে হাসতে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তর, 'ও তো অভিনয় করবে বলে কোনও ঠিক ছিল না। অর্ণব (পরিচালক) এই ছবি নিয়ে কথা বলতে একদিন আমার বাড়িতে আসে। সেখানে গিয়ে আমার 'গার্লফ্রেন্ড'ও হাজির। গল্পে ওর বয়সেরই এক শিশুর প্রয়োজন ছিল। আমার নাতনিকে দেখেই অর্ণব বলে যে 'আমি তো এরকমই শিশু চাইছিলাম। আপনি যদি অনুমতি দেন।'
পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'অভিনয় করায় আমার কোনও আপত্তি নেই। যে যত অভিনয় করতে চাইবে আমার সবেতে "হ্যাঁ" থাকবে। তবে আমার নাতনি কাজ করবে কি না সেটা ওর মা-বাবা সিদ্ধান্ত নেবে। সেটা অর্ণবকে বলি। শেষ পর্যন্ত কথা হয়, কাজ হয়। অভিনয় ভালই করেছে। ভালই লাগবে মনে হয়।'
পরিচালকের সঙ্গে না কি প্রথম আলাপেই বেশ ভাব জমিয়ে ফেলেছিল খুদে পৃথা। দাদুর কথায়, 'ইউটিউব দেখে নিজে নিজেই কীসব খুঁজে বের করে দেখে। প্রথম কারও সঙ্গে আলাপ হলেও তার সঙ্গে ভাব করে নিতে পারে সহজেই। আর অবশ্যই আমাকে তো শাসনে রাখেই। আবার ওর রাগ-দুঃখ হলে, কোনও কথা যদি শুনতে না চায়, সেক্ষেত্রেও আমিই ওকে বুঝিয়ে রাজি করাতে পারি।'
ছবি সৌজন্য: অর্ণব মিদ্যা
পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদর করে খুদেকে 'গার্লফ্রেন্ড' বলেই ডাকেন। বাড়িতে মাঝে মাঝেই নাকি তাদের অভিনয়ের আসর বসে। দাদু-নাতনিতে মিলে চলে সংলাপ আদান প্রদান। পুঁচকে নাতনি নিজেই তৈরি করে সেই গল্পের প্রেক্ষাপট ও স্ক্রিপ্ট। সেই অনুযায়ী চলতে থাকে অভিনয়।
পরিচালক অর্ণব মিদ্যার কেমন অভিজ্ঞতা পৃথাকে নিয়ে কাজ করার? 'প্রথম পরাণ জেঠুর (পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়) বাড়িতে গিয়ে পৃথাকে দেখে ওর ছটফটে ব্যাপারটা নজরে পড়ে। কথায় কথায় জানতে পারি দাদুর সঙ্গে রীতিমতো অভিনয়ের চর্চা করে। একদিন ওঁদের বাড়িতে ঢুকে দেখি দাদু আর নাতনি প্রবল ঝগড়া করছে। তুলকালাম। আমি থতমত খেয়ে গেছি। তারপর দেখি ওর মা হঠাৎ হেসে ফেলেছে। তখন বুঝলাম গোটাটাই আমাকে দেখিয়ে অভিনয় চলছিল। বাচ্চাটির কথার ধরনে একবারের জন্যও মনে হয়নি যে ওটা সত্যি ঝগড়া নয়। এরপর ক্যামেরার সামনে ওর অভিনয় দেখলে তো চোখ কপালে উঠবে। ওর এক্সপ্রেশন এক কথায় দুর্দান্ত।'
ছবি সৌজন্য: অর্ণব মিদ্যা
ছবি সৌজন্য: অর্ণব মিদ্যা
অর্ণব জানাচ্ছেন, প্রথমবার ক্যামেরার সামনে আসায় প্রথমে খানিকটা জড়তা ছিল। প্রথমদিন একটু কান্নাকাটিও করেছিল শ্যুটে আসতে। তবে ধীরে ধীরে সেটের সকলের সঙ্গে ভাব হয়ে যাওয়ায় সাবলীল হয়ে যায় পৃথা। অভিনয় মন দিয়ে করতে থাকলে পৃথা অনেক দূর যাবে, মত পরিচালকের।
তবে অর্ণব মিদ্যায় তুলনায় তো নতুন পরিচালক। এটি তাঁর দ্বিতীয় ফিচার ছবি। তাঁর ছবিতে মেয়ের প্রথম অভিনয়ে রাজি হলেন কেন পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়? তাঁর কথায়, 'পৃথা ছোট থেকেই খুব এনার্জেটিক এই সমস্ত ব্যাপারে। অভিনয় হোক, বা নাচ বা গান। সব কিছুই খুব তাড়াতাড়ি রপ্ত করতে পারে। এছাড়া ছোট থেকে ওর 'দাদাই' (দাদু, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়)কে দেখছে। এছাড়া ও খুব ভাল মিশে যায় সকলের সঙ্গে। অর্ণবের সঙ্গেও খুব তাড়াতাড়ি ভাব করে ফেলে। এই ছবির চরিত্রটির সঙ্গে একেবারে মিলে যায় পৃথা। ফলে রাজি হয়ে যাই।'
কিন্তু এরপর? যদি আবার ছবির ডাক পায় মেয়ে, ছাড়বেন? পার্থ বাবুর কথায়, 'পড়াশোনা তো আবশ্যিক। চেষ্টা করব দু'টোকে ব্যালেন্স করে যতটা করানো যায়। যদি অভিনয় করতে ও পছন্দ করে তাহলে তো সমস্যা কিছুই নেই। পড়াশোনা ও অভিনয় একসঙ্গে অনেকেই করে।'
ছবিতে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও লিলি চক্রবর্তীর নাতনির চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে পৃথাকে। চরিত্রের নাম সায়ন্তিকা। পরিচালকের কথায়, 'ক্যামেরার সামনের সায়ন্তিকা ও বাস্তবের পৃথাকে আলাদা করা খুব মুশকিল। ভীষণ ভাল মানিয়ে গিয়েছে ব্যাপারটা।'