কলকাতা: 'মা সারদা মাসিক চলাকালীন নিজে ঠাকুরের জন্য রান্না করতেন, পুজো করতেন। আর সেটা শ্রী রামকৃষ্ণের অমতে নয়, তাঁর ইচ্ছেতে...'। রুপোলি পর্দায় বলা নিজের এই কথাটা বাস্তব জীবনেও মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন ঋতাভরী চক্রবর্তী। ঋতুচক্র নিয়ে সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নিজের মতামত দিতে কখনও পিছপা হননি তিনি। শুধু কি তাই, ঋতাভরী স্বপ্ন দেখেন, কলকাতা প্রথম এমন শহর হবে, যেখানে প্রত্যেক সাধারণ শৌচালয় থাকবে প্যাড ভেন্ডিং মেশিন।


আজ ঋতুচক্র সংক্রান্ত স্বাস্থ্য দিবস। কিন্তু কেবল কোনও বিশেষ দিন নয়, নারীদের ঋতুচক্র সংক্রান্ত স্বাস্থ্য মেনে চলা উচিত প্রতিটা দিন। প্রয়োজন এই বিষয়ে সচেতনতারও। ঋতাভরী বলছেন, 'ছোটবেলায় স্কুলে অনেক ছেলে বন্ধু ছিল। তাদের থেকে ঋতুচক্র নিয়ে খুব অদ্ভুত সব তথ্য শুনতাম। রান্নাঘরে যাওয়া যাবে না.. পুজো করা যাবে না। অবাক লাগত। মনে হয় ঋতুচক্র তো মেয়েদের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বড় হয়ে বুঝি, পৌরাণিক এই নিয়মগুলো বানানো হয়েছিল বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য। যুগ বদলেছে। মেয়েরা এখন নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক সচেতন। এখন ঋতুচক্র নিয়ে লুকিয়ে কথা বলা অর্থহীন। বরং যত বেশি মানুষ খোলাখুলি কথা বলবে, তত সচেতনতা বাড়বে।'


তবে শুধু সচেতনতা প্রচার নয়, 'ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি'-র শর্বরী স্বপ্ন দেখেছিলেন কলকাতাকে প্রথম এমন শহর বানানো যেখানে প্রত্যেক সাধারণ শৌচালয় থাকবে প্যাড ভেন্ডিং মেশিন। রাস্তায় প্রয়োজন হলে যে কেউ সেই মেশিন থেকে স্যানিটারি ন্য়াপকিন সংগ্রহ করতে পারবেন বিনামূল্যে। এই বিষয়ে প্রথম বাংলার প্যাডম্যান শোভনের সঙ্গেই পরিকল্পনা করেছিলেন ঋতাভরী। অভিনেত্রী বলছেন, 'একটি সম্মেলনে গিয়ে শোভনের সঙ্গে আমার আলাপ। বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঋতুচক্র সংক্রান্ত স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা প্রচার করে ও। শোভনের সঙ্গে কথা বলেই এই কাজটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি আর রাহুল। ইতিমধ্যেই আমরা কলকাতার ১০০টা সাধারণ শৌচালয়ে প্যাড ভেন্ডিং মেশিন বসিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির জন্য এখন সমস্ত কাজ বন্ধ পড়ে রয়েছে। নতুন করে কোনও সমস্যা না আসলে এই বছরের মধ্যেই শহরের সমস্ত সাধারণ শৌচালয়ে প্যাড ভেন্ডিং মেশিন থাকবে। যখন কাজটা হাতে নিয়েছি, শেষ করেই ছাড়ব। আর হ্যাঁ, এই কাজে যারা আমাদের অর্থসাহায্য করেছেন, তাঁদের বেশিরভাগই পুরুষ।'


ঋতুচক্র ছোটদের পাঠ্যের বিষয় হোক, মত ঋতাভরীর। বললেন, 'ঋতুচক্র না হলে তো পৃথিবীতে নতুন জীবন সৃষ্টিই হবে না। সব স্তব্ধ হয়ে যাবে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে ঋতুচক্র গোপন করার নয়, আরও বেশি করে আলোচনার বিষয় হোক।'