কলকাতা: বলা হয় তাঁদের শ্যুটিং ফ্লোরে আলাপ। কিন্তু প্রথম নাকি তাঁদের দেখা হয়েছিল এক রেস্তোরাঁয়। প্রথম আলাপেই একে অপরকে পছন্দ হয়। এরপর কথা শুরু, সেই থেকে বন্ধুত্ব ও প্রেম। তারপর টানা সাড়ে ৬ বছর ধরে সুখে-দুঃখে একে অপরের হাত ধরে রেখেছেন শক্ত করে। এবার তাঁরা এই সম্পর্ককে দিতে চলেছেন আইনি স্বীকৃতি। সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র (Rupanjana Mitra) ও অভিনেতা-পরিচালক রাতুল মুখোপাধ্যায় (Ratool Mukherjee)। এতদিন শোনা যাচ্ছিল, এবার সেই জল্পনায় পড়ল সিলমোহর। এবিপি লাইভকে (ABP Live) রাতুল জানালেন ১৯ এপ্রিল বিয়ে করছেন তাঁরা। রূপাঞ্জনার সঙ্গে আলাপ থেকে বিয়ের প্রস্তুতি, খোলামেলা আড্ডায় রাতুল। (Rupanjana-Ratool Marriage)
১৯ এপ্রিল বিয়ে, বাকি মাত্র ১১ দিন, কী পরিকল্পনা?
বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাতুল এবিপি লাইভকে বলেন, 'আমাদের সাড়ে ৬ বছরের সম্পর্ক। আমরা কোভিডটাও একসঙ্গে কাটিয়ে এসেছি। সম্পর্কটা এমন সময়ে আমাদের তৈরি হয়েছে, যে একসঙ্গে আমরা কঠিন বাস্তবটাও দেখেছি, তেমনই একসঙ্গে খুব ভাল দিনও দেখেছি। সেই কারণে আমাদের দুজনেরই মনে হয়েছে যে আর সময় নষ্ট করার কোনও কারণ নেই বিশেষ। আমি আর রূপাঞ্জনা তাই সিদ্ধান্ত নিই, যে আগামী ১৯ এপ্রিল, গাঁটছড়া বাঁধব।'
পাহাড়ের কোলে প্রকৃতির মাঝে সেরেছিলেন আংটি বদল। পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই প্রসঙ্গে রাতুল বলেন, 'পাহাড়ে গিয়ে বাগদান সেরেছিলাম। সেটাও খুব পরিকল্পনা করে করা হয়েছিল এমন নয়। আমাদের তখন মনে হয়েছিল যে সম্পর্কটাকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়া উচিত। সেই ভাবনা থেকেই গত বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি মিরিকের ডন বস্কো চার্চে আংটি বদল সারি। একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একসঙ্গে যে আনন্দের সময় কাটিয়ে আসছি, সেটাকেই দীর্ঘায়িত করা ছিল উদ্দেশ্য। আমরা চেয়েছিলাম একে অপরের হাতে সবসময় একটা আংটি থাকুক, যাতে একটা খুব ব্যক্তিগত স্পেশাল বার্তা দেওয়া আছে। দু'জনের আংটিতেই। যখন একা মনে হয় নিজেকে তখন ওই আংটিটা মনে করায় যে সঙ্গে সবসময় কেউ আছে। ওটা খুব স্পেশাল আমাদের কাছে। এই অনুভূতিটা খুব সুন্দর।'
কোথায় হবে বিয়ের অনুষ্ঠান? ১৯ তারিখে, রাজারহাট নিউটাউনের একটি হোটেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। হবু দম্পতির খুব ঘনিষ্ঠ মানুষজনেরা উপস্থিত থাকবেন। কাছের মানুষ, পরিবার, বন্ধুবান্ধবরা থাকবেন। রাতু বলেন, '১৯ তারিখেই অগ্নিসাক্ষী রেখে, হিন্দু বিয়ের সমস্ত রীতি মেনেই বিয়ে হবে। তবে গোটাটাই একদিনেই করা হয়েছে। কারণ আমি আর রূপাঞ্জনা দু'জনেই নতুন কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সেই সঙ্গে আমাদের কাছের বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের লোকজনও দু-তিন দিন ধরে সময় হয়তো দিতে পারবেন না। তো সব কথা মাথায় রেখেই একদিনেই সবটা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
হবু স্ত্রীয়ের সঙ্গে বয়সের ফারাক বেশ খানিকটা। সেই নিয়ে পরিবারে সমস্যা হয়নি? অকপট রাতুল বলেন, 'রূপাঞ্জনাকে না চিনে বাইরে থেকে বিচার করলে তাঁদের মনে আগে থেকে একটা বিশেষ ধারণা থাকতে পারে। তবে এই সম্পর্ক বা বিয়ের সিদ্ধান্ত, সবটাই আমার বাড়ির লোককে, বা আমাদের কাছের লোকজনেদের জানিয়েই করা হচ্ছে। বাকিটা তো ভীষণ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়, সেটা আমি সত্যিই আলোচনা করতে চাই না।'
বেশ কিছু বছর ধরে একসঙ্গে থাকতেন তাঁরা। এরপর করোনা অতিমারির সময় পরিস্থিতি বদলায়। রাতুলের বাবা-মা কলকাতারই বাসিন্দা। সেই সময় দুই বাড়িতেই মিলিয়ে মিশিয়ে থাকতেন তিনি। এখন রূপাঞ্জনা-রাতুল দক্ষিণ কলকাতায় একসঙ্গে বাড়ি কিনেছেন। গত দুর্গাপুজোর সময় থেকে সেখানেই থাকছেন তাঁরা। রূপাঞ্জনা-রাতুল ও পরিবারের খুদে সদস্য রিয়ান। নিজেদের ঠিকানায়, আর দিন দশেক পর থেকেই আইনি স্বীকৃতি নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর বাঁধবেন তাঁরা। বিয়ের আলোচনার ফাঁকে রাতুলের মুখে বারবার উঠে এল রিয়ানের কথা। রাতুলের মতে, 'আমার আর রূপাঞ্জনার সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখে রিয়ান। ওকে ঘিরেই সবটা। আমাদের এই সিদ্ধান্তে, আমাদের সম্পর্কে রিয়ানের অবদান অনেকটা।'
আরও পড়ুন: Sanjay Dutt: রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন সঞ্জয় দত্ত? লড়বেন ভোটে? খোলসা করলেন নিজেই
আপাতত অভিনয় থেকে খানিক বিরতি নিয়ে পরিচালনার কাজেই মন দিয়েছেন রাতুল। পুরোদমে চলছে তাঁর আসন্ন ছবি 'কালিয়াচক চ্যাপ্টার ১'-এর কাজ। অন্যদিকে ধারাবাহিক ও বড়পর্দার কাজ সামলাচ্ছেন রূপাঞ্জনা। সম্প্রতি 'বনবিবি' ছবির জন্য শিলচরের এক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃতও হয়েছেন। সেই ছবি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন অভিনেত্রী। এতকিছুর মধ্যে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কী করে? রাতুলের কথায়, 'আমরা খুব ভাগ্য করে কিছু বন্ধুবান্ধব পেয়েছি। যাঁরা নিজেদের কাজ সামলে আমাদের সমস্ত কেনাকাটায়, কাজেকর্মে প্রচণ্ড সাহায্য করছেন। ওঁদের কাছে আমি ও রূপাঞ্জনা, দু'জনেই কৃতজ্ঞ'।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।