কলকাতা: বাড়িতে ঠাকুর এসে গিয়েছে কাল রাতেই। নিয়ম অনুযায়ী সকালবেলা পরিবারের সবাই একসঙ্গে গঙ্গাস্নানে যাবেন। ফিরে এসে তিনি নিজে বসবেন পুজোয়। একসময় যে আসনে বসে বাড়ির লক্ষীপুজো করে গিয়েছেন উত্তমকুমার, তরুণ কুমার, পারিবারিক রীতি মেনে এখন সেই দায়িত্ব সামলান তিনিই। গৌরব চট্টোপাধ্যায়।


পুরনো ধাঁচের বাড়িতে ঢুকেই উঠোন, তার সামনেই বড় ঠাকুরঘর। সাবেকি আলপনা আর ফুলে সাজানোর ঘরের ঠিক মাঝখানে বসানো হয় লক্ষ্মী প্রতিমাকে। তবে প্রতিমার মুখে যেন মানুষের আদল! এই প্রথা চালু করেছিলেন উত্তমকুমার স্বয়ং। তাঁর বাড়ির প্রতিমা তৈরি হয় স্ত্রী গৌরীদেবীর আদলে। সেই প্রথা চলে আসছে আজও। এবিপি লাইভকে গৌরব বলছেন, 'প্রতিবার নতুন মুর্তি তৈরি হয়। একসময় আমাদের বাড়ির প্রতিমা বানাতেন নীরঞ্জন পাল। এখন তাঁর পরিবারই ঠাকুর তৈরি হয়। ঠাকুমার (গৌরীদেবী) মুখের ছাঁচ রয়েছে ওনাদের কাছে।'


ছোটবেলা থেকেই বাড়ির পুজো দেখেছেন গৌরব। এবিপি লাইভকে উত্তম-পৌত্র বলছেন, 'একসময় লক্ষীপুজোয় আমাদের বাড়িতে ভিয়েন বসত। মিষ্টি তৈরি হত বাড়িতেই। আর রান্না হত বাড়ির ছাদে। জ্যেঠু, ছোড়দিদিমা সবাইকে পুজোয় বসতে দেখেছি। আমরা তখন সব ভাইবোন একসঙ্গে হয়ে মজা করতাম। গোটা বাড়িতে দৌড়ে বেড়াচ্ছি, ছাদে গিয়ে রান্না দেখছি, মিষ্টি খাচ্ছি। এখন অবশ্য আর বাড়িতে মিষ্টি তৈরি হয় না।'  






পুজোর রীতিনীতির মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ ছিল রাত জাগা। গৌরব বলছেন, ' কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় রাত জাগার একটা রীতি আছে। ছোটবেলায় লক্ষ্মীপুজোর সময় সেই দায়িত্ব ছিল আমাদের। প্রদীপ জ্বালিয়ে আমরা উঠোনে তোষক পাততাম। ভাড়া করে আনা হত বালিশ, আর একটা প্রোজেক্টার। সেখানে রাত্রিবেলা সিনেমা চালানো হত। দাদুর (উত্তমকুমার) যে কোনও একটা ছবি প্রত্যেকবার চালানো হবেই। আর তারপর একটা করে মজার ছবি চালানো হত। ঘুম আসত না কারও। গল্পে, সিনেমায় রাতটা কেটে যেত। এখন ল্যাপটপ নিয়ে সিনেমা চালানো হয়, তবে তাতে আগের আমেজটা নেই।'


বিয়ের পর এইবছর প্রথম পুজো। গৌরব জায়া দেবলীনার বাড়িতেও আড়ম্বর করেই লক্ষীপুজো হয়। দুই বাড়ির পুজোই এবার সামলাচ্ছেন দেবলীনা। আর গৌরব? বাড়ির বাকি সদস্যদের ওপর অতিথি আপ্যায়নের দায়িত্ব দিয়ে নিজে বসবেন বাড়ির পুজোয়।