কলকাতা:  প্রয়াত অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী, আজ ভোররাতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সকাল ৬ টা বেজে ২০ মিনিটে বাথরুমে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন অভিনেত্রী। তারপর সেখান থেকে তাঁকে বের করে আনার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃৃত বলে ঘোষণা করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে অভিনেত্রীর। দীর্ঘদিন ধরে নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। স্বর্ণযুগের অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া সবমহলে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই চারিদিকে শোকের ছায়া নেমে আসে। সুপ্রিয়া দেবীর প্রয়াণ বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি, মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সার্কুলার রোডে তাঁর বাড়িতে ধীরে ধীরে বিভিন্ন মানুষ আসতে শুরু করেছে। টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কার্যত ইন্দ্রপতন ঘটল।সুপ্রিয়া দেবীর প্রয়াণে শোকে বিধ্বস্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ষাট বছরের বন্ধুত্বে আজ ছেদ পড়ল, প্রতিক্রিয়া কিংবদন্তী অভিনেতার। যেসময় সুপ্রিয়া দেবী টলিউডে অভিনয় করতেন, সেটা ছিল বাংলা ইন্ডাস্ট্রির স্বর্ণযুগ, মন্তব্য প্রবীণ অভিনেতার।

সুপ্রিয়ার চলে যাওয়াটা ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না, প্রতিক্রিয়া বিশিষ্ট পরিচালক তরুণ মজুমদারের। এদিকে সুপ্রিয়া দেবীর বাড়িতে এরমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়, এসে পৌঁছেছেন অন্যান্যা আত্মীয়স্বজনেরা। এসেছেন উষা উত্থুপ।

১৯৩৩ সালের ৮ জানুয়ারি তৎকালীন বর্মার মিতকিনায় জন্মগ্রহণ করেন সুপ্রিয়া দেবী। অভিনেত্রীর বাবা ছিলেন পেশায় আইনজীবী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বর্মা থেকে কলকাতা চলে আসে সুপ্রিয়া দেবীর পরিবার। মাত্র সাত বছর বয়সে অভিনয়ের জগৎে পা রাখেন প্রয়াত অভিনেত্রী। তিনি দুটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন, তাঁর বাবার নির্দেশনায়। ছোট থেকে নাচ খুব ভালবাসতেন অভিনেত্রী। তাঁর নাচ এতটাই ভালছিল যে, তৎকালীন বর্মার প্রধানমন্ত্রীর থাকিন নুর থেকে পুরষ্কৃতও হন প্রয়াত অভিনেত্রী। কলকাতায় এসেও নাচ চালিয়ে যান সুপ্রিয়া দেবী। সেসময় তাঁদের প্রতিবেশী ছিলেন চন্দ্রাবতী দেবী । তিনিই তাঁর পরিচিতি ব্যবহার করে বাংলা সিনেমার জগতে নামার সুযোগ করে দেন সুপ্রিয়া দেবীকে।



উত্তমকুমারের বিপরীতে ১৯৫২ সালে 'বসু পরিবার' ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে পথ চলা শুরু প্রয়াত অভিনেত্রীর। ১৯৫৯ সালে মহানায়ক উত্তমকুমারের বিপরীতে 'সোনার হরিণ' ছবির সৌজন্যে জনপ্রিয়তা পান সুপ্রিয়া। তারপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে ১৯৬০ সালে ঋত্বিক ঘটকের 'মেঘে ঢাকা তারা'-এ নীতার চরিত্রে সুপ্রিয়ার অভিনয় আজও সকলের হৃদয় নাড়া দেয়।

তাঁর অভিনীত ছবির মধ্যে রয়েছে 'মধ্য রাতের তারা', 'কমনগান্ধার', 'উত্তরায়ণ', 'সূর্যশিখা', 'লালপাথর', 'দূর গগণ কি ছাঁও মে', 'শুধু একটি বছর', 'কাল তুমি আলেয়া', 'তিন অধ্যায়', 'চৌরঙ্গী', 'সবরমতী', 'মন নিয়ে', 'চিরদিনের', 'সন্ন্যাসী রাজা', 'বাঘবন্দি খেলা'র মতো একাধিক ছবি। দুবার তাঁকে বাংলা ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশ থেকে সম্মানিত করা হয়। ২০১১ সালে বঙ্গ বিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। ২০১৪ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে তাঁকে সম্মানিত করে কেন্দ্রীয় সরকার।

১৯৫৪ সালে বিশ্বনাথ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর তাঁর একটি কন্যা সন্তান হয়। সেসময় কয়েকবছরের জন্যে ছবির জগৎ থেকে বিরতি নেন প্রয়াত অভিনেত্রী। তারপর ফের তিনি ফেরেন বড়পর্দায়। পরে তিনি মহানায়ক উত্তমকুমারের সঙ্গে থাকতেন।