কলকাতা: থার্ড বেল বাজলেই বন্ধ হয়ে যায় প্রেক্ষাগৃহের আলো, জ্বলে ওঠে মঞ্চ। সেই মঞ্চই ছিল অনির্বাণ ভট্টাচার্য্যের (Anirban Bhattacharya) অভিনয়ের শিকড়। সেখান থেকে অভিনয়, গান, পরিচালনা। থিয়েটারের মঞ্চ চেনে অনির্বাণ ভট্টাচার্য্যের এই বিভিন্ন ভূমিকাকে। কিন্তু রুপোলি পর্দা? সেখানেই বা তিনি শুধু অভিনেতা হবেন কেন? অনির্বাণ বেছে নিলেন ম্যাকবেথ (Macbeth), চরিত্র বাছলেন, আলোচনায় বসলেন চিত্রনাট্য নিয়ে। এসভিএফের প্রযোজনায় তৈরি হল ৮ এপিসোড-এর ওয়েব সিরিজ 'মন্দার' (Mandaar)।


 


প্রশ্ন: মঞ্চে পরিচালনা করেছেন, রুপোলি পর্দায় এই প্রথম পরিচালনায় পা রাখলেন। কেমন অভিজ্ঞতা হল?


অনির্বাণ ভট্টাচার্য: কাজটা করে মজা পেয়েছি। প্রথমদিকে একটু ভয় কাজ করছিল। কেবল সিনেমা দেখে সিনেমা বানিয়ে ফেলা যায় না। অনভিজ্ঞতা আছে, প্রযুক্তিগত ত্রুটি রয়েছে। তবে আমি ভীষণ গুণী কিছু মানুষদের সঙ্গে কাজ করেছি যাঁরা প্রতি মুহূর্তে আমায় সাহায্য করেছেন। সবাই মিলে এমন একটা জিনিস বানানো গিয়েছে যেটা দর্শকদের ভালো লাগবে বলে আমার মনে হয়।


 


প্রশ্ন: নিজের পরিচালনায় নিজে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করলেন না কেন?


অনির্বাণ: পাগল নাকি! ওটা আমার কাছে অসম্ভব ব্যাপার। ওটা করার জন্য আলাদা ক্ষমতা থাকতে হয়। তবে নাটকের জগতের উত্তরসূরীরা যেমন শম্ভুবাবু, উৎপলবাবু অবশ্য তাইই করেছেন। কিন্তু আমি ঠিক সবটা সামলে উঠতে পারি না। পরিচালনার পাশাপাশি 'মন্দার'-এর ছোট্ট একটা চরিত্রে অভিনয় করতেও প্রচণ্ড পরিশ্রম হয়েছে। পূর্ণ অভিনেতা হিসাবে কাজ করতে গিয়ে এত চাপে পড়ি না। ভবিষ্যতেও নাটক আর রুপোলি পর্দায় দু জায়গায় পরিচালনা করলে সেখানে ছোট চরিত্রে অভিনয় করার চেষ্টা করব। বড় চরিত্রে অভিনয়ের প্রশ্নই ওঠে না।'


 


প্রশ্ন: নাটকের মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত বলে কী পর্দায় পরিচালনার সুযোগ আসতে প্রথম ম্যাকবেথ বাছলেন?


অনির্বাণ: আসলে ম্যাকবেথ শেক্সপিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক। 'জুলিয়াস সিজার', 'হ্যামলেট' বা 'কিং লিয়র'-এর তুলনায় 'ম্যাকবেথ'-এ দর্শন কম, নাটক বেশি রয়েছে। যেহেতু একটা কমার্শিয়াল ফরম্যাটে কাজ করছি, সেটা মাথায় রেখেই ম্যাকবেথকে বাছা।


 


প্রশ্ন: 'মন্দার'-এর চিত্রনাট্য তৈরি করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?


অনির্বাণ: লকডাউন, আমফান, এই ঘটনাগুলো ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এর ফলে আমরা অনেকটা ভাবার, লেখার সময় পেয়েছিলাম। আমাদের ৭টা খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল। শেষ চিত্রনাট্যের খসড়া নিয়ে শ্যুটিং করতে গিয়েছিলাম। বার বার দৃশ্য বানিয়েছি, ভেঙেছি, ফের তৈরি করেছি। 'মন্দার'-এর চিত্রনাট্যের কাজ করতে গিয়ে যে মজাটা পেয়েছি সেটা আর কখনও হবে কি না জানি না।' 


 


প্রশ্ন: 'মন্দার'-এর অধিকাংশ অভিনেতাই থিয়েটারের মঞ্চের। এটা কী ইচ্ছাকৃত?


অনির্বাণ: একেবারেই নয়। আমার যেমন মুখ প্রয়োজন ছিল, সেগুলো আমি যেখান যেখান থেকে পেয়েছি, তাদেরই এনেছি। আমার একটাই শর্ত ছিল, অভিনেতা হতে হবে। অভিনেতা নন এমন মানুষকে দিয়ে আমি অভিনয় করানোর ক্ষমতা আমার নেই। সেই অভিনেতা আমি যে জেলায়, যেখানে পেয়েছি, তাঁদের একত্রিত করেছি। কারও ঠিকানা সুন্দরবন, কারও নয়ডা, কারও আবার হাতিবাগানের একটা গলি। আমার সঠিক মুখের প্রয়োজন ছিল কেবল।


 


প্রশ্ন: সৃ্জিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের বন্ধুত্বের কথা ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানে। সেই অনির্বাণ পরিচালনায় পা রাখলেন। একই রকম বন্ধুত্ব বজায় থাকবে নাকি প্রতিযোগিতা?


অনির্বাণ: না না। আমাদের এই ছোট্ট জগতে সবাই সবার বন্ধু, সবাই সবার শত্রু। আমাদের ঝালে ঝোলে অম্বলে আমাদের চলে যায়। প্রতিযোগিতার ব্যাপার নেই। আমি যতটুকু সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে জানি, উনি আমায় কাজ করার জন্য উৎসাহ দেবেন। আদতে তিনি আমায় ভালোবাসেন আর সবসময় আমার কাজের পাশে থাকারই চেষ্টা করেন। যদি ভালো কাজ করতে পারি, যদি, সৃজিতদা, রিনাদির আশীর্বাদ পাই, তাহলে সেটা আমার জন্য বিরাট বড় পাওনা হবে।



আগামী ১৯ নভেম্বর 'হইচই'-তে মুক্তি পাচ্ছে 'মন্দার'।