কলকাতা: ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালে। নির্বাচনের সময়। কলকাতা ছেড়ে অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য (Anirban Bhattacharyya) যাচ্ছিলেন মেদিনীপুরের বাড়িতে। হঠাৎ মুম্বই থেকে ফোন। পরিচালক অসীমা ছিব্বড় (Ashima Chibbar) কথা বলতে চান। এরপর দামিনী বসুর ফোন.. 'কথা বলে নিস ঠিক করে...'। পরেরদিন সকালে ফোন করলেন অসীমা নিজেই। অনির্বাণকে বললেন, 'একটা ছবি করছি। তোমায় গল্পটা শোনাতে চাই।' একটা জুম কল দিয়ে প্রথম শুরু হয়েছিল নরওয়ে সফরের গল্পের। তারপর? 'মিসেস চ্যাটার্জী ভার্সেস নরওয়ে' (Mrs Chatterjee Vs Norway)-র মুক্তির পরে এবিপি লাইভের (ABP Live)-এর সঙ্গে বলিউড পাড়ির খুঁটিনাটির গল্প বললেন পর্দার মিস্টার চ্যাটার্জী ওরফে অনির্বাণ।
জুম কলে গল্প শুনতে শুনতে অনির্বাণের মনে পড়ে যায়, এই ঘটনা খবরের কাগজের দৌলতে তাঁরও জানা। সেই ঘটনাকে পর্দায় তুলে আনার ভাবনা অন্যরকম তো বটেই। অনির্বাণ বলছেন, 'চিত্রনাট্য পড়া শেষ করে অসীমা বলেন, এই ছবিতে স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করলে খুব খুশি হব আমি। প্রথমে একটু অবাকই হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, মুম্বইয়ের ছবি, রানি মুখোপাধ্যায় (Rani Mukherjee) অভিনয় করবেন অথচ আমার অডিশন চাইছেন না!'
শুরুটা হয়েছিল এভাবেই। এরপর করোনা পরিস্থিতিতে কিছুটা পিছিয়ে যায় শ্যুটিং। অনির্বাণ বলছেন, 'কাজ শুরুর আগে থেকেই জানতাম, এই ছবির বেশিরভাগ অংশের শ্যুটিং হবে বিদেশে। কোভিড পরিস্থিতির জন্য সময়টা একটু পিছিয়ে গেল বটে, কিন্তু তখন নিয়মিত জুম কলে মহড়া চলত পরিচালক আর লেখকের সঙ্গে। এরপর মুম্বই.. লুক সেটের জন্য। তারপর অগাস্ট মাসে পাড়ি দিলাম এস্তোনিয়া। কোভিড বিধি মেনে যেদিন শ্যুটিং শুরু হবে, তার আগেরদিন যে বাড়িটাকে চ্যাটার্জীবাড়ি করে তোলা হয়েছে, সেখানে একটা রিহার্সাল ছিল। সেখানেই প্রথম রানি মুখোপাধ্যায়ের (Rani Mukherjee) সঙ্গে আমার দেখা। তার পরেরদিনই ওঁর স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। একটা নতুন ইউনিট, একটা বিদেশি শহর, সেখানকার আলো, আকাশ.. সব মিলিয়ে আমার বুনিয়াদটাই ঘেঁটে যেতে পারত। কিন্তু আমার শিক্ষকেরা আমার মাথাটা সেভাবেই তৈরি করেছেন যাতে এমন পরিস্থিতিকেও সামলে নিতে পারি। নিজেকে বোঝালাম.. তার পরেরদিন থেকেই অভিনয় শুরু।'
রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ? একটু হেসে অনির্বাণ বললেন, 'আমি একটা সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়েছিলাম। রানি ঢুকে খুব স্পষ্ট বাংলায় বললেন 'অনির্বাণ কোথায়'.. যেন কত দীর্ঘদিনের আলাপ। খুব কুন্ঠা নিয়ে আমি 'হ্যালো' বলতেই রানি বললেন, 'আমি ভীষণ খুশি হয়েছি তুমি কাজটা করছো। অনেক ধন্যবাদ। চলো আমরা একসঙ্গে খুব ভাল করে শ্যুটিংটা করব।' তারপরে গোটা শ্যুটিং শিডিউলই আমার সঙ্গে বাংলায় কথা বলে গিয়েছেন রানি। বাকি কেউ কিছু বুঝতেই পারত না। আমাদের সঙ্গে শাশ্বতীদি, বোধিদা, সৌম্যর মতো অনেক বাঙালি অভিনেতা অভিনেত্রীই ছিলেন তবে তাঁদের শিডিউল আমার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমি টানা ছিলাম আর তাই, ৪৬ দিনের শ্যুটিংয়ে আমার একমাত্র বাংলা বলার সঙ্গী রানি।'