কলকাতা: সদ্য মুক্তি পেয়েছে নতুন ছবি 'নির্ভয়া'। একটা ১৩ বছরের মেয়ের গল্প এটা। তবে শৈশবের নয়, এই গল্প লড়াইয়ের। আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে অংশুমান প্রত্যুষের নতুন ছবি 'নির্ভয়া' (Nirbhaya)। ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন প্রিয়ঙ্কা সরকার, গৌরব চক্রবর্তী, সব্যসাচী চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় ও হিয়া দে। একটি ১৩ বছরের মেয়ের গণধর্ষণের শিকার হলে দোষীকে শাস্তি দেয় আইন। কিন্তু ঠিক কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় নির্যাতিতাকে? সেই গল্পকেই পর্দায় তুলে ধরেছে 'নির্ভয়া'। কেন এই ধরনের গুরুগম্ভীর বিষয়কে পর্দায় তুলে আনার কথা ভেবেছিলেন পরিচালক? ছোট্ট হিয়াকেই কেন বেছেছিলেন নির্ভয়ার চরিত্রের জন্য? ছবি মুক্তির পর এবিপি লাইভকে নির্ভয়া তৈরির গল্প শোনালেন পরিচালক অংশুমান প্রত্যুষ (Anshuman Pratyush)।
২০১২ সালে দিল্লিকে ঘটে যাওয়া নারকীয় ধর্ষণের ঘটনা বাকি সমস্ত দেশবাসীর মত বিপর্যস্ত করেছিল পরিচালকেও। সেখান থেকেই কী এই ছবির ভাবনা? পরিচালক বলছেন, 'ওই ঘটনাটা শোনার পর মনে হয়েছিল, সমাজটা আর বসবাসযোগ্য নেই। প্রচণ্ড রাগ বয়েছিল। কিন্তু সেসময় এটা নিয়ে চিত্রনাট্য লেখার কথা ভাবিনি। চার বছর পর আবার একটা খবর আমার চোখে পড়ে, যেখানে এতটা ১৩ বছরের ময়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে আর তাকে আইনি বিচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। সেই খবরটাও আমায় খুব বিব্রত করে। মনে হয়েছিল, আমার তো নিজের মেয়ে আছে। ওর ৭ বছর বয়স। কয়েক বছর পর ও তো বড় হবে, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যেতে চাইবে। আমি চেয়েছিলাম আমার মেয়ে একটা সুরক্ষিত সমাজে বাঁচুক। কিন্তু সেই চেষ্টাটা দুজন, তিনজন করলে হবে না। আমি চেয়েছিলাম এই বিষয়টাকে আলোচনার বিষয়বস্তু করতে। নির্ভয়া আমার কাছে একটা আশারা আলো। তবে আমরা দোষীদের শাস্তি দাবি করতে করতে নির্যাতিতার পাশে দাঁড়াতে ভুলে যাই। আমি চেয়েছি এই বার্তাটাকেই আমার ছবির মধ্যে দিয়ে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আমার ছবিটা খারাপ হতে পারে কিন্তু ছবির বিষয়টা কখনোই খারাপ নয়, বরং খুব গুরুত্বপূর্ণ।'
ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন হিয়া দে। আগে কখনও বড়পর্দায় অভিনয় করেনি হিয়া। তাকে কেন্দ্রিয় চরিত্রের দায়িত্ব দেওয়ার কথা কীভাবে ভেবেছিলেন অংশুমান? পরিচালক বলছেন, 'হিয়া পটলকুমার গানওয়ালা বলে একটা ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করত। সেখানে ও যথেষ্ট খ্যাতিলাভ করে। অভিনয়ের সূত্রেই আমার স্ত্রী রানির সঙ্গে হিয়ার পরিচিতি ছিল। এরপর একটি অভিনয় শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে হিয়ার সঙ্গে ফের দেখা হয়। ২ বছর হিয়া পর্দায় কাজ করেনি, থিয়েটার করছিল। সেখানে হিয়ার পারফরম্যান্স দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কী দক্ষ অভিনয়! আমার গোটা টিম একটা বিষয়ে ভীষণ পরিষ্কার ছিল, যে এমন কোনও বাচ্চা মেয়েকে দিয়ে এই চরিত্রে অভিনয় করাব না যার মনের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কোনও বাচ্চা মেয়েকে মানসিকভাবে বিপদে ফেলব এটা কখনোই চাইনি। আমাদের এমন কাউকে প্রযোজন ছিল যে অভিনয় ব্যাপারটা বুঝবে। হিয়ার মায়ের সঙ্গে প্রথমে কথা বলা হয়, ও গোটা চিত্রনাট্যটা শোনে। তারপর হিয়া বলে, 'আমি কতটা ফুটিয়ে তুলতে পারব জানি না কিন্তু আমি কাজটা করতে চাই।' সেখান থেকেই শুরু। গোটা কাজটা হিয়া ভীষণ দক্ষ অভিনেত্রীর মতোই করেছে।'