মুম্বই: প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর ও ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরকে ব্যঙ্গ করে ভিডিও পোস্টের ঘটনায় তদন্ত শুরু করল মুম্বই পুলিশ। ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে ওই ভিডিওতে ব্লক করতে বলল পুলিশ।'সচিন ভার্সেস লতা সিভিল ওয়ার' শিরোনামের এই ভিডিও গত ২৬ মে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল।

অনলাইন কমেডি গ্রুপ এআইবি-র কৌতুক অভিনেতা তন্ময় ভট্টর এই ভিডিও ঘিরে তীব্র বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে মহারাষ্ট্রে। শিবসেনা, বিজেপি এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মান সেনা (এমএনএস) তন্ময়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এমএনএস তো তন্ময়কে মারধরেরও হুমকি দেয়।

দেখুন সেই বিতর্কিত ভিডিওটি



ভিডিওতে তন্ময়কে আওয়াজ বিকৃত করে সচিন তেন্ডুলকর এবং লতা মঙ্গেশকরের মতো করে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। বিরাট কোহলি না সচিন-কে সেরা, সম্প্রতি এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে তর্কবিতর্ক চলছে। ব্যঙ্গ ভিডিওতে এই বিষয়টি নিয়েই সচিন ও লতার গলা নকল করে ভাঁড়ামি করা হয়েছে। ভিডিওতে কিংবদন্তী শিল্পীর বয়স নিয়েও কটাক্ষ করেন তন্ময়।

ভিডিওটি প্রকাশ্য আসার পরই বলিউডেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ভিডিওতে যেভাবে সঙ্গীত ও ক্রিকেট জগতের দুই কিংবদন্তীকে তুলে ধরা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা করেছে সিনে জগত।

মহারাষ্ট্র সরকারের শরিক শিবসেনা বলেছে, দুই জাতীয় কিংবদন্তীকে ব্যঙ্গ করে সামাজিক ঐক্য কলুষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ জন্য এআইবি এবং তন্ময়দের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশের কাছে  দাবি জানিয়েছে শিবসেনা। দলের নেতা নীলম গোরে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, এ ধরনের লোকজন লতা ও সচিনের মতো আইকনকে নিজেদের প্রচারের কাজে অপব্যবহারের চেষ্টা করছে।

মুম্বইয়ের বিজেপি সভাপতি আশিস শেলার জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং এআইবি ও তন্ময়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন।

এমএনএসের দায়ের করা অভিযোগে ভিডিওটি অবিলম্বে হঠিয়ে দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

ডিসিপি (অপারেশনস) সংগ্রামসিংহ নিশানদার বলেছেন, মুম্বই পুলিশের অপরাধদমন বিভাগ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, শিবাজী পার্ক থানায় এমএনএস অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। তিনি আরও জানিয়েছেন, পুলিশ ভিডিওটির ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহ করেছে এবং এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের আগে আইনি মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।  ডিসিপি আরও বলেছেন, সংশ্লিষ্ট ভিডিওটি এবং তার লিঙ্ক ব্লক করার জন্য ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এত সমালোচনা সত্ত্বেও কৌতুক ভিডিওতে কোনও ভুল হয়েছে বলে মনে করছেন না তন্ময়। এক বিবৃতিতে যাঁরা ভিডিওটি পছন্দ করেছেন তাঁদের মতামত তাঁকে ই-মেলে জানানোর আর্জি জানিয়েছেন তন্ময়। এমনকি, ভিডিওটির বিরোধীদের কাছেও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন একাধিক টুইট মারফত্। যদিও ওই টুইটগুলি পরে মুছে দেওয়া হয়।

সেন্সর বোর্ডের সদস্য অশোক পণ্ডিত ভিডিওটির নিন্দা করে টুইট করেন। লেখক চেতন ভগত অবশ্যে টুইটারে বলেছেন, কৌতুক করার জন্য কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। সেই কৌতুক যদি খুব নিম্নমানের হলেও না।

শিল্পী সোনু নিগম টুইটারে লেখেন, কোনও মহিলা সম্পর্কেই এ ধরনের অমার্যদাকর ভাষায় কথা বলা পাপ। আর এখানে তো লতা মঙ্গেশকরের সম্বন্ধে বলা হয়েছে।

পরিচালক মিলাপ জাভেরি ভিডিওটিকে নিম্নরুচির বলেছেন।

অনুপম খের ফের নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখেন, আমি ৯বার বিভিন্ন ধরনের কমেডি শো জিতেছি। মজা করতে গেলে অসাধারণ হাস্যকৌতুক রসবোধ থাকা দরকার। এখানে যা হয়েছে সেটা নেহাতই বিরক্তিকর, অসম্মানজনক।





অন্য বলিউড তারকা এবং সাধারণ টুইটারাইটদের প্রতিক্রিয়া দেখুন