কলকাতা: দিন কয়েক আগে পোস্ট করেছিলেন একটি ভিডিও ও একটি ছবি। বিয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়ার আগে ভোজনপর্ব। অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্যর (Aparajita Adhya) দাদা ও তাঁর সেই সময়ে হবু স্ত্রী। এখন তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। দাঁড়িয়ে থেকে দাদার বিয়ে দিলেন অপরাজিতা, ঘরে নিয়ে এলেন নতুন বৌদিকে। শুভ অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে প্রয়াত মাকে (letter to mother) খোলা চিঠি লিখলেন অভিনেত্রী। যা পড়লে মন ভাল হয়ে যেতে বাধ্য। (newly married couple)


দাদার বিয়ে দিলেন অপরাজিতা, মায়ের অপূর্ণ সাধ করলেন পূরণ


অপরাজিতা আঢ্য প্রায়ই নিজের ব্যক্তিগত জীবনের একাধিক মুহূর্ত ভাগ করে নেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে দাদার বিয়ে বলে কথা। ছবি, ভিডিও ভাগ তো করবেনই।  নিয়ম মেনে জল সইতে গঙ্গায় গিয়েও একগুচ্ছ ছবি পোস্ট করেন। সকলে সেজেছিলেন হলুদ শাড়িতে। এরপর বিয়ে। সহজ সরল দাদার সঙ্গে কার বিয়ে হবে, কেই বা দাঁড়িয়ে থেকে এই গুরুদায়িত্ব সামলাবে তা নিয়ে খুবই চিন্তায় থাকতেন অপরাজিতার মা। কিন্তু ছেলের জীবনের এই আনন্দের মুহূর্তের সশরীরে সাক্ষী থাকতে পারেননি অভিনেত্রীর মা। ইহলোক ত্যাগ করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর কর্তব্যপরায়ণ মেয়ে নিজের দায়িত্ব সামলেছেন। দাঁড়িয়ে থেকে প্রত্যেকটা নিয়ম মেনে বিয়ে দিলেন দাদার। এরপর সোশ্যাল মিডিয়া খোলা চিঠি লিখলেন মাকে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রী এদিন লেখেন, 'মা, এটা তোমার গল্প। যতদিন বেঁচেছ কোনওদিন ভাল করে, আরাম করে বাঁচতে পারোনি। সব সময় ভয় তাড়া করত তোমায়। তোমার ছেলের কী হবে। তোমার ছেলে আর পাঁচ জন মানুষের মত স্বাভাবিক নয়, অত্যন্ত সরল আর সব ছেলের থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। কী হবে তোমার ছেলেটার? যদিও তোমার মেয়ে আছে, সে সব দায়িত্ব কর্তব্য করতে পারে। কিন্তু তবুও তোমার কোথায় একটা ভয়, কোথায় একটা শঙ্কা, একটা অবিশ্বাস কাজ করত। তুমি না থাকলে ছেলে কী করে বাঁচবে। ছেলে কী করে থাকবে।' তিনি আরও লেখেন, 'তুমি কখনও একা থাকাতে বিশ্বাসী ছিলে না। তুমি অসম্ভব বিয়েতে বিশ্বাসী ছিলে। তুমি সব সময় মনে করতে একা বাঁচা যায় না। যদিও আমরা সকলে পৃথিবীতে একাই আসি আর একাই যাই। তবু এই পৃথিবীলোকে বাঁচার জন্য বোধ হয় একজন সঙ্গীর খুব দরকার। তুমি সারাক্ষণ সবাইকে বলতে আমার ছেলের কী করে বিয়ে হবে, আমার ছেলেকে কে বিয়ে করবে। আমার ছেলেকে কে বিয়ে দেবে! তোমার পছন্দ করা পাত্রী রানী দিদি। কিন্তু সেই সময় রানী দিদির সঙ্গে বিয়ে দেওয়াটা সম্ভব হয়নি। আসলে সময়ের আগে কিছুই হয় না। সেটা তুমিও জানতে কিন্তু মানতে না। মনে মনে কোথাও অসম্ভব চেয়েছিলে যে এই পাত্রীর সঙ্গে তোমার ছেলের বিয়ে হোক।'


তিনি লিখে চলেন, 'পৃথিবীলোকের এটাই মজা। কেউ যদি সত্যি মন থেকে কিছু চায় তাহলে মৃত্যুর পরেও সেটা সত্যি হয়। আজকে তো তুমি শরীর নামক খাঁচায় বাঁধা নেই। সারা বিশ্বব্যাপী, সারা অন্তরীক্ষ, সর্বত্র তুমি বিরাজমান। তুমি পরমাত্মার সঙ্গে লীন হয়ে গেছ এবং তুমি দেখছ আজকে দাঁড়িয়ে তোমার মৃত্যুর এক বছর ৮ মাস পর তোমার ছেলে আজ বিবাহিত। তুমি আজকে হয়তো আনন্দে আনন্দলোকে লীন হয়ে গেছ। আজ বোধহয় তুমি সব থেকে বেশি শান্তি পেয়েছ যে তোমার ছেলে বিবাহিত এবং তোমার পছন্দ করা পাত্রী তোমার পুত্রবধূ। আর আমার শান্তি আমি আমার সবটুকু দায়িত্ব, যা যা তোমাকে বলেছিলাম, সবটা পালন করতে পারলাম। এখনও অনেক পথ বাকি। আমি আছি। আমি থাকব। ঈশ্বর আমার সঙ্গে আছেন। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার গন্তব্যে তোমার আগামী জন্মের যাত্রী হতে পার। প্রণাম নিও মা। আজ তুমিও যতটা খুশি তোমার ছেলেও ততটা খুশি। আজকে সত্যি সত্যি আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে। তুমি একটা কথা সবসময় বলতে 'better late the never'। আজ সেটাই প্রমাণ হল, আর এটাও প্রমাণ হল তুমি যতই চাও সময়ের আগে কিছু হয় না।'


আরও পড়ুন: New Documentary: অঘোরীদের 'রহস্যময়' জীবন এবার তথ্যচিত্রে, আসছে বঙ্গকন্যার 'দ্য সেক্রেড স্কালস'


অপরাজিতার পোস্টে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় ভরিয়েছেন তাঁর অনুরাগীরা। একইসঙ্গে অভিনেত্রীর দাদা ও বৌদির নতুন জীবনের প্রতি শুভেচ্ছাবার্তাও চোখে পড়ার মতো।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।