কলকাতা: লাল পেড়ে হলুদ শাড়ি, মাথায় এক থোকা রঙ্গন। এলো খোঁপা আর এক মুখ হাসিতে ঝলমল করছেন তিনি। ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে তুলছেন চরম ব্যস্ততায়, স্বামীর সামনে এনে দিচ্ছেন জলখাবার, আবার দোকানে গিয়ে চাল, ডাল, আটা ময়দা মেপে দিচ্ছেন সঠিক ওজন করে। 'যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে'। নতুন ধারাবাহিক 'লক্ষ্মী কাকিমা সুপারস্টার'-এর প্রোমো দেখলে প্রথমে মনে আসবে এই চির পরিচিত লাইনটাই। আর নতুন গল্প বলতে ৪ বছর পর টেলিভিশনের পর্দায় 'লক্ষ্মী' হয়ে ফিরছেন অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya)।


সিনেমা থেকে ধারাবাহিক, বার বার পর্দায় উঠে আসছে নারীকেন্দ্রীক গল্প। নিজের সঙ্গে লক্ষ্মীর মিল পেয়েছিলেন বলেই কী এই চরিত্রকে বাছা? অপরাজিতা বলছেন, 'সিনেমা বা ধারাবাহিক থেকে তো আমরা শিক্ষা পাই। আর আমি ভীষণ সাধারণ, ঠিক লক্ষ্মীর মতোই। আমি যে চরিত্রগুলো করি, তারাও ভীষণ সাধারাণ। আমি মনে করি, সাধারণ থাকার চেয়ে বড় গ্ল্যামার পৃথিবীতে কিছু নেই। অনেকেই আমায় প্রশ্ন করেন একই ধরনের চরিত্র করে টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছি কী না! আমার টাইপকাস্ট হওয়ায় বিশ্বাস করি না। আমি কেবল মনে করি সাধারণ মানুষ যাতে আমার চরিত্রের মধ্যে নিজেকে দেখতে পায়। ধারাবাহিক বা সিনেমা, ভালো হোক বা খারাপ, দর্শক যেন আমার চরিত্রটাকে ভালোবাসেন, আমায় ভালোবাসেন। মানুষ যেন নিজের অনুভূতি দিয়ে আমায় বুঝতে পারেন। আমি এখনও যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় শাড়ি পরে ছবি দিই, অনেকে লেখেন, 'আপনাকে ঠিক আমার মায়ের মতো লাগছে।' দর্শক আমার মধ্যে নিজের প্রিয়জনকে খুঁজবেন, মিল পাবেন, সেখানেই আমার সাফল্য।'


আরও পড়ুন: '২০ বছর কাজ করেছি, প্রচুর মানুষ এখনও আমায় ছোটপর্দায় দেখতে চান'


প্রোমোয় ধারাবাহিকের গল্পের ঝলক দর্শকদের বেশ নাড়া দিয়েছে। লক্ষ্মীর চরিত্রটা ঠিক কেমন? অপরাজিতা বলছেন, '২০২২ সালে এসে কেউ হাত গুটিয়ে বসে নেই। গ্রামের দিকে আমার জা'য়েরা থাকেন। তাঁরাও প্রত্যেকে সংসার চালানোর পাশাপাশি সংসারকে সাহায্য করার জন্য কিছু না কিছু করছেন। কেউ শাড়ির ব্যবসা, কেউ শিক্ষকতা। লক্ষ্মীও ঠিক এমনই একটা ঘরোয়া চরিত্র। সে মুদির দোকান চালায়। আবার সেইসঙ্গে দশভূজা হয়ে সংসারও সামলায়। দু পয়সা বেশি রোজগার হবে বলে ঘুগনি নিয়ে মেলায় চলে যেতেও দু'বার ভাবে না। চরিত্রটার প্রস্তাব আসার পরে আমার স্বামী আমায় বলেছিলেন, 'তোমার যা ব্যক্তিত্ব তাতে এই ধরণের চরিত্রে অভিনয় করবে?' আমি বলেছিলাম, করব। কারণ আমি নিজেও এইরকম। কখনও বসে থাকতে পারি না। শ্যুটিং না থাকলে খেলনা বানাই, রান্না করি, আরও কত কি! পর্দায় লক্ষ্মীর কাছে মুদির দোকানটা কেবল দায়িত্ব নয়, সে কাজটাকে ভীষণভাবে ভালোবাসে। অনেকেই তার দোকানে আসে জিনিস কিনতে নয়, পরামর্শ নিতে। লক্ষ্মী তাদের কথা শোনে। ঘরে কোথাও না কোথাও তার একটা দুঃখ লুকনো আছে। লক্ষ্মী যেন হালকা হয়, ভালো থাকে ওই দোকানকে ঘিরেই।'