রহমানের বাবা আর কে শেখরও ছিলেন একজন সুরকার। তিনি মারা যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই এবং নিজের প্রথম বড় প্রজেক্ট ‘রোজা’র মুক্তির আগে জন্মসূত্রে হিন্দু দিলীপ কুমার মুসলিম হলেন। নাম হল এ আর রহমান। তাঁর প্রিয় বন্ধু ত্রিলোক নায়ার তাঁর স্বীকৃতি দেওয়া জীবনী ‘নোটস অব এ ড্রিম’-এ জানিয়েছেন, রহমানের মা করিমা বেগম একেবারে শেষ মুহূর্তে ছবির ক্রেডিটে রহমানের নাম বদলাতে জোরাজুরি করেছিলেন। নায়ার বলেছেন, একেবারে শেষ পর্বে এত বড় একটা আর্জি জানিয়ে বসেন তিনি। কিন্তু করিমা জেদ ধরে বসেন। এটা তাঁর কাছে সত্যিই একটা বড় ব্যাপার, বলেন তিনি। এমনকী বিষয়টা এমন দাঁড়ায় যে, উনি জানিয়ে দেন, ছেলের নাম একেবারে থাকবে না, তাও ঠিক আছে, কিন্তু থাকলে ক্রেডিটে নতুন নামেরই উল্লেখ থাকতে হবে।
যদিও রহমান নিজের ধর্মবিশ্বাস অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ায় বিশ্বাসী নন। একবার একটি সাক্ষাত্কারে তিনি বলেই দেন, কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে পারেন না আপনি। বিরক্তিকর, এই যুক্তি দেখিয়ে ছেলে বা মেয়েকে বলতে পারেন না, তুমি ইতিহাস না নিয়ে বরং অর্থনীতি বা বিজ্ঞান নাও। এটা ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার।
রহমান বলেছিলেন, অনেকেই তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, ধর্ম বদলে ইসলাম গ্রহণ করে কি সফল হওয়া যাবে, কিন্তু তিনি নিরুত্তর থেকেছেন। তাঁর মতে, এটা ইসলামে ধর্মান্তরের বিষয় নয়, আপনাকে ভিতর থেকে জাগিয়ে তুলছে কিনা, সেটাই দেখার ব্যাপার। আধ্যাত্মিক, সুফি গুরুরা আমায়, মাকে এমন কিছু শিখিয়েছিলেন, যেগুলি খুবই স্পেশাল। প্রতিটি ধর্মেই বিশেষ কতগুলি বিষয় থাকে। সে কারণেই আমরা বেছেছি। আমরা তাকে আঁকড়ে রয়েছি। রহমান আরও বলেন, প্রার্থনায় খুব উপকার মেলে। আমায় অনেক পতন থেকে তা বাঁচিয়েছে। প্রার্থনার মধ্যেই আমার মনে হয়, ওহ, আমায় তো প্রার্থনা করতে হবে। তাই এই খারাপ কাজটা করতে পারি না। অন্য ধর্মের লোকজনও একই জিনিস করেন, তাঁরাও শান্তিপূর্ণ। আমার ক্ষেত্রে এটা কাজ করে।
রহমানের মেয়ে খাতিজা একটি অনুষ্ঠান তাঁর সঙ্গে বোরখা পরা অবস্থায় উপস্থিত থেকে সমালোচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজের অবস্থানে অটল ছিলেন। এপ্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে রহমান জানিয়েছিলেন, সম্ভব হলে তিনিও বোরখা পরতেন। তাছাড়া এটা মেয়ের স্বাধীনতারও প্রশ্ন।