কলকাতা: আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women's Day 2022)। সারা বিশ্ব জুড়ে এই বিশেষ দিনটা পালন করা হচ্ছে নানা ভাবে। প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখে পালিত হয় এই দিন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপন করার প্রধান লক্ষ্য আলাদা আলাদা। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপন মুখ্য বিষয় হয়। আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এই দিন বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সভ্যতার একেবারে প্রথম লগ্ন থেকেই নারীরা পুরুষের তুলনায় বহু ক্ষেত্রেই সমান অধিকার পান না। সে পারিশ্রমিকের তুলনাতেই হোক কিংবা সামাজিক সম্মান, প্রভাব প্রতিপত্তিতে হোক। তাই নারীদের সমানাধিকারের লড়াই চলছে বহু বছর ধরে। লিঙ্গবৈষম্য দূর করা হোক। এটাই মূল চাহিদা। আজকের এই বিশেষ দিনে নারী দিবস প্রসঙ্গে নিজেদের মতামত দিচ্ছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা, গায়ক এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় (Arindam Ganguly) আজকের আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রসঙ্গে তাঁর অনুভূতি ভাগ করে নিলেন এবিপি লাইভের প্রতিনিধির সঙ্গে। তাঁর চোখে সেরা নারী কে, তা যেমন জানালেন। তার সঙ্গে আর কোন কোন দিক থেকে নারীরা নিজেদের উন্নত করতে আরও উচ্চতায় নিজেদের পৌঁছে নিয়ে যেতে পারেন, সে সম্পর্কেও মতামত দিলেন।
আপনার চোখে সেরা নারী কে? আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাঁর কাছে যখন এই প্রশ্ন রাখা হয়, তখন অভিনেতা-গায়ক অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় যে উত্তরটা দিলেন, তা তাঁর পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। তিনি সরাসরি বলে দিলেন, 'আমার চোখে সেরা নারী বা আমার জীবনের সেরা নারী একমাত্র মা তারা। যদি তাঁকে নারী বলে মনে করা হয়।' এবার নারী দিবস প্রসঙ্গে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর বিস্তারিত মতামত দিতে শুরু করলেন। তিনি বলেন, 'আজকের দিনে মেয়েরা যেভাবে নিজেদের প্রতিদিন অনেক অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অনেক ক্ষেত্রে তো পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি সফল নারীরা। একাহাতে যেমন সংসার সামলাচ্ছেন। সেভাবেই অফিস কাছাড়ি করে আর্থিক দিকটাও দেখছেন। শুধু আমার একটা জিনিস একটু খারাপ লাগে। সেটা হল আজকের দিনে দেখা যায়, পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেক বেশি ধূমপান করছেন। না এটা কোনও কুসংস্কার থেকে বলছি না। বলছি স্বাস্থ্যের দিক থেকে। আমরা তো সকলেই জানি যে ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে কী মারাত্মক ক্ষতিকর। নারী-পুরুষ প্রত্যেকের জন্যই এটা ক্ষতিকর।' এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় নিজে কোনও নেশা করেন না। আর কোনওরকমের নেশা তিনি পছন্দ কিংবা সমর্থন কোনওটাই করেন না।
অনুরাগীরা জানেন, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী খেয়ালি দস্তিদার নিজে একজন নাট্য ব্যক্তিত্ব, অভিনেত্রী, লেখিকা এবং আরও অনেক ক্রিয়েটিভ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি। তেমনই তাঁর শাশুড়ি মা চন্দ্রা দস্তিদারের কথা জানেন সকলেই। তাঁর সম্পর্কে যত বলা যায়, কমই বলা হবে। তাঁর বোন স্বর্ণালী গঙ্গোপাধ্যায়ও একজন অভিনেত্রী । আর অবশ্যই তাঁর মা। তাই অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনে কোনও একজন নারী নয়, মা, বোন, স্ত্রী এবং শাশুড়ি মায়ের অবদান অনেক। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাঁর জীবনের এই চারজন নারীর অবদানের কথাও খোলাখুলি জানালেন তিনি। অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'প্রত্যেকের মতো আমার জীবনেও মায়ের অবদান অনেক। মায়ের হাত ধরেই আমার সবকিছু শুরু। অভিনয় থেকে গানের জগত, প্রত্যেক জায়গাতেই আমি গিয়েছি মায়ের সঙ্গে। তাই আজ আমি যা কিছু হতে পেরেছি, তা অবশ্যই মায়ের জন্য। পরবর্তীতে আমি যখন বিয়ে করি, তারপর থেকে খেয়ালি (দস্তিদার)ই সব সামলেছে। আমি কী পরব, কোথায় কীভাবে গেলে আমাকে দেখতে ভালো লাগবে, সবকিছু ওর জন্যই। এছাড়াও আমাদের কাজের জগতটা যেহেতু এক, তাই আমার কাজের ক্ষেত্রেও ওর অবদান অনেক। আমার শাশুড়ি মা খুব করে চেয়েছিলেন 'চার্বাক' গ্রুতটার দেখাশোনা যেন আমি করি। আমার জীবনে ওঁর অবদান অনেক। আর সবশেষে বলি বোনের কথা। আমি ছোটবেলা থেকেই বড্ড অগোছালো মানুষ। নিজের কোনও কিছু আমি গুছিয়ে রাখতে পারি না। আমি কত ছবি করেছি, কত গান গেয়েছি, সমস্ত কিছু আর্কাইভ করে রেখে দেয় আমার বোন। আমি আর আমার বোন এক কথায় হরিহর আত্মা। ওর সঙ্গে আমার এই বন্ধন বলে বোঝানোর নয়। তাই আমাদের জীবনে ওর অবদান অনেক। নারী হিসেবে এই চারজন আমাকে যেভাবে আগলে রেখেছে এবং আজও রাখে, তা আমার কাছে অনেক পাওনা। তাই তো পরিবারের বাইরে গিয়ে আমার সময় কাটানোর কোনও প্রয়োজন হয় না। আমি এমনিতেই বিশেষ একটা পার্টিতে যেতে পছন্দ করি না। কাজের পর পরিবারের সঙ্গে আমি যে সময়টা কাটাই তা অসাধারণ।'
আরও পড়ুন - Debleena Dutta Exclusive: একজন নারী হিসেবে নারী দিবস পালন নিয়ে বলিষ্ঠ মত দেবলীনা দত্তের
আজ মেয়েরা নিঃসন্দেহে নিজেদের অনেক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। আর কীভাবে নিজেদের উন্নতি করলে, তাঁরা আরও উন্নত হবেন বলে মনে করেন অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়? তিনি বলেন, 'আমি এই লিঙ্গ ভেদাভেদেই বিশ্বাস করি না। আমার মনে হয় এই যে আজও নারী দিবস বলে কিছু পালন করা হচ্ছে সারা বিশ্বজুড়ে এটাই বড় লজ্জার। আজকের দিনে যদি পুরুষ-নারী ভেদাভেদ ঘুচিয়ে সমান অধিকারের লড়াই হয়, তাহলে সবার আগে মেয়েদের এই দিন উদযাপন করা বন্ধ হওয়া দরকার। যেমন পুরুষ দিবস বলে কিছু পালন করা উচিত বলে আমি মনে করি না। কীসের পুরুষ? কীসের নারী? সকলেই তো মানুষ। কেন আজও মেয়েদের জন্য বাসে-ট্রামে সিট সংরক্ষণ করা থাকবে? কেন আজও সংসদে নারীদের আসন সংরক্ষণ নিয়ে তোলপাড় হবে? মেয়েরা আজ নিজের যোগ্যতায় নিজেদের এই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। তাহলে যোগ্যতার সঙ্গে যদি আমি আমার সমান অধিকার পেতে পারি, তাহলে কীসের নারী-পুরুষ লিঙ্গ ভেদাভেদ? আমি তো বহু সময় দেখি আজও বাসে যখন মেয়েদের জন্য সংরক্ষণ করা সিট থাকে। সেখানে তাঁরা বসেন। এবং কোনও বৃদ্ধ এবং অসুস্থ পুরুষকেও অনেক মেয়েরাই নিজের জায়গা ছেড়ে দেন না। আমি যদি পুরুষের সমান অধিকার পাওয়ার জন্য লড়াই করি, তাহলে কেন আমি মেয়ে হিসেবে এই সুযোগ সুবিধাগুলো নেব! যোগ্যতায় সমান অধিকার পান মেয়েরা, যেটা তাঁরা ইতিমধ্যেই বহুক্ষেত্রে করে দেখিয়েছেন। সহানুভূতির চোখে কেন তাঁদের দেখা হবে? কেনই বা এই 'লেডিজ সিট'-এর সুবিধা তাঁরা নেবেন? তাঁদের নিজেদের এগুলোতে না বলা উচিত। আসলে তো নারী-পুরুষের আগে আমরা সকলেই মানুষ। এটা মনে রাখতে হবে আমাদের সকলের।'