কলকাতা: লন্ডনবাসী (London) চার প্রবাসী বাঙালির গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছেন পরিচালক অতনু ঘোষ (Atanu Ghosh)। ছবির নাম 'আরো এক পৃথিবী' (Aaro Ek Prithibi)। ৩ ফেব্রুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ছবি। তার আগে এবিপি লাইভের সঙ্গে ছবি নিয়ে আড্ডা পরিচালকের।


প্রশ্ন: গল্পের প্রেক্ষাপট হিসেবে লন্ডন বেছে নেওয়ার কোনও বিশেষ কারণ?
অতনু ঘোষ: ভারতের বাইরে দূর বিদেশের কোনও বড় শহর এই গল্পের মূল প্রেক্ষিত। কারণ ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র, প্রতীক্ষার ক্রাইসিস ও অসহায়তার কারণই হল সে নিজের দেশ থেকে অনেকটা দূরে পুরোপুরি অচেনা, অজানা পারিপার্শ্বিকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে আটকে পড়েছে। তাই লন্ডনকে বেছে নেওয়া।  
 
প্রশ্ন: এই গল্পটা কীভাবে মাথায় এল?
অতনু: তামসেন কোর্টনের লেখা ‘ফোর ফিট আন্ডার’ বইয়ে লন্ডনের ৩০ জন গৃহহীন মানুষের বিচিত্র জীবনের হদিশ মেলে। স্বচক্ষে দেখাও পেলাম লন্ডনের সোহো কিংবা ক্যামডেন চত্বরে। কেউ নীরব, শব্দহীন, কেউ বা নিরন্তর কথা বলে যাচ্ছেন নিজের মনে। কারও সম্বল একটা ছেঁড়া কম্বল আর ‘প্লিজ হেল্প মি’ প্ল্যাকার্ড, আবার কেউ দিব্যি রাস্তায় বসে গান গেয়ে, বাজনা বাজিয়ে রোজগার করছেন। কিন্তু ‘আরো এক পৃথিবী’ গৃহহীন মানুষের গল্প নয়। বরং বলা যায়, এমন কজন মানুষের গল্প, যারা কিনারায় বাস করছে। 'লিভিং অন দি এজ' যাকে বলে। যে কোনওদিন ঘরছাড়া হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হতে পারে তাদের। ‘আরো এক পৃথিবী’তে চারটি মুখ্য চরিত্র। প্রতীক্ষার (তাসনিয়া  ফারিণ) বয়স ২৭। বিয়ের তিনমাস পর সে লন্ডনে এসেছে। এগারো বছর বয়স থেকে সে একটা স্বপ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। অতি সামান্য চাওয়া। একটা ঘর। যেখানে প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ মিলবে। কিন্তু শিকড়হীনতার এই যুগে ঘরের স্বপ্ন ধূসর, অধরা। এধার ওধার ঠোক্কর খেয়ে প্রতীক্ষা এতদূর এসেছে। বলতে গেলে এটাই স্বপ্নপূরণের শেষ ধাপ, 'লাস্ট ল্যাপ টু ড্রিম কাম ট্রু'। দ্বিতীয় চরিত্র শ্রীকান্ত (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) বহু বছর ধরে লন্ডনের বাসিন্দা। একটা পার্কে সে বেহালা বাজায়। আয়েশা (অনিন্দিতা বসু) স্টুডেন্ট কাউন্সেলার। অরিত্র (সাহেব ভট্টাচার্য) কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু এগুলো এদের খোলা চোখের পরিচয়। আড়ালে লুকিয়ে বিস্তর আলো-আঁধারি, আকাঙ্খা, গোপন চাওয়া-পাওয়া। 


প্রশ্ন: দর্শক এই ছবি থেকে নতুন কী আশা করতে পারে?
অতনু: বিদেশে নানান বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন বহু মানুষ। কেউ মুখ বুজে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যান। কেউ দুঃখে, অভিমানে টেমসের জলে পাসপোর্ট ভাসিয়ে দেন। এমন গল্পও শুনেছি। রাতের অন্ধকারে প্রবল ঝুঁকি নিয়ে কেউ এক দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে পালানোর চেষ্টা করেন, কারও ঠিকানা হয় খোলা রাস্তা। এমনই নানান অবিশ্বাস্য, অথচ সত্য ঘটনার হদিশ মিলবে এই ছবির গল্পে। বিদেশের মাটিতে কত আলাদা, অন্য ধরনের ক্রাইসিস, সেটা আশা করি দর্শক অনুভব করতে পারবেন। তবে শুধুই বিপদের ঝুঁকি, আতঙ্ক, অসহায়তার গল্প নয়, এতে আছে স্বপ্ন ঘিরে বাঁচার অদম্য চেষ্টা, মায়া, দরদ, সহমর্মিতার গল্পও। কিন্তু এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও ছবির মূল চারটি চরিত্র, কেউ হাল ছাড়েনি, মুষড়ে পড়েনি। আয়েশা এখনও সব কিছু ভুলে শুক্রবার রাতে নাচতে ভলোবাসে। অরিত্র প্রতীক্ষার হাত ধরে বলতে পারে, ‘তুমি আমার জীবনে এসে আলো জ্বেলে দিলে’। শ্রীকান্ত আজও হেমিংওয়ের কথায় বিশ্বাসী – ‘ম্যান ক্যান বি ডেস্ট্রয়েড, বাট নেভার ডিফিটেড’। প্রতীক্ষাও হার মানতে নারাজ। শেষ না দেখে ছাড়বে না! ওরা কেউ জীবন ছেড়ে পালায়নি। বরং আরও আঁকড়ে ধরেছে। তাই ওদের লড়াইয়ের গল্প বলতে আগ্রহী হলাম, অনুপ্রাণিত হলাম।


আরও পড়ুন: Sonu Nigam and Ishaa Saha: প্রথম গাওয়া গানের প্রশংসা করেছেন সোনু নিগম, উচ্ছ্বসিত ইশা
 
প্রশ্ন: ছবির চরিত্রায়ণ মানে কোন চরিত্রে কে অভিনয় করবেন, সেটার কী মাথায় রেখে স্থির করা হয়?
অতনু: দুই ভাবেই হয়। কখনও লেখার আগেই কোন চরিত্রে কে অভিনয় করবেন ঠিক করা থাকে। আবার কখনও চিত্রনাট্য লেখার পর শিল্পী নির্বাচন করি। এই ছবির ক্ষেত্রে লেখার পরে করেছি।  
 
প্রশ্ন. ছবির মুক্তির তারিখ বদলানো হল কেন?
অতনু: ডিসেম্বরে অনেক বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি ছবি মুক্তি পাচ্ছিল। আর নন্দন, নজরুল তীর্থ ও আরও কয়েকটি হল চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই মুক্তির দিন বদল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।