কলকাতা: দুই প্রজন্ম। তাঁদের থিয়েটারকে তুলে ধরার ধারাও আলাদা। তবে যখন একেবারে শুরুর দিকে নাটকের অনুশীলন শুরু করেছেন তিনি, তখন না জেনেই অনুশীলন করতেন থিয়েটার জগতের কিংবদন্তিকে। বাদল সরকারকে। বয়স আর অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃতীয় থিয়েটারকে যখন বুঝেছেন, অনুভব করেছেন বাদল সরকারের থিয়েটারকে দেখার আঙ্গিককে। বাদল সরকারের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে নিজের অনুভূতির কথা বললেন দেবশঙ্কর হালদার (Devshankar Haldar)।
অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন নান্দীকারের হাত ধরে। দেবশঙ্কর বলছেন, 'শ্যামবাজার স্ট্রিটের একটি ঘরে আমরা নান্দীকারের অনুশীলন করতাম। যদি কোনও দৃশ্যে অনেক চরিত্র থাকত, আমরা বেরিয়ে আসতাম সামনেই প্রশস্ত ফুটপাতে। সেখানে অনেক সময় চলত জোরকদমে নাটকের অনুশীলন, অনেক নাটক তৈরীও হয়েছে ওখানে। অনুশীলনের সময় অনেক লোক জড়ো হতেন ফুটপাথে। আমরা অনুশীলন করলেও, তাঁদের কাছে সেটা তো নাটকই। দাঁড়িয়ে সবাই ভিড় করে দেখতেন। বাদল সরকার থার্ড থিয়েটারে তো এই ধারার কথাই বলেছিলেন। মঞ্চে নয়, নাটককে সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। অভিনেতা ও দর্শকের দূরত্ব যেন ঘুচিয়ে ফেলা যায়। না জেনেই সেই থিয়েটার অনুশীলনের সময় অনুসরণ করতাম বাদল সরকারের ভাবধারাকে।'
নিজে কখনও তৃতীয় ধারার থিয়েটার অনুশীলন না করলেও, এই ধারা চিরকাল টেনেছে দেবশঙ্করকে। অভিনেতা বলছেন, 'এখনও যদি রাস্তায় কেউ অন্য ধারা বা থার্ড থিয়েটারের পদ্ধতিতে নাটক করে, আমি অবাক হয়ে দেখি। তবে আমি কখনও ওঁর ভাবধারা অনুশীলন করতে মরিয়া হইনি। বাদল সরকার বলতেন, থার্ড থিয়েটার একটা দৃষ্টিভঙ্গি, একটা দর্শন, একটা ভাবনা। যখন আমরা ফুটপাতে অনুশীলন করতাম, তখন না জেনেই যেন ছুঁয়ে ফেলতাম ওঁর দর্শনকে। বাদল সরকারের কথায়, তৃতীয় থিয়েটার অর্থের ওপর নির্ভর থাকবে না। তা হবে নমনীয় ও বহনীয়। শিল্পীদের দারিদ্র স্বীকার করতে হতে পারে, কিন্তু শিল্পগত দিক থেকে এই থিয়েটার দরিদ্র হবে না। তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্য়বহার করা যাবে। বাদল সরকার যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের লেখনী বদলেছেন, নাটকের ধারা বদলেছেন, তেমনই একই সময়ে দাঁড়িয়ে একাধিক ধারার নাটক লিখেছেন।'
কেবল নাটক নয়, দেবশঙ্করের চোখে বাদল সরকার এক রহস্যময় ব্যক্তিত্বও। অভিনেতা বলছেন, 'একসময় উনি মঞ্চের জন্যই নাটক লিখতেন। সেখানে সাফল্য পেয়েছেন, নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তারপরে থার্ড থিয়েটার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছেন। এরপরে, বৃদ্ধ বয়সে ফের তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন। প্রত্যেক মুহূর্তে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতেন তিনি। ওঁর রহস্যের জাল ছিঁড়ে বেরনো যে কোনও অভিনেতার পক্ষে এক জীবনে অসম্ভব।'