কলকাতা: কথায় বলে, শেখার কোনও বয়স হয় না। কিন্তু সেই কথাকে এক্কেবারে বাস্তব জীবনে যাপন করা নেহাত সোজা নয়। কেবলমাত্র সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকে তিনি বৃদ্ধ বয়সে ফিরে গিয়েছিলেন ক্লাসরুমে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনও করেছিলেন তুলনামূলক সাহিত্যে। বাংলার থার্ড থিয়েটার বা তৃতীয় প্রজন্মের নাটকের জন্মদাতা বলা হয় যাঁকে, তিনি সুধীন্দ্রনাথ সরকার। গোটা বিশ্ব যাঁকে চেনে বাদল সরকারের নামে, আজ তাঁর জন্মদিন।
১৯২৫ সালের ১৫ জুলাই উত্তর কলকাতায় জন্ম হয়েছিল এই বিখ্যাত নাট্যকারের। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। যাঁর কলমের ধার তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল গোটা নাট্যজগতে, যুগান্তকারী সব পদ্ধতি, ভাবনা ভাবতে বাধ্য করেছিল নাট্যব্যক্তিত্বদের, একটা সময় তিনি নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিতে চেয়েছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংকে!। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বাদল সরকারের অন্যতম সহপাঠী ছিলেন সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পরে, দেশে ও বিদেশে পেশার জন্যই ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল বাদল সরকারকে। আর সেইসময়ে, কার্যত ছাই চাপাই পড়েছিল তাঁর লেখনিশক্তির কথা।
বাদল সরকার বিশ্বাস করতেন, নাটক হবে মানুষের জীবনকে ছুঁয়ে, জীবন নিয়ে। মঞ্চের বাইরে নাটককে দর্শকদের মধ্য়ে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রথম ভাবনা ছিল তাঁরই। ৭০-এর দশকে, নকশাল আন্দোলনের সময়ে প্রথম প্রতিষ্ঠান বিরোধী নাটক লেখা বেশ পরিচিতি এনে দিয়েছিল বাদল সরকারকে। কালক্রমে 'শতাব্দী' বলে নিজের নাট্যগোষ্ঠী গঠন করেন তিনি। প্রথম জীবনে শৌখিন থিয়েটারে অভিনয় করতেন তিনি। পরবর্তীকালে এই 'শতাব্দী' গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বাদল সরকার কলকাতার কার্জন পার্কে নিয়মিত থার্ড থিয়েটারে অভিনয় করতেন। থার্ড থিয়েটার ও তার ভাবনাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য 'গ্রাম পরিকল্পনা' বলে আরও একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাদল সরকার।
তাঁর লেখা যে নাটকটি নিয়ে সবচেয়ে চর্চা হয়েছিল, সেটি হল 'এবং ইন্দ্রজিৎ'। এছাড়া 'পাগলা ঘোড়া', 'বাকি ইতিহাস', 'প্রলাপ', 'শেষ নাই', 'বাসি খাবার'-এর মতো নাটকের শ্রষ্ঠা তিনি। তাঁর লেখা প্রথম নাটক ছিল 'সলিউশন এক্স'। যদিও এটি একটি মৌলিক নাটক ছিল না। ৭২ বছর বয়সেও মঞ্চে অভিনয় করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিতেন বাদল সরকার। 'ভোমা' নাটকে তাঁর অভিনয় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
১৯৬৮ সালে সঙ্গীত নাটক আকাডেমি এবং ১৯৭২ সালে পদ্মশ্রী খেতাব পান বাদল সরকার। ১৯৯৭ সালে সঙ্গীত নাট্য আকাদেমি ফেলোশীপ থেকে ভারত সরকারের সর্ব্বোচ্চ পুরষ্কার 'রত্ন সদস্য' পদকে সন্মানিত করা হয় তাঁকে। তাঁর সব নাটক ও বাদল সরকারের জীবন নিয়ে দুটি তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছিল। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দুনিয়ার রঙ্গমঞ্চকে চিরকালের জন্য ছেড়ে চলে যান থার্ড থিয়েটারের জনক।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন