মুম্বই : সময়টা নয়ের দশকের মাঝামাঝি। মুম্বইয়ে মাইকেল জ্যাকসনের কনসার্ট। ভারতীয় সঙ্গীত জগত থেকে সেখানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন একজনই। তাঁর নাম বাপি লাহিড়ি (Bappi Lahiri)। তিনি পাড়ি দিলেন অন্য সুরলোকে। চোখের জলে হল শেষ বিদায়। রয়ে গেল তাঁর সুরের অনুরণন। বাপি লাহিড়ির জনপ্রিয়তা শুধু  ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তাঁর নাম উঠেছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। হলিউডের ছবিতে বাপ্পি লাহিড়ির গান ব্যবহার হয়েছে। সে সব যেন অনেকটা গল্পের মতো । 



১ বছরে ৩৩টা ছবির জন্য ১৮৬টা গান রেকর্ড! শুনে মনে হতেই পারে, এও কি সম্ভব! কিন্তু, এই অসাধ্য সাধন করেছিলেন এই বাংলার এক সোনার সন্তান। অলকেশ লাহিড়ি। সবাই যাঁকে চেনে বাপি লাহিড়ি নামে। মন মাতানো সব সুরের জন্য চিরকাল আমাদের হৃদয়ের খাতায় তাঁর নাম লেখা থাকবে! 


 ১ বছরে সর্বাধিক গানের রেকর্ডের জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ( guinness world record) বাপি লাহিড়ির নাম উঠেছিল। ১৯৮৬ সালে তিনি ৩৩টা ছবির জন্য ১৮৬টা গান রেকর্ড করেছিলেন। বাপি লাহিড়ি  একমাত্র ভারতীয় সুরকার, যাঁকে বিবিসি লন্ডনের হয়ে লাইভ পারফরম্যান্সের অনুরোধ জানান জোনাথন রস। ‘জাস্টিস ফর উইডোজ’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে তাঁকে ‘হাউজ অব লর্ডস’-এর সম্মান দেওয়া হয়। ২০১১ সালে আমেরিকান আইডল-জীয় শন বারোজের সঙ্গে তিনি ‘ওয়াকিং অন লাভ স্ট্রিট’ বলে একটি অ্যালবাম করেন। ‘ইউ ডোন্ট মেস উইথ দ্য জোহানস’ বলে হলিউডের ছবিতে বাপি লাহিড়ির বিখ্যাত গান ‘জিমি জিমি’ ব্যবহার করা হয়।

বাপি লাহিড়ী ছিলেন যথার্থই সোনার ছেলে! গলায় সোনার একাধিক ভারী চেন।  তাতে ঝুলত বড়সড় লকেট। হাতের সব আঙুলে সোনা-রুপোর আংটি। তাতে বসানো বহুমূল্য পাথর। কব্জিতে ব্লেসলেট। বাদ পড়েনি কানের লতিও। তাতে হরেক সাইজের দুল পরতেন। এবং চোখে থাকত অবশ্যই একটি ওজনদার রোদচশমা। সোনার গয়নার প্রতি তাঁর ঝোঁকের কারণও একটি সাক্ষাৎকালে জানিয়েছিলেন বাপি লাহিড়ী। তিনি বলেছিলেন, এলভিস প্রেসলির থেকেই তিনি এই ব্যাপারে উৎসাহ পেয়েছিলেন। 

বাপি লাহিড়ি বরাবরই এলভিস প্রেসলির ভক্ত ছিলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, সবসময় ভাবতাম, কখনও সফল হলে আলাদাভাবে নিজের ইমেজ তৈরি করব। ভগবানের আশীর্বাদে সোনা দিয়ে আমি সেটা করতে পেরেছি। অনেকে ভাবেন, আমি লোক দেখাতে সোনার গয়না পরি। কিন্তু তা সত্যি নয়, সোনার আমার জন্য খুব পয়া। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার পর হলফনামায় বাপি লাহিড়ী জানিয়েছিলেন, 


তাঁর কাছে ৭৫৪ গ্রাম সোনার গয়না রয়েছে। সঙ্গে ৪.৬২ কিলোগ্রাম রুপোর গয়না। এছাড়াও ৪ লক্ষ টাকার একটি হিরের আংটিও রয়েছে। মঙ্গলবার সুরের দুনিয়া হারাল তার সোনার ছেলেকে।