কলকাতা: "শুটিং হচ্ছিল মধ্য কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোড সিমেট্রিতে। স্ক্রিপ্টে ছিল বরুণবাবু, তাঁর নাতিকে মধুসূদন দত্তের সমাধি দেখাতে এসে এপিটাফে লেখা লাইনগুলি পড়ে শোনাচ্ছেন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে সেখান থেকে পড়া যাচ্ছিল না। একজন সহকারী গুগল থেকে লাইনগুলি বার করে ওঁকে দিলেন। সৌমিত্রদা বললেন, দরকার পড়বে না। তারপরই অনায়াসে লাইনগুলি বলতে থাকলেন। এই ছিল তখনকার বাঙালি। সৌমিত্রদা তো শুধুমাত্র অভিনেতা বা নায়ক ছিলেন না, এর সঙ্গে সঙ্গে একজন কবি, লেখক, একটি সাংষ্কৃতিক পত্রিকার 'এক্ষণ'-এর সম্পাদক, রাজনৈতিক বোধ এবং বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াকিবহাল এক মানুষ। ওঁর মতো প্রাজ্ঞ, জ্ঞানী মানুষ বাংলা চলচ্চিত্র জগতে বিরলতম।" 'বরুণবাবুর বন্ধু'র শ‍্যুটিয়ের কথা বলছিলেন পরিচালক অনীক দত্ত। ২০১৯ এর অন‍্যতম প্রশংসিত ছবি।
সৌমিত্রবাবুর লড়াইটা শুধু মৃত্যুর আগে রোগের সঙ্গে নয়, নানা প্রতিকূলতা এতবছর তার জীবন জুড়ে ছিল। কতজন খোঁজ রেখেছেন তখন? " খানিকটা অভিমানই ঝরে পড়ল অনীক দত্তের কথায়।
পরিচালক বললেন, "আজ আমাদেরই লজ্জা পাওয়া উচিত ওঁর মতো শিল্পী জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য শেষ বয়সে এসেও অপছন্দ হওয়া অনেক কাজ করে গিয়েছেন। ওঁ‌র বাছবিচার ছাড়া কাজ করা নিয়ে যাঁরা কথা বলেন, তাঁদের বলছি, আগে মানুষটার দায়িত্ববোধ, প্রতিবন্ধকতাটা জানুন।"


"ওঁর মতো বিরাট অভিনেতা, যাঁর কাছে আমি কিছুই নই, শট হলেই আগে এসে জিগ্যেস করতেন, ঠিক আছে তো? কোনও শট নিজেই বলতেন, এভাবে করলে হত না? " বলতে বলতে গলা ভারী অনীক দত্তের।
"বরুণবাবুর বন্ধু'র প্রথম পাবলিক স্ক্রিনিংয়ের পর এসে বলেছিলেন, 'খুব খারাপ করিনি বলো?' এতটাই মার্জিত মানুষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরিচালকের কথায়, ছবি পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি 'কাট' বলতে ভুলে যেতেন।

স্মৃতি ঘাঁটতে ঘাঁটতে অনীক বললেন, " আজ অনেক কথাই মনে আসছে। যা হয়ত একান্তই আমাদের ব‍্যক্তিগত বা প্রকাশের জন্য নয়। একটাই কথা বলব, বাঙালি আবার শ্লাঘা করার মতো এক মানুষকে হারাল।"